বিশ্ব

দক্ষিণ কোরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ও তাঁর স্ত্রীর কারাগারে

দক্ষিণ কোরিয়ার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এক বিরল ও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে গেল। দেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলের পর এবার তাঁর স্ত্রী কিম কিয়ন হিকেও কারাগারে পাঠানো হলো। দীর্ঘ শুনানি ও তদন্তের পর শেয়ারবাজারে কারসাজি ও ঘুষ গ্রহণসহ একাধিক গুরুতর অভিযোগে তাঁকে আটক রাখার নির্দেশ দিয়েছে সিউলের আদালত।

সাবেক প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলের পতনের কাহিনি

ইউন সুক ইওল দক্ষিণ কোরিয়ার এক-time প্রেসিডেন্ট ছিলেন যিনি গত বছর সামরিক আইন জারি করে দেশের রাজনৈতিক উত্তাপ সৃষ্টি করেছিলেন। তার এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে পার্লামেন্টসহ বিভিন্ন পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিবাদ হয়। দেশব্যাপী বিক্ষোভ-প্রতিবাদে শেষ পর্যন্ত তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। গত জানুয়ারিতে সামরিক আইন জারির ঘটনায় তিনি গ্রেপ্তার হন।

প্রথমবারের মতো কারাগারে গেলেন দম্পতি দুই

দক্ষিণ কোরিয়ার ইতিহাসে এটি প্রথমবার যখন কোনো সাবেক প্রেসিডেন্ট ও তাঁর স্ত্রী উভয়কেই একই সময়ে কারাগারে যেতে হলো। এই ঘটনায় দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোড়ন তৈরি হয়েছে। অনেকেই বলছেন, এটি কোরিয়ার বিচারব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও শক্তির পরিচায়ক।

কারসাজি ও ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ

কিম কিয়ন হির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে শেয়ারবাজারে অবৈধভাবে প্রায় ৮০ কোটি কোরিয়ান ওয়ান (প্রায় ৫ লাখ ৭৭ হাজার ৯৪০ মার্কিন ডলার) লাভ করার। বিএমডব্লিউর ডয়েচ মোটরস নামের একটি পরিবেশকের শেয়ারের মূল্য কৃত্রিমভাবে নিয়ন্ত্রণ করে তিনি এই লেনদেনে যুক্ত ছিলেন।

তাছাড়া, কিম কিয়ন হি ব্যবসায়িক সুবিধার বিনিময়ে বিতর্কিত ইউনিফিকেশন চার্চ থেকে দুটি শ্যানেল ব্যাগ এবং একটি হীরার নেকলেস ঘুষ হিসেবে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এর বাইরে ২০২২ সালের উপনির্বাচন ও গত বছরের সাধারণ নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নে অবৈধ হস্তক্ষেপের অভিযোগও করা হয়েছে।

আদালতের চার ঘণ্টার শুনানি ও আটকাদেশ

মঙ্গলবার সিউলের একটি আদালতে চার ঘণ্টার শুনানির পর সাবেক ফার্স্ট লেডি কিম কিয়ন হি সব অভিযোগ অস্বীকার করলেও আদালত আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, তিনি প্রমাণপত্র নষ্ট করতে পারেন। এজন্য তাঁকে আটক রাখার নির্দেশ দেয়া হয়।

রাজনৈতিক প্রভাব ও বিরোধীদের প্রতিবাদ

ইউন সুক ইওল প্রেসিডেন্ট থাকাকালে বিরোধী দলগুলোর উত্থাপিত তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিলের ওপর ভেটো দিয়েছিলেন। এই বিলগুলোর একটি ছিল কিম কিয়ন হির বিরুদ্ধে বিশেষ তদন্তের প্রস্তাব। যদিও তিনি এই বিলগুলো অবরোধ করেছিলেন, গত নভেম্বর মাসে সামরিক আইন জারির মাত্র এক সপ্তাহ আগে সর্বশেষ ভেটো দেন।

নতুন প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ

চলতি বছরের জুনে প্রেসিডেন্ট লি জে মিউং দায়িত্ব নেওয়ার পর দক্ষিণ কোরিয়ার বিশেষ তদন্ত দল গঠন করেছে। এ তদন্ত দল সাবেক প্রেসিডেন্ট ও তাঁর পরিবারের বিভিন্ন আর্থিক ও রাজনৈতিক দুর্নীতির তদন্তে তৎপর রয়েছে।

দৃষ্টান্তমূলক বিচার ও গণতন্ত্রের শক্তি

দক্ষিণ কোরিয়ার এই ঘটনা বিশ্বকে দেখিয়েছে যে উচ্চ পদস্থ রাজনৈতিক ব্যক্তিদেরও আইনের আওতায় আনা সম্ভব এবং দেশের গণতন্ত্রের স্বার্থে বিচারব্যবস্থা কতটা নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী হতে পারে। এটি অনেক দেশে যারা রাজনৈতিক দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবস্থাপনাকে নিয়ন্ত্রণের বাইরে মনে করে, তাদের জন্যও একটি উদাহরণ হিসেবে কাজ করছে।

সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা

  • সাবেক প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল সামরিক আইন জারি করে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করায় দেশজুড়ে প্রতিবাদ সৃষ্টি হয় এবং তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন।
  • গত জানুয়ারিতে সামরিক আইন জারির কারণে তিনি গ্রেপ্তার হন।
  • এবার তাঁর স্ত্রী কিম কিয়ন হি শেয়ারবাজারে কারসাজি ও ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে গ্রেপ্তার হন।
  • কিমের বিরুদ্ধে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি করে অবৈধভাবে ৮০ কোটি কোরিয়ান ওয়ান উপার্জনের অভিযোগ রয়েছে।
  • আদালত আশঙ্কা করে বলেছেন তিনি প্রমাণ ধ্বংস করতে পারেন, এজন্য আটকাদেশ জারি করা হয়েছে।
  • সাবেক প্রেসিডেন্ট থাকাকালে বিরোধীরা কিমের বিরুদ্ধে তদন্তের প্রস্তাব দেন, কিন্তু ভেটো দিয়ে তা আটকে দেন।
  • নতুন প্রশাসন কঠোর তদন্ত শুরু করেছে, যা দেশের বিচার ব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও গণতন্ত্রের প্রতি আস্থা বাড়িয়েছে।

MAH – 12289 ,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button