বিশ্ব

ইন্দোনেশিয়ার পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত, সর্বোচ্চ সতর্কতা

Advertisement

ইন্দোনেশিয়ার পূর্বাঞ্চলের ফ্লোরেস দ্বীপে ভয়াবহ আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত ঘটেছে। ধারাবাহিক অগ্ন্যুৎপাতের কারণে আকাশজুড়ে কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত ছাইভস্ম ছড়িয়ে পড়েছে। এতে স্থানীয় বিমানবন্দরগুলোর কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়েছে এবং সরকার সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করেছে।

অগ্ন্যুৎপাতের বিস্তারিত বিবরণ

ভূতাত্ত্বিক সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ফ্লোরেস দ্বীপের ১ হাজার ৫৮৪ মিটার উঁচু দ্বি-শিখর আগ্নেয়গিরি মাউন্ট লেওটোবি লাকি-লাকি শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় অগ্ন্যুৎপাত শুরু করে। রাত ১০টা ৪৬ মিনিটে সবচেয়ে বড় বিস্ফোরণ ঘটে, যার ফলে লাভা ও ছাই প্রায় ৬ কিলোমিটার উঁচুতে উঠে যায়।

শনিবার সকালেও অগ্ন্যুৎপাত অব্যাহত ছিল। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, একাধিক বিস্ফোরণে আকাশে ২.৫ কিলোমিটার পর্যন্ত ছাইয়ের স্তম্ভ তৈরি হয়েছে। এতে ফ্লোরেস দ্বীপের আকাশ অন্ধকার হয়ে পড়ে এবং আশপাশের এলাকায় তীব্র ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে।

সতর্কতা ও সরকারি ঘোষণা

ইন্দোনেশিয়ার ভূতাত্ত্বিক সংস্থা আগ্নেয়গিরির চার ধাপের সতর্কতার মধ্যে সর্বোচ্চ স্তরে উন্নীত করেছে পরিস্থিতিকে। সংস্থার প্রধান মুহাম্মদ ওয়াফিদ জানিয়েছেন, আগ্নেয়গিরির গহ্বর থেকে কমপক্ষে ছয় কিলোমিটার দূরে থাকতে হবে স্থানীয়দের।

তিনি আরও সতর্ক করেছেন, আগ্নেয়গিরির ছাই বিমান চলাচলে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটাতে পারে। পাশাপাশি লাহার বন্যার ঝুঁকি রয়েছে। ভারী বৃষ্টিপাত হলে কাদা ও আগ্নেয়গিরির ধ্বংসাবশেষ মিশে তীব্র স্রোতে নিচু এলাকায় বয়ে যেতে পারে। নদী সংলগ্ন এলাকাবাসীদের জন্য ঝুঁকি আরও বেশি বলে জানান তিনি।

বিমানবন্দর ও স্থানীয় জীবনে প্রভাব

অগ্ন্যুৎপাতের কারণে ফ্লোরেস দ্বীপের মাউমেরে শহরের বিমানবন্দরসহ একাধিক অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর কার্যক্রম স্থগিত করেছে। এতে পর্যটক ও স্থানীয় যাত্রীদের ভোগান্তি বেড়েছে।

স্থানীয়দের অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে যেতে শুরু করেছেন। কৃষিজমি ও মাছ ধরার এলাকায়ও প্রভাব পড়েছে, কারণ ছাইভস্ম জমিতে পড়ে ফসলের ক্ষতি করছে এবং নদী ও সমুদ্রে ছড়িয়ে পড়ায় সামুদ্রিক প্রাণীর ওপরও বিরূপ প্রভাব ফেলছে।

ইন্দোনেশিয়ার আগ্নেয়গিরি ইতিহাস ও পূর্ববর্তী অভিজ্ঞতা

ইন্দোনেশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরের “রিং অব ফায়ার” অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় দেশটিতে প্রায় ১৩০টির বেশি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি রয়েছে। ফলে প্রায়ই সেখানে ছোট-বড় অগ্ন্যুৎপাত ঘটে।

২০২১ সালে সেমেরু আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতে ডজনখানেক মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। ২০১৮ সালে সুনদান দ্বীপপুঞ্জে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের কারণে সৃষ্ট সুনামিতে শতাধিক মানুষ প্রাণ হারায়। বর্তমান ঘটনাটি পূর্বাঞ্চলে দীর্ঘ সময় পর সবচেয়ে ভয়াবহ অগ্ন্যুৎপাত হিসেবে দেখা দিয়েছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও মানবিক উদ্বেগ

জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। জরুরি সহায়তার জন্য প্রস্তুত থাকার কথা জানিয়েছে রেড ক্রস। ফ্লোরেস দ্বীপে বসবাসরত কয়েক হাজার মানুষকে প্রয়োজনে দ্রুত সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে স্থানীয় প্রশাসন।

পর্যটন নির্ভর অর্থনীতি হওয়ায় আগ্নেয়গিরির এই অগ্ন্যুৎপাত ইন্দোনেশিয়ার পর্যটন খাতে বড় ধরনের ধাক্কা দিতে পারে। আন্তর্জাতিক পর্যটকরা ইতোমধ্যে টিকিট বাতিল করছেন।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

ভূতাত্ত্বিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাউন্ট লেওটোবির অগ্ন্যুৎপাতের ধরণ তুলনামূলক তীব্র এবং এটি কয়েকদিন ধরে চলতে পারে। তারা মনে করছেন, আগ্নেয়গিরির ছাই দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে। বিশেষত শিশু, বৃদ্ধ এবং শ্বাসকষ্টজনিত রোগীদের জন্য এটি মারাত্মক হতে পারে।

একজন বিশেষজ্ঞের মতে, “যদি বাতাসের দিক পাল্টে যায়, তবে ছাইভস্ম কয়েকশ কিলোমিটার দূরেও ছড়িয়ে পড়তে পারে, যা কেবল ফ্লোরেস নয়, পার্শ্ববর্তী দ্বীপগুলোকেও প্রভাবিত করবে।”

ইন্দোনেশিয়ার ফ্লোরেস দ্বীপে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত আবারও মনে করিয়ে দিল প্রকৃতির সামনে মানুষ কতটা অসহায়। সরকার সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করেছে, তবে পরিস্থিতি কোনদিকে মোড় নেবে তা এখনো পরিষ্কার নয়। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই বোঝা যাবে অগ্ন্যুৎপাত থামবে নাকি আরও তীব্র হবে।

এম আর এম – ১৪২২,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button