বিশ্ব

যেখানেই থাকুন, হামাস নেতারা রেহাই পাবেন না নেতানিয়াহু

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আবারও স্পষ্ট করে বলেছেন, ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসের নেতারা যেখানেই থাকুন না কেন, তাদের রেহাই পাওয়ার সুযোগ নেই। তিনি এই মন্তব্য করেছেন কাতারে হামলা চালানোর এক সপ্তাহের মধ্যে, যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি করেছে।

জেরুজালেমে সোমবার অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে নেতানিয়াহু বলেন, “আমরা তাদের কোনো অবস্থানেই বাঁচতে দেব না। যেখানেই থাকুন, আমরা তাদের খুঁজে বের করব। ইসরায়েল নিজের সীমানার বাইরে হলেও আত্মরক্ষার অধিকার সম্পূর্ণভাবে প্রয়োগ করবে।”

সংবাদ সম্মেলনে তাঁর পাশে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। নেতানিয়াহু মার্কো রুবিওকে পাশে রেখে আরও বলেন, “প্রতিটি দেশই নিজের সীমানার বাইরে আত্মরক্ষার অধিকার রাখে। আমাদের লক্ষ্য শুধু সীমানার অভ্যন্তরে সীমাবদ্ধ নয়, যেখানে আমাদের নাগরিক ও নিরাপত্তা বিপন্ন, সেখানে আমরা ব্যবস্থা নেব।”

কাতারে হামলার প্রেক্ষাপট

গত সপ্তাহে কাতারের রাজধানী দোহায় হামাস নেতাদের অবস্থান লক্ষ্য করে ইসরায়েলি বাহিনী হামলা চালায়। হামাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, হামলায় ছয়জন নিহত হয়েছেন, কিন্তু মূল নেতারা বেঁচে গেছেন।

এই হামলা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। মধ্যপ্রাচ্যের ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশ কাতারের মাটিতে হামলার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও দেশটির প্রতি সতর্কবার্তা দেন। তিনি আশ্বস্ত করেন যে, ভবিষ্যতে কাতারের মাটিতে আর এমন কোনো হামলা ঘটবে না।

নেতানিয়াহু সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্পষ্টভাবে জানান, “এই অভিযান সম্পূর্ণভাবে ইসরায়েলের পরিকল্পনা ও উদ্যোগ। যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সরাসরি অংশগ্রহণ ছিল না। আমরা নিজেদের স্বার্থে এই পদক্ষেপ নিয়েছি।”

যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ও কাতারের কূটনীতি

মার্কো রুবিও কাতারে ইসরায়েল সফরের পর মধ্যপ্রাচ্যে যোগ দিতে যাচ্ছেন। তিনি সাংবাদিকদের জানান, “উপসাগরীয় মিত্রদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক দৃঢ় ও স্থিতিশীল। আমরা মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

কাতারে হামাস নেতাদের অবস্থান এবং ইসরায়েলের হামলার পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উদ্বিগ্ন। এ পরিস্থিতিতে কাতার তৎপরভাবে মধ্যস্থতার ভূমিকা পালন করছে। ২০১২ সাল থেকে কাতারে হামাসের রাজনৈতিক শাখার অফিস রয়েছে। দেশটি ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রক্রিয়ায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছে।

কাতার, যেটিতে যুক্তরাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিমানঘাঁটি রয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে কৌশলগত ভূমিকা রাখে। এই অবস্থান কেবল কাতারের জন্য নয়, পুরো অঞ্চলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

আরব ও মুসলিম নেতাদের প্রতিক্রিয়া

ইসরায়েলের এই হামলার পর কাতারের রাজধানী দোহায় আরব ও মুসলিম দেশগুলোর শীর্ষ নেতাদের জরুরি শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ‘দ্বিমুখী আচরণ এড়াতে’ এবং ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবার আহ্বান জানান। কাতারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যে কোনো ধরনের একপক্ষীয় হামলা, যা শান্তি প্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, তা আমরা বরদাস্ত করতে পারি না।”

