সৌদি আকাশপথে মিসাইল পাঠিয়ে কাতারে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল

১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ – মধ্যপ্রাচ্যে এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে। ইসরায়েল কাতারের রাজধানী দোহায় হামলা চালিয়েছে, যেখানে হামলার সময় সৌদি আরবের আকাশপথ ব্যবহার করে দূরপাল্লার মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়। এই হামলায় কাতারে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে এবং দোহার গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ধ্বংসের মুখে পড়েছে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি বাহিনী লোহিত সাগর থেকে দূরপাল্লার যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে কাতারের হামাস নেতাদের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানেছে। তবে ইসরায়েলি বিমানগুলো পার্শ্ববর্তী কোনো আরব দেশের আকাশসীমায় প্রবেশ করেনি, যা আন্তর্জাতিক উত্তেজনা কমানোর একটি কৌশল হিসেবে দেখা হচ্ছে।
হামলার পদ্ধতি: সৌদি আকাশপথের ব্যবহার
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালসহ অন্যান্য মার্কিন সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে জানা যায়, ইসরায়েলি বিমানবাহিনী (IAF) আটটি এফ-১৫ এবং চারটি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান মোতায়েন করেছিল। এসব বিমান লোহিত সাগর থেকে দোহার ওপর আঘাত হানার জন্য ছোঁড়া মিসাইলের লক্ষ্যবস্তুতে নির্দেশিত হয়।
মার্কিন কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন, ইসরায়েলি বিমানগুলো সৌদি আকাশসীমা অতিক্রম না করেই মহাকাশপথ ব্যবহার করে মিসাইল নিক্ষেপ করেছে। মিসাইল মহাকাশে প্রবেশ করে নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে। তারা জানান, এই প্রযুক্তি ব্যবহার করার উদ্দেশ্য ছিল সৌদি আরবের আকাশসীমা লঙ্ঘনের অভিযোগ এড়ানো।
দোহার ক্ষয়ক্ষতি ও পরিস্থিতি
দোহার বিভিন্ন ভবন হামলার শিকার হয়েছে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের একজন সাংবাদিক জানান, হামলার সময় দোহার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভবনের মধ্যবর্তী এবং নিচতলা প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। এছাড়া ভবনের ভিতরে ব্যবহৃত অনেক সজ্জা ও সরঞ্জামও পুরোপুরি নষ্ট হয়েছে।
কাতারে হামলার সময় স্থানীয় নাগরিক ও কর্মকর্তারা আতঙ্কে ছুটে বেড়িয়েছেন। স্থানীয় নিরাপত্তা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়।
কাতারের প্রতিক্রিয়া
কাতার সরকার দ্রুত এই হামলার নিন্দা জানায়। কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে, “ইসরায়েলের হামলা আন্তর্জাতিক আইন ও ন্যায্যতা লঙ্ঘন করছে। কাতারের নাগরিক এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা লক্ষ্যবস্তু হওয়া সম্পূর্ণ অবৈধ।”
হামাসও এই হামলার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তাদের দাবি, হামলায় ভারপ্রাপ্ত নেতা খলিল আল-হাইয়া বেঁচে গেছেন। যদিও হামলার সময় শীর্ষস্থানীয় নেতাদের প্রাণহানি হয়নি, তবে ইসরায়েলের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাতের প্রয়াসে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
মার্কিন প্রশাসনের অবহিতকরণ
মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, হামলার পূর্ব মুহূর্তে ইসরায়েল মার্কিন সেনাবাহিনীকে বিষয়টি জানিয়েছিল। তবে এটি সময়মতো জানানোর কারণে হামলার প্রত্যাহার বা থামানোর উপায় আর ছিল না।
মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা বলেন, “এই ধরনের হামলার পরিকল্পনা গোপন রাখা হয়, যাতে লক্ষ্যবস্তুতে সঠিক আঘাত হানা সম্ভব হয়। এর ফলে শেষ মুহূর্তেও কোনও পরিবর্তন বা পদক্ষেপ নেওয়া যায়নি।”
ইসরায়েলের কৌশল ও প্রযুক্তি ব্যবহার
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরায়েল দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক মিসাইল এবং মহাকাশ প্রযুক্তি ব্যবহার করে কাতারে হামলা চালিয়েছে। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করার মূল লক্ষ্য ছিল:
- পার্শ্ববর্তী দেশের আকাশসীমা লঙ্ঘন না করা
- নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে সঠিক আঘাত হানা
- আন্তর্জাতিক চাপ কমানো
ইসরায়েলি বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মধ্যপ্রাচ্যে এমন উচ্চস্তরের আঘাতের ক্ষেত্রে দূরপাল্লার মিসাইল ও যুদ্ধবিমান প্রযুক্তি ব্যবহার জরুরি।
সৌদি আরবের নিন্দা
হামলার পর সৌদি আরব তার নিজস্ব আকাশসীমার নিরাপত্তা রক্ষা করে। সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “ইসরায়েলের এই আগ্রাসন অবৈধ এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের স্পষ্ট লঙ্ঘন।” তবে তারা উল্লেখ করেনি যে তাদের আকাশপথ ব্যবহার করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংস্থা
জাতিসংঘ এই হামলার দ্রুত তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে। মানবাধিকার সংস্থা উল্লেখ করেছে, নাগরিকদের উপর সরাসরি হামলা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন।
ইউরোপীয় দেশসমূহ
ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে এবং মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছে। তারা বলেছে, “এই ধরনের আক্রমণ শুধুমাত্র উত্তেজনা বাড়ায় এবং শান্তি প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে।”
মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিবেশী দেশ
সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইনও এই হামলার বিষয়ে নিন্দা জানিয়েছে। বিশেষ করে কাতারের পাশে দাঁড়ানো দেশগুলো এই ঘটনার দুর্নীতি ও যুদ্ধাপরাধের ইঙ্গিত হিসেবে উল্লেখ করেছে।
বিশ্লেষণ: মধ্যপ্রাচ্যের জটিলতা
মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক জটিলতা নতুন নয়। ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে সংঘাত চলছে। এই হামলা আবারো প্রমাণ করল, সৌদি আরব ও অন্যান্য পার্শ্ববর্তী দেশের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরায়েলি হামলা একটি প্রযুক্তিগত চাপে ভরা কৌশল, যা কেবল যুদ্ধের নয়, রাজনৈতিক বার্তাও বহন করে।
ভবিষ্যৎ প্রভাব
এই হামলার পর কাতারের নিরাপত্তা ও স্থাপনা পুনর্নির্মাণে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়তে পারে। এছাড়া:
- মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত
- আন্তর্জাতিক কূটনীতি ও জোটের পরিবর্তন
- নাগরিকদের মধ্যে নিরাপত্তা ও উদ্বেগ বৃদ্ধি
সারসংক্ষেপ
- ইসরায়েল কাতারের দোহায় হামলা চালিয়েছে।
- হামলার সময় সৌদি আকাশপথ ব্যবহার করে মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছে।
- কাতারে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে।
- হামাস দাবি করেছে, তাদের নেতা বেঁচে গেছেন।
- মার্কিন প্রশাসন হামলার পূর্ব মুহূর্তে অবহিত হয়।
- আন্তর্জাতিক মহল নিন্দা জানিয়েছে, জাতিসংঘ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে।
MAH – 12804 Signalbd.com