বিশ্ব

মৃত মা কি শাসন করছেন মোদিকে? কংগ্রেসের এআই ভিডিও বিতর্কে উত্তাল ভারতীয় রাজনীতি

ভারতের রাজনৈতিক মঞ্চ আবারও এক বিতর্কিত ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং তাঁর প্রয়াত মা হীরাবান মোদি-কে নিয়ে সম্প্রতি কংগ্রেসের একটি এআই তৈরি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে উত্তাপ সৃষ্টি করেছে। ভিডিওটিতে মোদির চরিত্রকে এমনভাবে দেখানো হয়েছে যেন তাঁর মা তাঁকে নিন্দা করছেন।

এই ভিডিও প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে ভারতীয় রাজনীতিতে নতুন করে পাল্টাপাল্টি প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। কংগ্রেস এবং বিজেপি নেতারা একে কেন্দ্র করে সামাজিক ও রাজনৈতিক তর্কে জড়িয়েছেন।

কংগ্রেসের ভিডিও ও তার বিষয়বস্তু

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি ‘কংগ্রেস বিহার’ নামের একটি অফিসিয়াল সামাজিক মিডিয়া হ্যান্ডেল প্রধানমন্ত্রী মোদি এবং তাঁর মা হীরাবান মোদির চরিত্র নিয়ে একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ভিডিও প্রকাশ করেছে।

ভিডিওতে দেখা যায়, মোদির চরিত্রকে তাঁর মা বকাঝকা করছেন, যা দর্শকদের মধ্যে বিভ্রান্তি ও উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ভিডিওটি শুধু মায়ের সাধারণ শিক্ষামূলক আচরণ দেখাচ্ছে। ভিডিওটি কোনোভাবে অসম্মান বা ব্যঙ্গ করার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়নি।

কংগ্রেস নেতা পবন খেরা বলেছেন,

“একজন মা তার সন্তানকে শিক্ষাদান করছেন। এখানে কোনো অসম্মান নেই। যদি কেউ মনে করেন এটি অসম্মানজনক, তবে সেটা তাদের ব্যক্তিগত ধারণা।”

কংগ্রেসের মিডিয়া ও জনসংযোগ বিভাগের প্রধান পবন খেরা আরও বলেন,

“প্রয়াত মায়ের প্রতি অসম্মান দেখানো হয়েছে বলে কিছু নেই। সন্তানকে শেখানোর অধিকার প্রতিটি অভিভাবকের আছে। আমরা শুধু মায়ের সেই দায়িত্বটি তুলে ধরেছি। এখানে কোনো ব্যঙ্গ বা অপমানের কোনো ইঙ্গিত নেই।”

বিজেপির প্রতিক্রিয়া

এআই ভিডিও প্রকাশের পরই বিজেপি প্রতিক্রিয়াশীল হয়েছে। বিজেপির মুখপাত্র সায়েদ শাহনাওয়াজ হুসাইন বলেছেন,

“কংগ্রেস দিন দিন আরও নিচে নামছে। তারা মোদিজির প্রয়াত মাকে অপমান করেছে এবং এবার এআই ভিডিওর মাধ্যমে তাঁর মুখে কথা বসিয়েছে। বিহার তথা ভারতবাসী এ ধরনের আচরণ মেনে নেবে না।”

অন্য বিজেপি মুখপাত্র অরবিন্দ কুমার সিংহ বলেন,

“ভারতের মায়েদের অনুভূতিকে ব্যঙ্গ করা হয়েছে। আমাদের দেশে মায়েরা দেবী দুর্গা, লক্ষ্মী এবং সরস্বতীর মতো পূজনীয়। কংগ্রেস নেতাদের অবশ্যই ক্ষমা চাইতে হবে।”

বিজেপি নেতারা আরও যুক্তি দিয়েছেন, ভিডিওর মাধ্যমে কেবল মোদির মা নয়, সমগ্র নারী জাতিকে অপমানিত করা হয়েছে। তাদের মতে, এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে তৈরি করা হয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উত্তপ্ত প্রতিক্রিয়া

ভিডিওটি প্রকাশিত হওয়ার পর এক্স, ফেসবুক ও ইউটিউবে ব্যবহারকারীরা বিভিন্ন মতামত প্রকাশ করেছেন। অনেকেই কংগ্রেসের বিরুদ্ধে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন, আবার অনেকে বলেছেন এটি কেবল শিক্ষামূলক ভিডিও

