জাতিসংঘে ফিরছেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আল-শারাআ, ৫৮ বছরের বিরতির পর

১৯৬৭ সালের পর প্রথমবারের মতো সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে চলেছেন। জাতিসংঘের ৮০তম সাধারণ অধিবেশনে অংশগ্রহণের জন্য সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমাদ হুসাইন আল-শারাআ আল-জুলানী নিউইয়র্কের উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন। এই উচ্চ পর্যায়ের সফর ২২ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়ে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে এবং ‘হাই-লেভেল উইক’ হিসেবে পরিচিত।
এই সফরে প্রেসিডেন্ট আহমাদ শারাআর সঙ্গে থাকবেন পররাষ্ট্র ও প্রবাসী বিষয়ক মন্ত্রী আসআদ হাসান আল-শিবানি এবং উচ্চপর্যায়ের একটি কূটনৈতিক প্রতিনিধি দল। তারা সাধারণ অধিবেশনের পাশাপাশি বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক বৈঠক, বৈশ্বিক আলোচনায় অংশ নেবেন এবং আন্তর্জাতিক মিডিয়ার নজরেও থাকবেন।
১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েলি যুদ্ধের পর থেকে কোনো সিরীয় প্রেসিডেন্ট জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে সরাসরি অংশ নিচ্ছেন না। তাই এটি সিরিয়ার ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক, যা আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিরিয়ার বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থার সঙ্গে এই সফরের timing আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
সাধারণ অধিবেশনে সিরিয়ার অংশগ্রহণের গুরুত্ব
সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের জাতিসংঘে অংশগ্রহণ কেবল কূটনৈতিক মহলে নয়, সাধারণ জনগণের মধ্যেও বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে। এই সফরের মাধ্যমে সিরিয়া আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে। বিশেষ করে সিরিয়ার রাজনৈতিক পুনর্গঠন, শান্তি প্রক্রিয়া এবং পুনর্বাসনমূলক উদ্যোগ নিয়ে তারা আলোচনার আশা করছেন।
পররাষ্ট্র ও কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, প্রেসিডেন্ট আহমাদ শারাআর সরাসরি উপস্থিতি সিরিয়ার আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তির উন্নয়নে সহায়ক হবে। এছাড়া, তারা বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও প্রতিনিধিদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসবেন, যা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।
দ্বিপাক্ষিক বৈঠক ও কূটনৈতিক আলোচনা
প্রেসিডেন্ট আহমাদ শারাআ এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী আল-শিবানি শুধুমাত্র সাধারণ অধিবেশনে অংশ নেবেন না। তারা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক ও আলোচনায় যোগ দেবেন, যার মধ্যে রয়েছে নিরাপত্তা, অর্থনীতি, মানবাধিকার, পুনর্বাসন ও জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যু। এছাড়া, তারা জাতিসংঘে উপস্থিত দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রধান এবং উচ্চ পর্যায়ের কূটনৈতিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন।
এই দ্বিপাক্ষিক বৈঠকগুলোতে সিরিয়ার রাজনৈতিক পুনর্গঠন, যুদ্ধপরবর্তী পুনর্বাসন, এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সিরিয়ার এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক।
সিরিয়ার কূটনৈতিক ইতিহাসে এই মুহূর্তের গুরুত্ব
১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধে পর থেকে সিরিয়ার প্রেসিডেন্টদের জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে সরাসরি অংশগ্রহণ করা হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে সিরিয়ার কূটনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রধানত রাষ্ট্রদূত বা পররাষ্ট্র মন্ত্রীর মাধ্যমে পরিচালিত হতো। তাই এই সফর কেবল সিরিয়ার জন্য নয়, পুরো মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রেসিডেন্ট আহমাদ শারাআর অংশগ্রহণ মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রক্রিয়া, আন্তর্জাতিক সমঝোতা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রচেষ্টায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। এছাড়া, এটি সিরিয়ার আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তির পুনর্গঠনে সহায়ক হবে।
‘হাই-লেভেল উইক’ কি?
জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনটি প্রতি বছর নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত হয়। সাধারণ অধিবেশনের এই বিশেষ সপ্তাহকে ‘হাই-লেভেল উইক’ বলা হয়, যখন বিশ্বের প্রায় সব রাষ্ট্রপ্রধান, প্রধানমন্ত্রী ও উচ্চ পর্যায়ের কূটনীতিবিদরা একত্রিত হন। এই সপ্তাহে সাধারণ অধিবেশনের পাশাপাশি বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক বৈঠক, সেমিনার, ও আন্তর্জাতিক আলোচনার আয়োজন করা হয়।
সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের অংশগ্রহণ এই বছরের হাই-লেভেল উইককে আরও গুরুত্বপূর্ণ করেছে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়া, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলোর পুনর্বাসন, এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত আলোচনা এখানেই কেন্দ্রীভূত হবে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের জাতিসংঘে অংশগ্রহণ নিয়ে বিভিন্ন দেশ ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, এবং ইউরোপীয় দেশগুলো এই পদক্ষেপকে সিরিয়ার আন্তর্জাতিক পুনঃঅভ্যুত্থানের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক হিসেবে দেখছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এটি সিরিয়ার কূটনৈতিক নীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন সুযোগ তৈরি করবে।
সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ প্রস্তুতি
প্রেসিডেন্ট আহমাদ শারাআর সফরের জন্য সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ প্রশাসনও প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট কূটনৈতিক বিভাগ উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দলকে নির্দিষ্ট দায়িত্ব দিয়েছে। নিরাপত্তা, ভ্রমণ, এবং বৈঠক সম্পর্কিত সব আয়োজন সুনিশ্চিত করার জন্য বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছে।
ভবিষ্যৎ প্রভাব
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, প্রেসিডেন্ট আহমাদ শারাআর জাতিসংঘ সফর সিরিয়ার আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। এটি মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রক্রিয়া, অর্থনৈতিক সহযোগিতা, এবং রাজনৈতিক পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এছাড়া, এটি সিরিয়ার জনগণের মধ্যে আন্তর্জাতিক মঞ্চে তাদের দেশের অবস্থান সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করবে।
সারসংক্ষেপে বলা যায়, ১৯৬৭ সালের পর প্রথমবারের মতো সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে অংশগ্রহণ কেবল সিরিয়ার জন্য নয়, সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য ও আন্তর্জাতিক কূটনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এই সফরের মাধ্যমে সিরিয়া আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপনে এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ইস্যুতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
MAH – 12754, Signalbd.com