বাংলাদেশ

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবেন চৌধুরী মামুন | গণঅভ্যুত্থান মামলা ২০২৪

Advertisement

বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম বিতর্কিত জুলাই গণঅভ্যুত্থান মামলায় নতুন এক মোড় এসেছে। মামলার প্রধান সাক্ষী এবং সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন আদালতে স্বীকার করেছেন, তিনি মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত। পাশাপাশি তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়ার সম্মতি জানিয়েছেন এবং আদালতকে তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আবেদন করেছেন।

মামলার পটভূমি ও আইনি প্রক্রিয়া

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের প্যানেল গত বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) মামলার অভিযোগ গঠনের আদেশ দেয়। এই মামলায়, জুলাই ও অগাস্ট ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান এবং এর পরবর্তী সময়ে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মোট পাঁচটি অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। অভিযোগের মধ্যে রয়েছে গণহত্যা, আটক-নির্যাতন, জোরপূর্বক গুম, মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডসহ বিভিন্ন গুরুতর অপরাধ।

আদালতে মামুন তার দায় স্বীকার করে ‘রাজসাক্ষী’ হিসেবে স্বীকৃতি দাবি করেন, অর্থাৎ তিনি আদালতে সত্য উদঘাটনে সহযোগিতা করবেন এবং অপরাধে জড়িত অন্যান্য আসামিদের মুখোশ খুলে দেবেন।

নিরাপত্তা ও আইনি প্রক্রিয়ার গুরুত্ব

মামুনের আইনজীবী জায়েদ বিন আমজাদ আদালতে তার নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য আবেদন করেন। মামুনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি কারণ তার সাক্ষ্য নেওয়ার মাধ্যমে উচ্চপদস্থ রাজনৈতিক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তথ্য প্রকাশ পাবে। চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, “যেহেতু মামুন রাজসাক্ষী হতে চেয়েছেন, তাই তার নিরাপত্তায় হুমকি আসতে পারে। এ কারণে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।”

মামলার অন্যান্য আসামি ও চলমান অবস্থা

এখন পর্যন্ত মামলার আর দুই আসামি — সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল পলাতক রয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে আদালত আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করেছে এবং তাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য প্রক্রিয়া চলছে।

আগামী ৩ আগস্ট মামলার সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করা হবে, এবং ৪ আগস্ট থেকে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হবে। এই পর্যায়ে মামুনের সাক্ষ্য মামলার গতিপ্রকৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।

মামলার আইনি দিক ও সম্ভাব্য পরিণতি

চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, “মামুন রাজসাক্ষী হওয়ায় তার দণ্ড মওকুফ হবে কি না, সেটা আদালতের এখতিয়ার। আদালত তার সাক্ষ্যের গুরুত্ব ও পরিস্থিতি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে।” রাজসাক্ষী হওয়া সাধারণত দণ্ড মওকুফ বা কম হওয়ার সুযোগ দেয়, তবে এটি নির্ভর করে মামলার গুরুত্ব এবং সাক্ষীর ভূমিকার ওপর।

আন্তর্জাতিক ও জাতীয় প্রেক্ষাপট

জুলাই-অগাস্ট ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান এবং পরবর্তী সময়ে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ নিয়ে দেশজুড়ে তীব্র রাজনৈতিক ও সামাজিক আলোচনার সৃষ্টি হয়। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোও এই ঘটনার উপর নজর রাখছে। বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হওয়া দেশের জন্য একটি বড় পদক্ষেপ বলে বিবেচিত হচ্ছে।

এমন পরিস্থিতিতে সাবেক আইজিপি মামুনের রাজসাক্ষী হওয়া মামলা এবং আদালতে তার স্বীকারোক্তি বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও ন্যায়বিচারের সম্ভাবনাকে তুলে ধরছে।

সংক্ষিপ্ত বর্ণনায় মামলার মূল অভিযোগসমূহ

  • গণহত্যা: নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠী বা রাজনৈতিক বিরোধীদের উপর পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।
  • আটক ও নির্যাতন: বিচারবহির্ভূত আটক, কারাবন্দি অবস্থায় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন।
  • জোরপূর্বক গুম: সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের অবৈধ ভাবে আটক রেখে তাদের গায়েব করা।
  • মানবতাবিরোধী অপরাধ: মানুষের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করে করা অপরাধ।

ভবিষ্যতের করণীয়

আদালত মামলার সকল সাক্ষ্যগ্রহণ ও প্রমাণাদি বিশ্লেষণ করে আগামী মাসে রায় ঘোষণার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। সাবেক আইজিপি মামুনের সাক্ষ্য বিচার প্রক্রিয়ায় নতুন আলো এনে দিতে পারে, যা দীর্ঘদিন ধরে আলোচনার কেন্দ্রে থাকা এই মামলার সঠিক বিচার নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।

এর পাশাপাশি রাজনৈতিক মহল ও সাধারণ জনগণের মধ্যে মামলার বিষয়ে উত্তেজনা ও প্রত্যাশা বিদ্যমান। নিরাপত্তা ও স্বচ্ছতার মধ্যে এই মামলার সুষ্ঠু সমাধান দেশের বিচার ব্যবস্থার ওপর আস্থা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে।

জুলাই-অগাস্ট ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান মামলায় সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের সাক্ষ্য প্রদানের সিদ্ধান্ত একদিকে মামলার একটি নতুন দিক উন্মোচন করেছে, অন্যদিকে এটি দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। তার নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং সাক্ষ্যগ্রহণের মাধ্যমে বিচার প্রক্রিয়া আরো শক্তিশালী ও কার্যকর হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button