আরও ১০ দিন ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস

দেশজুড়ে শুরু হওয়া ভারী বর্ষণ আগামী ১০ দিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। মৌসুমী বায়ুর সক্রিয় অবস্থানের কারণে দেশের অধিকাংশ অঞ্চলে মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষত উত্তর, পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।
আবহাওয়ার বর্তমান অবস্থা ও পূর্বাভাস
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, মৌসুমী বায়ুর অক্ষ বর্তমানে রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত।
এই অবস্থান অনুযায়ী, দেশের উপর মৌসুমী বায়ু মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে। আগামী ২৪ জুলাইয়ের মধ্যে উত্তর বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে, যার প্রভাবে বৃষ্টির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।
কোন কোন অঞ্চলে কেমন বৃষ্টি হবে
ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও সিলেট বিভাগ:
এইসব অঞ্চলে অনেক জায়গায় মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। দমকা হাওয়াসহ বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনাও রয়েছে।
রংপুর, রাজশাহী, বরিশাল ও ময়মনসিংহ বিভাগ:
কিছু কিছু স্থানে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। তবে কোথাও কোথাও ভারী বর্ষণও হতে পারে।
পরবর্তী ৪-৫ দিনেও একই ধারা বজায় থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। দেশের কোথাও কোথাও অতি ভারী বর্ষণের সম্ভাবনাও রয়েছে।
অতীতের অভিজ্ঞতা ও বর্তমান পরিস্থিতি
বাংলাদেশে বর্ষা মৌসুমে এমন ধারাবাহিক বৃষ্টিপাত নতুন কিছু নয়। তবে এ বছরের বৃষ্টির মাত্রা তুলনামূলকভাবে বেশি। জুলাইয়ের শুরু থেকেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জলাবদ্ধতা দেখা যাচ্ছে। চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনাসহ বিভিন্ন শহরে নালা-নর্দমার পানি উপচে পড়েছে।
গত বছরও এমন ধারাবাহিক বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছিল। তাই সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে আগাম সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
জনজীবনে প্রভাব ও ঝুঁকি
টানা ভারী বর্ষণের ফলে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসীরা। রাজধানী ঢাকায় রাস্তাঘাটে পানি জমে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশালে জলাবদ্ধতার কারণে নৌ-চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। সিলেট ও পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি ঢল ও ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে।
এছাড়া কৃষিখাতেও প্রভাব পড়তে পারে। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতে ধানের চারা ও সবজির ক্ষতি হতে পারে বলে জানিয়েছে কৃষি কর্মকর্তারা।
সরকারি পদক্ষেপ ও প্রস্তুতি
জেলা প্রশাসনগুলোকে সতর্ক অবস্থানে রাখা হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যেই ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে নজরদারি বাড়িয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (BWDB) জানিয়েছে, নদীগুলোর পানির স্তর পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। কোথাও নদীভাঙনের ঝুঁকি দেখা দিলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরও জনগণকে সচেতন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে জরুরি অবস্থার জন্য।
বৃষ্টির ধারা কবে কমবে?
আবহাওয়া অধিদপ্তরের ১০ দিনের বর্ধিত পূর্বাভাস অনুযায়ী, ৩১ জুলাইয়ের আগ পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকবে। তবে আগস্টের শুরু থেকে মৌসুমী বায়ুর সক্রিয়তা কিছুটা কমতে পারে বলে পূর্বাভাসে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বৃষ্টিপাত জলসম্পদ পূরণে গুরুত্বপূর্ণ হলেও, পরিকল্পনাহীন শহর ব্যবস্থাপনা ও দুর্বল ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে এটি জনদুর্ভোগে রূপ নিচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহফুজ রহমান বলেন,
“বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে টানা বৃষ্টি স্বাভাবিক হলেও এই বৃষ্টির ঘনত্ব বেশি। ফলে ভূমিধস ও নদীভাঙনের আশঙ্কা বেড়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “বৃষ্টির কারণে কৃষি খাতে সুফলও আসতে পারে, তবে অতিরিক্ত পানির কারণে নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হলে ক্ষতিও হতে পারে।”
সারসংক্ষেপ
বাংলাদেশে সামনের ১০ দিন যে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে, তা নিশ্চিত করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তাই জনসাধারণকে সতর্ক থাকা ও প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
সরকারি পদক্ষেপ থাকলেও ব্যক্তিগত পর্যায়ে সাবধানতা এবং স্থানীয় ব্যবস্থাপনার উন্নতি জরুরি। জলাবদ্ধতা, ভূমিধস ও কৃষির ক্ষতি রোধে সম্মিলিত উদ্যোগ এখন সময়ের দাবি।
তবে বিশ্লেষকদের মতে, পরিস্থিতির উন্নতি বা অবনতি নির্ভর করছে মৌসুমী বায়ুর গতিপ্রকৃতি এবং আগামী ৭-১০ দিনের বাস্তব পরিস্থিতির ওপর।
এম আর এম – ০৪৭৪ , Signalbd.com