ইয়েমেনের হোদেইদা বন্দরে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে হামলা, ঘোষণা ইসরাইলের

মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা নতুন মাত্রা পেল। ইয়েমেনের কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ হোদেইদা বন্দরে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে হামলা চালানোর ঘোষণা দিয়েছে ইসরাইল। দেশটির সেনাবাহিনী ইতোমধ্যেই বন্দর খালি করার নির্দেশ দিয়েছে এবং সতর্ক করে বলেছে, সেখানে অবস্থান করলে যে কেউ জীবনের ঝুঁকিতে পড়বে। এই ঘোষণার পর আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ আরও বেড়েছে।
ইসরাইলি সেনাবাহিনীর ঘোষণা
মঙ্গলবার ইসরাইলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র আভিচায় আদ্রাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি বার্তা প্রকাশ করেন। বার্তায় হোদেইদা বন্দরের মানচিত্র যুক্ত করে তিনি জানান, ইয়েমেনের হুথি আন্দোলনের সামরিক কার্যকলাপের জবাবে শিগগিরই ওই অঞ্চলে বিমান হামলা চালানো হবে।
তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, “হোদেইদা বন্দর ও সেখানকার আশেপাশের এলাকায় যারা অবস্থান করছেন, তারা নিজেদের জীবন ঝুঁকির মুখে ফেলছেন। সবাইকে অবিলম্বে সরে যাওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে।”
ইসরাইল–হুথি সংঘাত
ইসরাইল ও ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব নতুন কিছু নয়। ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানাতে হুথি গোষ্ঠী নিয়মিতভাবে ইসরাইলের দিকে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে আসছে।
এর জবাবে ইসরাইলও বেশ কয়েক দফায় ইয়েমেনের ভেতরে হামলা চালিয়েছে। হোদেইদা বন্দরকে হুথিদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যেখানে তাদের অস্ত্র ও সরঞ্জাম মজুত থাকে বলে অভিযোগ করে আসছে তেল আবিব।
সাম্প্রতিক হামলা ও উত্তেজনা বৃদ্ধি
গত ১৪ সেপ্টেম্বর হুথি যোদ্ধারা চারটি আত্মঘাতী ড্রোন পাঠায় ইসরাইলের দিকে। এর মধ্যে তিনটি ড্রোন রামন বিমানবন্দরে এবং একটি আল-নাকাব মরুভূমির সামরিক ঘাঁটিতে আঘাত হানে। হুথিদের দাবি, তাদের এই অভিযান নির্ধারিত লক্ষ্য পূরণ করেছে এবং এটি গাজায় চলমান ইসরাইলি আগ্রাসনের জবাব।
এর ঠিক দুই দিন পর ইসরাইলের হোদেইদায় হামলার ঘোষণা পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলল।
হোদেইদা বন্দরের কৌশলগত গুরুত্ব
হোদেইদা ইয়েমেনের অন্যতম প্রধান সমুদ্রবন্দর। এটি শুধু বাণিজ্যিক কার্যক্রমের জন্য নয়, বরং মানবিক সহায়তা প্রবেশের প্রধান পথ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। জাতিসংঘের মতে, ইয়েমেনে চলমান যুদ্ধ ও খাদ্য সঙ্কটে কোটি মানুষ এই বন্দরের মাধ্যমে আসা সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল।
ফলে এখানে বড় ধরনের হামলা চালালে কেবল সামরিক ক্ষতি নয়, বরং বেসামরিক মানুষের মানবিক বিপর্যয় আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও উদ্বেগ
জাতিসংঘ ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ইসরাইলের এই ঘোষণায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা বলছে, বন্দর এলাকায় হামলা চালানো মানে হাজার হাজার বেসামরিক মানুষের জীবনকে হুমকির মুখে ফেলা।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই পদক্ষেপ ইয়েমেন সংকটকে আরও জটিল করে তুলবে এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকে বড়ভাবে নাড়া দেবে। বিশেষ করে লোহিত সাগরের বাণিজ্যপথ এ কারণে ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ
আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, ইসরাইল এই ঘোষণা দিয়ে মূলত হুথিদের ওপর চাপ বাড়াতে চাইছে। তবে এতে মানবিক সংকট আরও গভীর হতে পারে। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, এ ধরনের পদক্ষেপ মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতকে শুধু ইয়েমেন–ইসরাইল সীমায় সীমাবদ্ধ রাখবে না, বরং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক রাজনীতিতেও নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে।
কিছু রাজনৈতিক বিশ্লেষক আবার বলছেন, গাজায় আন্তর্জাতিক চাপ কমাতে ইসরাইল নতুন একটি ফ্রন্ট তৈরি করতে চাইছে। ফলে হোদেইদায় হামলার ঘোষণা একটি কৌশলগত চাল হিসেবেও দেখা যেতে পারে।
ইসরাইলের ঘোষণার পর ইয়েমেনসহ গোটা মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা আরও বেড়েছে। হোদেইদা বন্দরে বাস্তবেই বড় কোনো হামলা হলে এর প্রভাব মানবিক ও কূটনৈতিক উভয় ক্ষেত্রেই ভয়াবহ হতে পারে। এখন প্রশ্ন হলো, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই ঘোষণা ঠেকাতে সক্রিয় হবে কিনা, নাকি পরিস্থিতি আরও রক্তক্ষয়ী সংঘাতে রূপ নেবে।
এম আর এম – ১৩৬৩,Signalbd.com