গাজা নগরীতে দুই দিনে দেড় শতাধিক হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল

ফিলিস্তিনের গাজা নগরীতে ইসরায়েলি সেনা বাহিনী দুই দিন ধরে অব্যাহত বিমান, স্থল ও কামান হামলা চালাচ্ছে। এই নৃশংস অভিযানে অন্তত দেড় শতাধিকবার হামলা চালানো হয়েছে, যার মধ্যে সাধারণ মানুষও আক্রান্ত হয়েছেন। হাজার হাজার ফিলিস্তিনি নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে গাজা নগরী ছেড়ে পালাচ্ছেন।
হামলার বিস্তারিত
ইসরায়েলের ঘোষণা অনুযায়ী, গত দুই দিনে গাজা নগরীর বিভিন্ন এলাকা লক্ষ্য করে বিমান এবং স্থল হামলা চালানো হয়েছে। এর ফলে গাজার হাসপাতালগুলোর তথ্য অনুযায়ী, প্রথমদিন অন্তত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এরপর সন্ধ্যার মধ্যে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫০ ছাড়িয়েছে। শহরের শাতি শরণার্থী শিবিরে নিহতদের মধ্যে এক শিশু ও তার মা রয়েছেন।
ইসরায়েলি বাহিনী জানিয়েছে, গাজা নগরীতে দুই থেকে তিন হাজার হামাস সদস্য অবস্থান করছে এবং তাদের নির্মূল করতেই এই অভিযান শুরু হয়েছে। হামলার ধরণে দেখা গেছে, ইসরায়েলি বাহিনী স্থল, জল এবং আকাশ—তিনটি পথে একযোগে আক্রমণ চালাচ্ছে।
বাসিন্দাদের পরিস্থিতি ও পালানোর চিত্র
শহরের বাসিন্দারা হামলার তীব্রতায় আতঙ্কিত। তারা নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য দক্ষিণাঞ্চলের আল–মাওয়াসি এলাকার দিকে রওনা হয়েছেন। ইসরায়েলি বাহিনী সাময়িকভাবে একটি নিরাপদ পথ খুলে দিয়েছে যাতে ফিলিস্তিনিরা নিরাপদে পালাতে পারেন।
৬৩ বছর বয়সী একজন ফিলিস্তিনি বলেন, “আমি আমার সন্তান ও নাতি–নাতনিদের নিয়ে ভয়ে আছি। সঙ্গে কেবল একটি কম্বল নিয়েছি। ২৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হবে। অন্য কিছু নেওয়া সম্ভব হয়নি।”
গাজার আল–নাসের হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, নিরাপদ আশ্রয়ের এলাকা বলে ঘোষিত আল–মাওয়াসিতে হামলায় অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এই নৃশংসতার কারণে অনেক বাসিন্দা বারবার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
ইসরায়েলের গাজায় সামরিক অভিযান নতুন ঘটনা নয়। ২০২৩ সালের অক্টোবরে শুরু হওয়া আগের অভিযানগুলোতে ইসরায়েল প্রায় ৬৫ হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। এই দুই বছরে গাজা নগরী ও আশপাশের এলাকায় হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরায়েলি সরকার সমুদ্রতীরবর্তী এলাকা ছাড়া পুরো গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ নিতে চায়। এর ফলে সাধারণ ফিলিস্তিনিরা রাজনৈতিক সংঘাতের মূল শিকার হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
ইসরায়েলের আগ্রাসনকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিন্দা জানানো হয়েছে। পোপ চতুর্দশ লিও ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছেন এবং যুদ্ধবিরতি ও কূটনৈতিক সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন। চীন, কাতার, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশও হামলার তীব্র নিন্দা করেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সংকট সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সক্রিয় মধ্যস্থতা প্রয়োজন। বেসামরিক জনগণকে লক্ষ্য করে হামলা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে।
দুই দিনে দেড় শতাধিক হামলার মধ্য দিয়ে গাজা নগরীতে চলমান সংঘাত নৃশংসতার রূপ ধারণ করেছে। সাধারণ মানুষ প্রাণ বাঁচাতে শহর ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া ফিলিস্তিনিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন। গাজার ভবিষ্যৎ শান্তি এবং সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার পুনর্বাসনের উপর নির্ভর করছে।
এম আর এম – ১৩৯৮,Signalbd.com