আঞ্চলিক

দুই পুত্রবধূ ও তিন নাতনিকে নিয়ে পাশাপাশি কবরে শুয়ে মোরশেদা বেগম

এক হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের সাতজন সদস্যের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে লক্ষ্মীপুরের চৌপল্লী এলাকায়। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন মোরশেদা বেগম, তাঁর দুই পুত্রবধূ কবিতা আক্তার ও লাবনী আক্তার এবং তিন নাতনি — মীম, রেশমা ও লামিয়া। তাঁরা সবাই পাশাপাশি কবরস্থানে শায়িত হয়েছেন।

ভয়াবহ দুর্ঘটনার বিবরণ

গত ৬ আগস্ট ভোরে প্রবাসী ছেলে বাহার উদ্দিনকে আনতে ঢাকার হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে যাচ্ছিলেন পরিবারের সদস্যরা। ফিরতি পথে মাইক্রোবাসটি নোয়াখালীর চন্দ্রগঞ্জ পূর্ব বাজারের কাছে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাশের খালে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই সাতজনের মৃত্যু হয়।

জানা গেছে, গাড়িটি প্রায় ৩০ মিটার গভীর খালে পড়ে যায়। চালক আকবর হোসেন দুর্ঘটনার পরপরই পালিয়ে যায়। এখন পর্যন্ত তাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।

পরিবারের আহাজারি থামছে না

৭ আগস্ট সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কাশারি বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানের পাশে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন স্বজনরা। কবিতা আক্তারের বড় বোন লিপি আক্তার কবরের পাশে দাঁড়িয়ে ডাকছিলেন তাঁর বোন ও ভাগ্নিকে, যেন শেষবারের মতো আদর করতে পারেন।

অন্যদিকে, নিহত লাবনী আক্তার ও তাঁর মেয়ে লামিয়ার শোকে ভেঙে পড়েছেন তাদের দাদা-দাদী, নানা-নানী। “আর কখনো মেয়েটা আসবে না, নাতনিকে কোলে নিতে পারবো না”—এই আর্তনাদে ভারী হয়ে উঠেছে চারপাশ।

নিহতদের জানাজা ও দাফন

একই পরিবারের সাত সদস্যের জানাজা একই সঙ্গে অনুষ্ঠিত হয় উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের জয়তারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে। জানাজায় শত শত মানুষ অংশ নেন। পরে সবাইকে পারিবারিক কবরস্থানে পাশাপাশি কবর দেওয়া হয়। কেবল মোরশেদা বেগমের মা ফয়জুন নেছা দাফন হয়েছেন তাঁর পিত্রালয় হাজিরপাড়ায়।

ঘুমিয়ে পড়া চালকই কি ভয়াবহ এই বিপর্যয়ের কারণ?

বেঁচে ফেরা স্বজনদের দাবি, চালক আকবর হোসেন ঘুমিয়ে পড়ায় দুর্ঘটনাটি ঘটে। এ বিষয়ে মোরশেদা বেগমের স্বামী আব্দুর রহিম বলেন, “একজন চালকের ঘুমের কারণে আমাদের পুরো পরিবার ধ্বংস হয়ে গেলো।” তিনি জানান, প্রবাসফেরত দুই ছেলে রুবেল ও রনি দেশে আসলেই চালকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে।

চন্দ্রগঞ্জ হাইওয়ে থানার ওসি মোবারক হোসেন বলেন, “চালক আকবর পলাতক। তাকে ধরতে আমাদের অভিযান চলছে। পরিবার মামলা না করলেও আমরাই মামলা করবো।”

একটি পরিবারের স্বপ্নচূর্ণ হওয়ার গল্প

এই দুর্ঘটনা শুধু সাতটি প্রাণ কেড়ে নেয়নি, কেড়ে নিয়েছে একটি পরিবারের সব হাসি, আনন্দ ও স্বপ্ন। যাঁরা আজ পাশাপাশি কবরস্থানে শুয়ে আছেন, তাঁরা ছিলেন একই ঘরের মানুষ — মা, পুত্রবধূ, নাতনি। কেবল একজন প্রবাসী ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরার আনন্দে যাচ্ছিলেন, ফিরলেন নিথর হয়ে।

কত প্রাণ গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে?

এমন দুর্ঘটনা বারবার ঘটছে, কিন্তু দায়ীদের বিচারের মুখোমুখি করার উদাহরণ খুবই কম। প্রশ্ন থেকে যায় — কবে এমন চালকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে? কবে প্রবাসীদের স্বপ্নভবনগুলো এইভাবে ধ্বংস হওয়া বন্ধ হবে?

এম আর এম – ০৭৪৮, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Advertisement
Back to top button