বিশ্ব

দক্ষিণ কোরিয়ায় উড়োজাহাজ বিধ্বস্তে ১৭৯ জন নিহত: তদন্তে পাখির ধাক্কার নতুন তথ্য

গত ডিসেম্বরে দক্ষিণ কোরিয়ার মুয়ান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভয়াবহ উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় ১৭৯ জন যাত্রীর মৃত্যু হয়। বোয়িং ৭৩৭-৮০০ মডেলের উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হওয়ার কারণ নিয়ে তদন্ত চালাচ্ছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, উড়োজাহাজটির পাখায় পাখির পালক এবং রক্তের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এটি একটি পরিযায়ী পাখির ধাক্কায় দুর্ঘটনার শিকার হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

পাখির পালকের সন্ধান

সোমবার প্রকাশিত প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনে জানানো হয়, বিধ্বস্ত হওয়া উড়োজাহাজের দুটি পাখাতেই পাখির পালক ও রক্ত পাওয়া গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এগুলো বৈকাল তিলিহাঁসের (Baikal Teal) পালক, যা একটি পরিযায়ী পাখি। দলবদ্ধ হয়ে এই পাখি সাধারণত এক দেশ থেকে অন্য দেশে উড়ে যায়।

ঘটনার পটভূমি

২০২৫ সালের ২৯ ডিসেম্বর, থাইল্যান্ডের ব্যাংকক থেকে আসা জিজু এয়ারের ফ্লাইটটি মুয়ান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের সময় দুর্ঘটনার শিকার হয়। উড়োজাহাজটিতে ১৮১ জন যাত্রী এবং ক্রু ছিলেন। ভয়াবহ এই দুর্ঘটনায় মাত্র ২ জন জীবিত উদ্ধার হন, বাকিরা সবাই প্রাণ হারান।

উড়োজাহাজটি রানওয়ে থেকে ছিটকে গিয়ে একটি দেয়ালের সঙ্গে প্রচণ্ড বেগে ধাক্কা খায়। এতে সঙ্গে সঙ্গে বড় বিস্ফোরণ ঘটে। আগুন এবং ধোঁয়ার কুণ্ডুলি আকাশ ছেয়ে ফেলে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, উড়োজাহাজটি রানওয়ে দিয়ে দ্রুতগতিতে এগোচ্ছিল। কিন্তু কোনো ল্যান্ডিং গিয়ার ঠিকভাবে কাজ করছিল না।

তদন্তে নতুন তথ্য

দক্ষিণ কোরিয়ার বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (CAAK) জানিয়েছে, বিধ্বস্ত হওয়া উড়োজাহাজটির ইঞ্জিন, কাঠামো এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়ে আরও তদন্ত করা হবে। বিশেষত, বোয়িং ৭৩৭-৮০০ মডেলের উড়োজাহাজগুলোর ল্যান্ডিং গিয়ার এবং ইঞ্জিন নিয়ে বিস্তারিত পরীক্ষা করা হবে।

নিয়ন্ত্রণ টাওয়ার থেকে আগে থেকেই পাখির ধাক্কা লাগার বিষয়ে সতর্কতা জারি করা হয়েছিল। তবে এই সতর্কতা সত্ত্বেও দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হয়নি। তদন্তকারীরা এখন নিশ্চিত হতে চাইছেন, পাখির আঘাতই এই বিধ্বস্তের প্রধান কারণ কি না।

দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে বিতর্ক

প্রাথমিকভাবে জানানো হয়েছিল, উড়োজাহাজটি রানওয়ের শেষ প্রান্তে থাকা একটি দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে বিধ্বস্ত হয়। কিন্তু এখন পাখির ধাক্কার বিষয়টি উঠে আসায় নতুন করে প্রশ্ন উঠছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বড় পরিযায়ী পাখির সঙ্গে আঘাত পেলে উড়োজাহাজের ইঞ্জিন বা পাখায় মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে, যা দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

উড়োজাহাজের নিরাপত্তা ও পাখির হুমকি

আকাশপথে যাত্রার সময় পাখির আঘাত একটি গুরুত্বপূর্ণ ঝুঁকি। বড় পাখি উড়োজাহাজের ইঞ্জিন বা পাখায় আঘাত করলে সেটি উড়োজাহাজের ভারসাম্য নষ্ট করে দিতে পারে। দক্ষিণ কোরিয়ার এই দুর্ঘটনা এ ধরনের হুমকির প্রতি আরও সতর্কতা জোরদারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে।

সতর্কতা ও ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ

বিশ্বজুড়ে উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এবং বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ পাখির হুমকি এড়াতে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং নতুন পদ্ধতি গ্রহণের কথা ভাবছে। দক্ষিণ কোরিয়ার এই দুর্ঘটনার পর বিশেষজ্ঞরা বিমানবন্দরের আশপাশের পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ এবং পাখি প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দিচ্ছেন।

নিহতদের পরিবারে শোকের ছায়া

১৭৯ জনের প্রাণহানিতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে দক্ষিণ কোরিয়া এবং থাইল্যান্ডে। নিহতদের পরিবার ও স্বজনেরা এখনো দুর্ঘটনার সঠিক কারণ জানার অপেক্ষায় আছেন।

উড়োজাহাজ দুর্ঘটনার পেছনে পাখির আঘাত একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে উঠে আসছে। দক্ষিণ কোরিয়ার এই ট্র্যাজেডি ভবিষ্যতে আকাশপথে যাত্রার নিরাপত্তা আরও উন্নত করার গুরুত্ব বুঝিয়ে দিয়েছে। তদন্ত শেষ হলে দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ এবং এ ধরনের ঘটনা এড়ানোর উপায় নিয়ে আরও সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button