প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের ‘লংমার্চ টু ঢাকা’, সরকারের কমিটি বাতিলের দাবি

বাংলাদেশের প্রকৌশল শিক্ষার্থীরা সরকারের গঠন করা কমিটিকে অনুপযুক্ত ঘোষণা করেছেন। তাদের দাবি, কমিটি পরিবর্তন করে নতুনভাবে গঠন করা হোক। একই সঙ্গে তারা শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে অবস্থান ও ‘লংমার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি শুরু করেছেন।
আজ বুধবার (২৭ আগস্ট) দুপুরে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। প্রকৌশলী অধিকার আন্দোলনের সভাপতি মো. ওয়ালী উল্লাহ বলেন, “সরকার যেই কমিটি করেছে, সেটি শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণের ক্ষেত্রে কার্যকর নয়। এতে ইনস্টিটিউশন অফ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশের (আইডিইবি) প্রেসিডেন্টকেও রাখা হয়েছে, যা আমাদের জন্য গ্রহণযোগ্য নয়।”
শিক্ষার্থীদের তিনটি মূল দাবি
ওয়ালী উল্লাহ আজ তিনটি স্পষ্ট দাবি তুলে ধরেন:
- কমিটি পুনর্গঠন: সরকার যে কমিটি গঠন করেছে, তা অনুপযুক্ত। নতুন ও কার্যকরী কমিটি গঠন করতে হবে।
- পুলিশি হস্তক্ষেপের প্রতিবাদ: শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ করা হয়েছে। দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তাদের শিক্ষার্থীদের কাছে মাফ চাইতে হবে।
- উপদেষ্টাদের সরাসরি অংশগ্রহণ: তিন উপদেষ্টা এখনও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দেখা করেননি। শিক্ষার্থীরা তাদের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার সুযোগ চায়।
ওয়ালী উল্লাহ আরও জানান, “এই তিনটি দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের অবস্থান কর্মসূচি চলমান থাকবে।”
পুলিশি হামলায় শিক্ষার্থীদের আহত হওয়া
প্রকৌশলী অধিকার আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সাকিবুল হক লিপু বলেন, “পুলিশের লাঠিচার্জ ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহারের ফলে প্রায় ৫০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এর মধ্যে কিছু শিক্ষার্থী হাসপাতালে ভর্তি। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনেও পুলিশ বেকায়দায় ফেলে দিয়েছে। আমরা চাই, যারা এই হামলার নির্দেশ দিয়েছে, তাদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার ও গ্রেপ্তার করতে হবে।”
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন যে পুলিশ লাঠিচার্জ, সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ার গ্যাস এবং জলকামান ব্যবহার করে তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। তবে আন্দোলন এখনও অব্যাহত রয়েছে।
সরকারের কমিটি ও উদ্দেশ্য
এর আগে, প্রকৌশল পেশায় বিএসসি ডিগ্রিধারী ও ডিপ্লোমাধারী ব্যক্তিদের পেশাগত দাবির যৌক্তিকতা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সরকার একটি কমিটি গঠন করে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ আজ বুধবার কমিটি গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
কমিটির প্রধান হয়েছেন উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। অন্যান্য সদস্যরা হলেন:
- উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান
- উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল আবরার
- উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
- প্রকৌশলী মোহাম্মদ রেজাউল ইসলাম
- প্রকৌশলী মো. কবির হোসেন
- প্রকৌশলী তানভির মঞ্জুর
- জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক
কমিটি এক মাসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন সরকারের কাছে জমা দেবে। তবে শিক্ষার্থীরা জানাচ্ছেন, তারা কমিটি গঠনের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও যৌক্তিক দাবির বাস্তবায়ন চাইছেন।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও ‘লংমার্চ টু ঢাকা’
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে তিন দফা দাবিতে আন্দোলন করছেন। গতকাল বিকেলে তারা শাহবাগ অবরোধ করেন। দাবি পূরণ না হওয়ায় আজ (২৭ আগস্ট) থেকে ‘লংমার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি শুরু করেন।
শিক্ষার্থীরা সকালেই বুয়েট ক্যাম্পাসে জড়ো হন। বুয়েট প্রধান গেটের সামনের শহীদ মিনার এলাকা থেকে মিছিল শুরু হয়। মিছিল নিয়ে তারা শাহবাগ মোড়ে পৌঁছে অবস্থান নেন। বিভিন্ন স্লোগান দিতে দিতে তারা সচিবালয় অভিমুখে রওনা হন।
পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ
শাহবাগ থেকে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়ে পৌঁছালে শিক্ষার্থীদের বাধা দেয় পুলিশ। এ সময় শিক্ষার্থীরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে লাঠিচার্জ, জলকামান, সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করে।
এর ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি হয়। তবু আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তাদের অবস্থান ত্যাগ করেনি এবং হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে অবস্থান অব্যাহত রেখেছেন।
শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ঘোষণা করেছেন, সরকারের কমিটি ও পুলিশের আক্রমণ যদি শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণে যথাযথ পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে তারা আরও বৃহত্তর আন্দোলনের পরিকল্পনা করবে।
মো. ওয়ালী উল্লাহ বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই চালিয়ে যাব। যদি রাষ্ট্র আমাদের দাবি মেনে না নেয়, তবে কঠোর আন্দোলনেরও প্রস্তুতি রয়েছে।”
শিক্ষার্থীরা দাবি করছেন, প্রকৌশল পেশায় ডিপ্লোমা ও বিএসসি ডিগ্রিধারীদের পেশাগত অধিকার নিশ্চিত করা সময়ের দাবি। তারা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে এই সমস্যার সঠিক সমাধান না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা অসুবিধার মধ্যে রয়েছেন।
MAH – 12516 , Signalbd.com