বিশ্ব

জাপানের বিমানবন্দরে ধরা পড়ল ‘নকল পাকিস্তানি ফুটবল দল’

জাপানের একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ধরা পড়েছে পাকিস্তানের এক নকল ফুটবল দল। এই ঘটনায় ২২ জন পাকিস্তানি নাগরিককে অবৈধভাবে জাপানে প্রবেশ করানোর চেষ্টা করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, একটি সুপরিকল্পিত মানবপাচার চক্র ফুটবল খেলাকে আড়াল হিসেবে ব্যবহার করেছিল।

পাকিস্তানের ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (FIA) জানিয়েছে, এই চক্র ‘গোল্ডেন ফুটবল ট্রায়াল’ নামে একটি ভুয়া ক্লাব তৈরি করে মানুষের শারীরিক ও নথি ভিত্তিক জালিয়াতির মাধ্যমে তাদের জাপানে পাঠানোর চেষ্টা করেছিল। FIA’র বরাত দিয়ে পাকিস্তানের শীর্ষ সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ এই তথ্য প্রকাশ করেছে।

কীভাবে ধাঁধা ধরা পড়ল

তদন্তে দেখা গেছে, মানবপাচার চক্রটি প্রতিটি ব্যক্তিকে প্রায় ৪০ লাখ পাকিস্তানি রুপি করে নিয়েছিল। এরপর ২২ জনকে এমনভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল, যাতে তারা পেশাদার ফুটবলার বলে মনে হয়। তবে জাপানের বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের কঠোর যাচাই প্রক্রিয়ায় তাদের জাল নথিপত্র ধরা পড়ে।

বিমানবন্দরে আটককৃতদের জেরা করা হয় এবং তাদের নিরাপদভাবে পাকিস্তানে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। FIA জানিয়েছে, এই ধরনের ঘটনা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতেও ঘটেছিল, যেখানে একই পদ্ধতিতে ১৭ জনকে জাপানে পাঠানো হয়েছিল।

মানবপাচার চক্র ও মূলহোতার তথ্য

পাকিস্তানের এই মানবপাচার চক্রের মূলহোতা মালিক ওয়াকাস। তিনি নিজে ‘গোল্ডেন ফুটবল ট্রায়াল’ নামে ভুয়া ক্লাব নিবন্ধন করেছিলেন। FIA জানিয়েছে, ওয়াকাসকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্বীকার করেছেন যে, এর আগে এই ধরনের অবৈধ কার্যক্রম চালানো হয়েছিল।

FIA কর্মকর্তারা আরও জানিয়েছেন, এই চক্রের মাধ্যমে যারা জাপানে পাঠানো হতো, তাদেরকে কৌশলে প্রফেশনাল ফুটবলারের মত সাজানো হতো। শিক্ষাদীক্ষা এবং প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো, যাতে তাদের ভিসা আবেদন এবং বিদেশ যাত্রার ক্ষেত্রে সন্দেহ কম থাকে।

জাপানের বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের ভূমিকা

জাপানের বিমানবন্দর নিরাপত্তা কর্মকর্তারা সতর্কতার সঙ্গে নথিপত্র যাচাই করার ফলে এই মানবপাচার চক্র ধরা পড়ে। তাদের চরম সচেতনতা এবং জাল নথিপত্র চিহ্নিত করার দক্ষতার জন্য এই ধাপটি সম্ভব হয়।

একটি বিমানবন্দর সূত্র জানিয়েছে, “আমরা কেবল জাল নথি নয়, তাদের শরীরী ও সামাজিক তথ্যও যাচাই করি। প্রফেশনাল ফুটবলারের মতো সাজানো হলেও অভিজ্ঞ কর্মকর্তারা সহজেই শনাক্ত করতে সক্ষম হয়।”

মানবপাচারের গ্লোবাল প্রেক্ষাপট

বিশ্বব্যাপী মানবপাচার একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। বিশেষ করে স্পোর্টস বা বিনোদনের মাধ্যমে মানুষকে বিদেশে পাচারের ঘটনা নতুন নয়। আন্তর্জাতিক সংস্থা ও আইনের পর্যবেক্ষকরা বারবার সতর্ক করেছে যে, তরুণ খেলোয়াড়দেরকে প্রলোভন দেখিয়ে বিদেশে পাঠানো হচ্ছে।

জাতিসংঘের এক মানবপাচার বিষয়ক রিপোর্ট অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর কিছু অংশ থেকে শিশু এবং যুবকদের অবৈধভাবে বিদেশে পাঠানোর ঘটনা বেড়ে চলেছে। এই চক্রগুলোর মূল উদ্দেশ্য হলো অর্থ উপার্জন, যেখানে মানুষকে পণ্য বা পুঁজি হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

পাকিস্তানে আইনি প্রক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া

FIA জানিয়েছে, গ্রেফতারকৃত মালিক ওয়াকাসের বিরুদ্ধে অবিলম্বে মামলা করা হয়েছে। পাকিস্তানের স্পোর্টস অথরিটি এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

একজন সরকারি কর্মকর্তা বলেছেন, “আমরা স্পোর্টসকে মানুষের উন্নয়ন এবং বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে দেখার আহ্বান জানাই। কিন্তু যারা মানুষকে পাচারের জন্য ব্যবহার করে, তাদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে।”

অভিজ্ঞ বিশ্লেষকের মন্তব্য

মানবপাচার ও স্পোর্টস বিশ্লেষক ডঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, “ফুটবল বা অন্য কোন খেলাকে আড়াল হিসেবে ব্যবহার করে মানবপাচার নতুন নয়, তবে এই ধরণের ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ হবে। দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও কঠোর হতে হবে।”

তিনি আরও যোগ করেছেন, “যুব খেলোয়াড়দের নিরাপদ এবং স্বচ্ছভাবে বিদেশে পাঠানোর জন্য স্পোর্টস ফেডারেশনকে এক শক্তিশালী তদারকি ব্যবস্থা চালু করতে হবে।”

জাপানের বিমানবন্দরে নকল পাকিস্তানি ফুটবল দলের ঘটনা একবার আবার প্রমাণ করলো, যে মানবপাচার এখন শুধু সীমান্তিক নয়, বরং আন্তর্জাতিক স্পোর্টস এবং বিনোদন খাতেও বিস্তৃত। এটি শুধু পাকিস্তান নয়, সারা দক্ষিণ এশিয়া ও এশিয়ার জন্য সতর্কবার্তা।

এ ধরনের ঘটনায় কেবল আইন প্রয়োগকারী সংস্থা নয়, জনসাধারণকেও সচেতন হতে হবে। যুব খেলোয়াড়দের প্রলোভনে ফেলা থেকে রক্ষা করতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পরিবার এবং স্পোর্টস ক্লাবেরও দায়িত্ব আছে।

এই ঘটনা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেও একটি বার্তা দিয়েছে: স্পোর্টসের আড়ালে মানবপাচার কোনভাবেই ধ্বংস করা যায় না। আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং কঠোর নজরদারির মাধ্যমে এই ধরনের চক্র বন্ধ করা সম্ভব।

MAH – 12877  Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button