বিশ্ব

যুক্তরাষ্ট্রের শরণার্থীদের হাতকড়া পরিয়ে ব্রাজিলে ফেরত পাঠানো: তীব্র সমালোচনার মুখে ওয়াশিংটন

যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ব্রাজিলের শরণার্থীদের হাতকড়া পরিয়ে দেশে ফেরত পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে ব্রাজিলজুড়ে। এমনকি ব্রাজিলের বিচারবিষয়ক মন্ত্রী রিকার্ডো লেওয়ানডস্কি এবং দেশটির বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোও এ নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

ঘটনার বিবরণ

গত শনিবার একটি বিশেষ ফ্লাইটে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ব্রাজিলের ৮৮ জন শরণার্থী পাঠানো হয়। উড়োজাহাজে থাকা শরণার্থীদের প্রত্যেকের হাতে হাতকড়া পরানো হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। ফ্লাইটে আরও ছিলেন ১৬ জন মার্কিন নিরাপত্তাকর্মী এবং ৮ জন এয়ার ক্রু।

ফ্লাইটটির গন্তব্য ছিল ব্রাজিলের বেলো হরাইজনতে। কিন্তু যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এটি মিনাস গেরাইসে অবতরণ করে। সেখানেই ব্রাজিলের প্রশাসনের নজরে আসে শরণার্থীদের এই অবস্থা। ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পর ব্রাজিলের বিচারবিষয়ক মন্ত্রী বিষয়টি প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভাকে জানান।

ব্রাজিলের প্রতিক্রিয়া

ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টের হস্তক্ষেপে শরণার্থীদের সসম্মানে দেশের বিমানবাহিনীর উড়োজাহাজে তাদের নিজ নিজ রাজ্যে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় দেশটির বিরোধী রাজনৈতিক শিবির থেকে তীব্র সমালোচনা উঠে আসে। তাদের দাবি, শরণার্থীদের অপরাধীদের মতো দেখে তাদের সঙ্গে এমন আচরণ যুক্তরাষ্ট্রের মোটেও শোভা পায় না।

বিচারবিষয়ক মন্ত্রীর বক্তব্য

বিচারবিষয়ক মন্ত্রী রিকার্ডো লেওয়ানডস্কি যুক্তরাষ্ট্রের এমন ব্যবহারের কঠোর নিন্দা করেছেন। তিনি বলেন, “শরণার্থীদের সঙ্গে এমন আচরণ মানবাধিকারের লঙ্ঘন। এ ধরনের ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।”

পূর্বের চুক্তি এবং বর্তমান পরিস্থিতি

২০১৭ সালে ব্রাজিল এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি হয়, যার আওতায় যুক্তরাষ্ট্র ব্রাজিলের শরণার্থীদের ফেরত পাঠানোর সুযোগ পায়। তবে তখন এমন অপমানজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। এবার শরণার্থীদের হাতকড়া পরিয়ে ফেরত পাঠানো নিয়ে ব্রাজিলের সরকারসহ সাধারণ মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়েছে।

বিরোধী দলের কড়া সমালোচনা

বিরোধী দলের এক মুখপাত্র বলেন, “শরণার্থীরা অপরাধী নয়। তারা নির্যাতন ও যুদ্ধবিধ্বস্ত পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় চেয়েছিল। তাদের সঙ্গে এমন আচরণ মানবতার পরিপন্থী।”

মার্কিন প্রশাসনের অবস্থান

এখনো এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি পাওয়া যায়নি। তবে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন যুক্তরাষ্ট্রের এমন আচরণকে আন্তর্জাতিক আইন এবং মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন হিসেবে উল্লেখ করেছে।

কী হতে পারে পরবর্তী পদক্ষেপ?

ব্রাজিলের সরকার ইতিমধ্যেই এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার হুমকি দিয়েছে। শরণার্থীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এবং তাদের সঙ্গে মানবিক আচরণের আহ্বান জানিয়েছে ব্রাজিল।

যুক্তরাষ্ট্রের শরণার্থীদের ফেরত পাঠানোর ঘটনা ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। ব্রাজিল এবং যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্কেও এর প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। মানবাধিকারের এই ইস্যু কেবল ব্রাজিল নয়, বিশ্বব্যাপী আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে। শরণার্থীদের সঙ্গে কীভাবে আচরণ করা উচিত, তা নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে এই ঘটনা।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button