কাতারের শীর্ষ নেতারা আবারও মনে করিয়েছেন যে, হামাস নেতাদের উপস্থিতি মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তির পথে প্রধান বাধা হিসেবে কাজ করছে। তারা ইসরায়েলের এমন পদক্ষেপকে সমালোচনা করে আন্তর্জাতিক নীতিমালার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার আহ্বান জানান।

নেতানিয়াহুর মন্তব্যের প্রভাব

নেতানিয়াহুর এই মন্তব্য ইসরায়েলের নিরাপত্তা নীতি ও হামাসের বিরুদ্ধে অবস্থানকে আরও দৃঢ়ভাবে তুলে ধরেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ইসরায়েল যে কোনো অবস্থাতেই নিজের নাগরিক ও সীমানার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করবে না।

মধ্যপ্রাচ্যের বিশ্লেষকরা বলছেন, কাতারে হামলা ইসরায়েলের কৌশলগত সংকেত। এটি ইঙ্গিত দেয় যে, হামাসের নেতাদের কোনো অবস্থানই নিরাপদ নয় এবং যেকোনো সময় ইসরায়েল তাদের লক্ষ্য করতে পারে।

মধ্যপ্রাচ্যের কূটনৈতিক প্রেক্ষাপট

মধ্যপ্রাচ্যে এই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সম্পর্ক বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। মার্কো রুবিও ইসরায়েল সফরের পর কাতারে যাত্রা করবেন এবং সেখানে কাতারসহ উপসাগরীয় মিত্রদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এই বৈঠকগুলোতে মূলত শান্তি প্রক্রিয়া, যুদ্ধবিরতি এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কাতারের ভূমিকা মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও সংঘর্ষ কমানোর ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইসরায়েলি হামলার পর কাতার মধ্যস্থতার প্রয়াস আরও সক্রিয় করেছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

হামলার পরে বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক নেতারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের আরব ও মুসলিম দেশগুলো ইসরায়েলের পদক্ষেপকে ‘একপক্ষীয় হামলা’ হিসেবে দেখছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের ‘অধিকার এবং নিরাপত্তা নীতি’কে সমর্থন জানিয়েছে। মার্কো রুবিও বলেছেন, “আমরা শান্তি এবং স্থিতিশীলতার জন্য ইসরায়েলের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি।”

বিশ্ব রাজনীতিতে ইসরায়েল ও হামাসের দ্বন্দ্ব নতুন মাত্রা পাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এই পরিস্থিতি মধ্যপ্রাচ্যে রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়াতে পারে।

ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি

নেতানিয়াহুর মন্তব্য এবং কাতারে হামলার ঘটনা ভবিষ্যতে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে। কাতারের ভূ-রাজনৈতিক ভূমিকা, যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্ক এবং ইসরায়েলের নিরাপত্তা নীতি—all মিলিয়ে পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হচ্ছে।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, ইসরায়েল যে কোনো মুহূর্তে হামাস নেতাদের ওপর পদক্ষেপ নিতে পারে, যা মধ্যপ্রাচ্যের কূটনৈতিক প্রেক্ষাপটে নতুন চাপ তৈরি করবে।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর স্পষ্ট হুঁশিয়ারি প্রমাণ করে, যেকোনো অবস্থাতেই হামাস নেতারা নিরাপদ নয়। কাতারের মাটিতে হামলা, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতা এবং মধ্যপ্রাচ্যের নেতাদের প্রতিক্রিয়া—সব মিলিয়ে এটি একটি জটিল রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক পরিস্থিতি তৈরি করেছে।

এই ঘটনা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য সতর্কবার্তা, যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা শুধুমাত্র দ্বিপাক্ষিক কূটনীতি, সমঝোতা এবং সতর্ক পরিকল্পনার মাধ্যমে অর্জিত সম্ভব। মধ্যপ্রাচ্য এখন একটি সংবেদনশীল সময় অতিক্রম করছে, যেখানে প্রত্যেক দেশের পদক্ষেপই ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।

MAH – 12846  Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button