কিছু netizen লিখেছেন,

“এ ধরনের এআই ভিডিও তৈরি করা খুবই বিতর্কিত। প্রয়াত মায়ের সাথে এমন আচরণ করা উচিত নয়।”

অন্যরা মন্তব্য করেছেন,

“ভিডিওটি কেবল শিক্ষার উদাহরণ। কিছুই অপমানজনক নয়।”

এতে দেখা যায়, সামাজিক মাধ্যমেও এই বিতর্ক ভাগাভাগি সৃষ্টি করেছে, যেখানে একাংশ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য খুঁজছে, আর অন্য অংশ ভিডিওটির প্রকৃত উদ্দেশ্যকে সমর্থন করছে।

ইতিহাসের প্রেক্ষাপট

প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী মোদির মা হীরাবান মোদি ২০২২ সালে ৯৯ বছর বয়সে মারা যান। তাঁর জীবন ও ব্যক্তিত্ব ভারতের সাধারণ মানুষের কাছে বিশেষভাবে সম্মানিত। হীরাবান মোদি পরিবার ও সন্তানদের প্রতি শিক্ষামূলক দিক দিয়ে পরিচিত ছিলেন।

ভারতের রাজনীতিতে প্রয়াত নেতাদের পরিবারের ব্যবহার নিয়ে বিভিন্ন সময় বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ভিডিও তৈরি করা এখন নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

এআই ভিডিও: রাজনীতিতে নতুন বিতর্কের সূত্র

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা AI ভিডিও তৈরি এখন রাজনৈতিক বিরোধের একটি নতুন হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। রাজনৈতিক দলগুলো কখনো কখনো এ ধরনের ভিডিও ব্যবহার করে নেতা বা জনমানুষের ভাবমূর্তিতে প্রভাব ফেলতে চেষ্টা করে

বিশেষজ্ঞরা বলছেন,

“এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে নেতার বা তাদের পরিবারের কোনো চরিত্রকে উপস্থাপন করা হলে তা দ্রুত ভাইরাল হয় এবং রাজনৈতিক প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু একই সাথে এটি নৈতিক ও সামাজিক দ্বিধা সৃষ্টি করে।”

এক্ষেত্রে কংগ্রেসের ভিডিওটি প্রমাণ করে, কিভাবে সৃজনশীল প্রযুক্তি রাজনৈতিক কৌশলের অংশ হয়ে উঠছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা কী বলছেন

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ধরনের ঘটনা শুধুই রাজনৈতিক বিতর্ক সৃষ্টি করতে করা হয়েছে। বিশ্লেষকরা মন্তব্য করেছেন,

“বিজেপি-নেত্রী মোদি এবং তাঁর পরিবারের প্রতি নেতিবাচক প্রচারণা চলেছে। এই ভিডিও একটি নতুন বিতর্ক তৈরি করেছে, যা নির্বাচনী প্রভাব ফেলতে পারে।”

এছাড়াও তারা বলেছেন, AI ভিডিও এবং মিথ্যা তথ্য একত্রিত হলে তা রাজনৈতিক পরিবেশকে উত্তপ্ত ও বিভ্রান্তিকর করতে পারে।

ভারতের রাজনীতি আবারও এক নতুন বিতর্কে আবদ্ধ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মোদি এবং তাঁর প্রয়াত মা হীরাবান মোদিকে কেন্দ্র করে কংগ্রেসের এআই ভিডিও প্রকাশের মাধ্যমে যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে তা শুধু রাজনৈতিক নয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ।

বিজেপি অভিযোগ করছে, ভিডিওটি অপমানজনক, কংগ্রেস বলছে, ভিডিওটি কেবল শিক্ষামূলক এবং সাধারণ অভিভাবকীয় আচরণ দেখিয়েছে।

সামাজিক মাধ্যম, রাজনীতিবিদ ও সাধারণ মানুষ—সবার দৃষ্টি এখন এই বিতর্কের ওপর কেন্দ্রীভূত। এআই প্রযুক্তি এবং রাজনীতি মিশে যাওয়া এই ঘটনা ভারতের ডিজিটাল রাজনীতিতে নতুন অধ্যায় খুলছে।

MAH – 12771,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Advertisement
Back to top button