বাংলাদেশ

সেরা মাদক উদ্ধারকারী পুলিশ অফিসার মাদক পাচারের অভিযোগে প্রত্যাহার

চট্টগ্রামের লোহাগাড়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে মাদক পাচারের অভিযোগ উঠেছে। গত ২১ আগস্ট রাতে চুনতি বাজার এলাকায় ফেনসিডিলসহ তিনজনকে আটক করার পর তাদের জবানবন্দিতে এসআই কামালের নাম উঠে আসে। এ ঘটনায় পুলিশ প্রশাসন তাকে প্রত্যাহার করে চট্টগ্রাম পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করেছে। বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে এবং প্রমাণিত হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঘটনার বিস্তারিত

গত ২১ আগস্ট রাত দেড়টার দিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চুনতি বাজার এলাকায় স্থানীয়রা তিনজনকে ফেনসিডিলসহ আটক করেন। পরে তাদের সেনাবাহিনীর হাতে সোপর্দ করা হয়। আটককৃতরা হলেন—উপজেলার আমিরাবাদ ৭নং ওয়ার্ডের সুখছড়ি এলাকার রমিজ উদ্দিন (৩৫), লোহাগাড়া সদরের হোসেন আলী মাতব্বর বাড়ির নাজিম উদ্দিন (৪৫) এবং মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়া থানার তাজুল ইসলাম (৪৯)। তাদের কাছ থেকে ৪৮ বোতল ফেনসিডিল ও পাচারে ব্যবহৃত একটি প্রাইভেটকার জব্দ করা হয়।

আটককৃতদের মধ্যে রমিজ উদ্দিন দাবি করেন, তারা তিনজন পুলিশের সোর্স। এসআই কামাল তাদের ফেনসিডিলগুলো দিয়েছিলেন এবং পার্বত্য লামা উপজেলার আজিজ নগরে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলেছিলেন। তিনি আরও জানান, এসআই কামাল তাদের পেছনের একটি প্রাইভেটকারে ছিলেন এবং ওই গাড়ীতে ইয়াবা ছিল। সামনের গাড়ি আটকের সঙ্গে সঙ্গে তিনি পেছনের গাড়ি থেকে পালিয়ে যান।

পুলিশ প্রশাসনের পদক্ষেপ

ঘটনার পর লোহাগাড়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) রবিউল আলম খান জানান, শুক্রবার (২২ আগস্ট) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে এসআই কামাল হোসেনকে লোহাগাড়া থানা থেকে প্রত্যাহার করে চট্টগ্রাম পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে এবং প্রমাণ পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এছাড়া, ফেনসিডিলসহ আটক তিন সোর্সের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করে তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।

স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া

ঘটনার পর স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই অভিযোগ করেছেন, লোহাগাড়া থানার পুলিশ সদস্যরা মাদকদ্রব্য উদ্ধার করলেও তা আদালতে জমা না দিয়ে পাচার করে। বৃহস্পতিবার দুপুরে একটি বিশ্বস্ত সূত্রে তারা জানতে পারেন, এসআই কামাল হোসেন তার ব্যক্তিগত সোর্সদের ব্যবহার করে লোহাগাড়া থানা এলাকা থেকে বিপুল পরিমাণ মাদক কক্সবাজারে পাচার করবেন। এরপর চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার শিক্ষার্থীরা বিষয়টি যাচাই করতে অনুরোধ জানায়। বিকেল ৪টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত টানা ৮ ঘণ্টা চুনতি বাজার এলাকায় অবস্থান করে ছাত্ররা এসআই কামালের সোর্সদের মাদকসহ আটক করতে সক্ষম হন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া

ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, ছাত্ররা ফেসবুক লাইভে এসে তল্লাশি চালাচ্ছেন এবং আটককৃতদের জবানবন্দি নিচ্ছেন। এতে রমিজ উদ্দিন স্বীকার করেন, এসআই কামাল হোসেন ফেনসিডিলের বোতলগুলো দিয়েছিলেন। ভিডিওটি ব্যাপকভাবে শেয়ার হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে।

পুলিশ প্রশাসনের অবস্থান

পুলিশ প্রশাসন জানিয়েছে, এসআই কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তাধীন রয়েছে। প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ঘটনায় পুলিশ বিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে অনেকেই মনে করছেন।

এ ঘটনা চট্টগ্রাম পুলিশ প্রশাসনের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। মাদক পাচারের সঙ্গে পুলিশের কোনো সদস্য জড়িত থাকলে তা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি জনসাধারণের আস্থার সংকট সৃষ্টি করবে। তাই, দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত, যাতে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা পুনরাবৃত্তি না ঘটে।

MAH – 12447 ,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button