ট্রাম্পের নির্দেশে ফেডারেল রিজার্ভের গভর্নর লিসা কুকের অপসারণ

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফেডারেল রিজার্ভের গভর্নর লিসা কুককে পদচ্যুত করার নির্দেশ দিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দাবি, কুকের বিরুদ্ধে বন্ধকী ঋণের নথিতে ভুয়া তথ্য প্রদানের অভিযোগ রয়েছে। এই পদক্ষেপ মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে সরকারের চলমান উত্তেজনার মধ্যে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
ট্রাম্পের সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘোষণা
মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর প্রকাশ করে। খবর অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সোমবার রাতে নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যাল-এ একটি পোস্টে কুককে লেখা চিঠি প্রকাশ করেন। চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেছেন, কুকের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ রয়েছে, তা যথেষ্ট গুরুতর এবং সংবিধান প্রদত্ত ক্ষমতা ব্যবহার করে তিনি তাকে অবিলম্বে অপসারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
বিবিসি জানিয়েছে: কুক বা ফেডারেল রিজার্ভ এই মুহূর্তে এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করেনি।
কেন ট্রাম্প অপসারণের পদক্ষেপ নিলেন?
সংবাদ অনুযায়ী, সাম্প্রতিক কয়েক সপ্তাহ ধরে ট্রাম্প ফেডারেল রিজার্ভের ওপর চাপ বাড়িয়েছেন। বিশেষ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলকে লক্ষ্য করে তিনি বারবার মন্তব্য করেছেন যে, সুদের হার কমানোর ক্ষেত্রে ফেড অনীহা প্রদর্শন করছে। এমনকি তিনি একাধিকবার পাওয়েলকে বরখাস্তের ইঙ্গিতও দিয়েছেন।
কিন্তু লিসা কুককে অপসারণ করা একেবারেই নজিরবিহীন ঘটনা। ফেডারেল রিজার্ভের ১১১ বছরের ইতিহাসে আগে কখনো কোনো বোর্ড সদস্যকে এইভাবে পদচ্যুত করা হয়নি। কুক ছিলেন সাত সদস্যের বোর্ডের একজন এবং এই পদে থাকা প্রথম আফ্রিকান-আমেরিকান নারী।
আইনি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ট্রাম্প প্রশাসনকে আদালতে প্রমাণ করতে হবে যে, অপসারণের যথেষ্ট কারণ ছিল।
কুকের বিরুদ্ধে অভিযোগ
ট্রাম্পের চিঠিতে বলা হয়েছে, কুক মিশিগানের একটি বাড়িকে নিজের প্রধান আবাস হিসেবে দেখিয়ে নথিতে স্বাক্ষর করেছিলেন। মাত্র দুই সপ্তাহ পর জর্জিয়ার আরেকটি সম্পত্তির জন্যও একই ঘোষণা দিয়ে নথি জমা দেন। ট্রাম্প বলেন, “প্রথম প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর দ্বিতীয় নথি স্বাক্ষরের সময় আপনি তা জানতেন না, এটা বিশ্বাস করা কঠিন।”
এই অভিযোগ প্রথমে উত্থাপন করেন ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্র ও হাউজিং ফাইন্যান্স নিয়ন্ত্রক বিল পুলটে। তিনি এটিকে ‘অপরাধমূলক রেফারেল’ হিসেবে উল্লেখ করে অ্যাটর্নি জেনারেল প্যাম বন্ডিকে চিঠি পাঠান এবং ন্যায়বিচার বিভাগকে তদন্তের আহ্বান জানান। তবে, তদন্ত শুরু হয়েছে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
ফেডারেল রিজার্ভের প্রতিক্রিয়া
ফেডারেল রিজার্ভের পক্ষ থেকে এ মুহূর্তে কোন আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। ব্যাংকটির পূর্ব অভিজ্ঞতা দেখায়, এমন পদক্ষেপে দীর্ঘমেয়াদী আর্থিক ও রাজনৈতিক প্রভাব পড়তে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যদি অপসারণ আইনি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়, তবে এটি মার্কিন অর্থনীতি এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতার জন্য একটি বড় পরীক্ষা হবে।
মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা
ফেডারেল রিজার্ভ বোর্ডের ইতিহাসে আগে কখনো কোনো সদস্যকে রাজনৈতিক কারণে সরানো হয়নি। কুক ছিলেন বোর্ডের সাত সদস্যের একজন এবং বিশেষ করে প্রথম আফ্রিকান-আমেরিকান নারী হিসেবে এই পদে ছিলেন।
এই পদক্ষেপের ফলে মার্কিন অর্থনীতিতে বড় ধরনের অস্থিরতা দেখা দিতে পারে বলে অর্থনীতিবিদরা আশঙ্কা করছেন। সুদের হার, ঋণের বাজার, এবং বিনিয়োগের ওপর তা প্রভাব ফেলতে পারে।
ট্রাম্পের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ শুধুই ব্যক্তিগত অভিযোগ নয়। এটি তার অর্থনৈতিক নীতি ও নির্বাচনী কৌশলের অংশও হতে পারে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দাবি, কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার কমাতে যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে না, যা তার অর্থনৈতিক নীতি ব্যাহত করছে।
এর আগে ট্রাম্প একাধিকবার ফেডের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলকে বরখাস্ত করার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। কুককে অপসারণ করা হলে এটি আরও বেশি রাজনৈতিক উত্তেজনা সৃষ্টি করবে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক বাজারেও প্রভাব ফেলতে পারে। বিভিন্ন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ইতোমধ্যেই এ খবর প্রচার করছে। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারী এবং অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা এ পদক্ষেপকে মার্কিন অর্থনীতির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে দেখছেন।
বিশ্বব্যাপী মার্কিন সুদের হার, বিনিয়োগের প্রবাহ, এবং বৈদেশিক বিনিয়োগের উপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়তে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, লিসা কুকের অপসারণ ফেডারেল রিজার্ভের স্বাধীনতার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা যদি রাজনৈতিক কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে তা মার্কিন অর্থনীতি এবং আন্তর্জাতিক বাজারের স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি সৃষ্টি করতে পারে।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হোয়াইট হাউসকে আদালতে প্রমাণ করতে হবে যে, অপসারণের যথেষ্ট কারণ রয়েছে। যদি আদালত এই প্রমাণ স্বীকার না করে, তবে ট্রাম্প প্রশাসনকে আইনগত বাধার মুখোমুখি হতে হবে।
ভবিষ্যৎ কী হতে পারে?
লিসা কুকের অপসারণ প্রসঙ্গ মার্কিন রাজনীতি এবং অর্থনীতির ওপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে। মার্কিন ফেডের ইতিহাসে এমন পদক্ষেপ নজিরবিহীন হওয়ায়, এ নিয়ে রাজনৈতিক, আইনি এবং অর্থনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা, অর্থনৈতিক নীতি এবং আন্তর্জাতিক বাজারে মার্কিন অর্থনীতির ভাবমূর্তি নিয়ন্ত্রণে বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের লিসা কুককে অপসারণের নির্দেশ একটি বড় রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এটি শুধু মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ইতিহাসেই নয়, আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলবে। লিসা কুকের পদত্যাগ বা অপসারণের পরিণতি কী হবে, তা সময়ের সাথে স্পষ্ট হবে।
MAH – 12489 , Signalbd.com