ইসরায়েলি হামলাকে ‘কাপুরুষ’ বলে নিন্দা কাতারের

কাতারের রাজধানী দোহায় হামাসের শীর্ষ নেতাদের লক্ষ্য করে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলাকে ‘কাপুরুষোচিত’ বলে নিন্দা জানিয়েছে কাতার। দেশটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ ধরনের আক্রমণ আন্তর্জাতিক আইন ও নীতিমালার স্পষ্ট লঙ্ঘন এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি। একই সঙ্গে কাতার সরকার জানিয়েছে, তারা নিজেদের নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে।
হামলার বিস্তারিত ও কাতারের প্রতিক্রিয়া
কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, ইসরায়েলি বাহিনী সম্প্রতি দোহায় হামাসের কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। কাতারের মতে, এই হামলা কেবল আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাই নষ্ট করছে না, বরং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনেরও মারাত্মক লঙ্ঘন।
বিবৃতিতে বলা হয়, “এই অপরাধমূলক হামলা দোহায় বসবাসরত মানুষের নিরাপত্তার ওপর সরাসরি হুমকি তৈরি করেছে। ইসরায়েল এমন পদক্ষেপের মাধ্যমে কেবল নিজেদের নৈতিক দেউলিয়াত্ব প্রমাণ করেছে।”
ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলমান সংঘাত নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন স্থানে ইসরায়েলি অভিযান বেড়েছে, বিশেষত হামাসের নেতাদের টার্গেট করে। এর আগে গাজা উপত্যকায় একাধিকবার এ ধরনের হামলা চালানো হলেও এবার দোহায় ঘটনার পুনরাবৃত্তি কাতারের কূটনৈতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
কাতার বরাবরই ফিলিস্তিনের অন্যতম সমর্থক দেশ হিসেবে পরিচিত। দেশটি দীর্ঘদিন ধরে হামাসের রাজনৈতিক ও মানবিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত। ফলে দোহায় এই ধরনের হামলা অনেকের কাছে কূটনৈতিক সীমানা লঙ্ঘনের শামিল।
প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
এই হামলার পর কাতারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, তারা তাৎক্ষণিকভাবে জরুরি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। রাজধানী দোহায় অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে এবং সিভিল ডিফেন্সকে উচ্চ সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে।
কাতার সরকার বলছে, তারা দেশের সার্বভৌমত্বে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ সহ্য করবে না। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশও এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিশেষ করে আরব লিগ এ বিষয়ে জরুরি বৈঠক আহ্বান করতে পারে বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে।
আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ
কাতারের দাবি, ইসরায়েলি হামলা আন্তর্জাতিক আইন, বিশেষত জাতিসংঘ ঘোষিত মানবিক আইন স্পষ্টভাবে ভঙ্গ করেছে। কোনো সার্বভৌম রাষ্ট্রের ভূখণ্ডে অনুমতি ছাড়া হামলা চালানো আন্তর্জাতিকভাবে বৈরী পদক্ষেপ হিসেবে গণ্য হয়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ধরনের ঘটনা আঞ্চলিক শান্তি প্রক্রিয়া ভেঙে দিতে পারে এবং মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা আরও বাড়াতে পারে।
বিশেষজ্ঞ ও বিশ্লেষকদের মতামত
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কাতারের মতো কূটনৈতিকভাবে প্রভাবশালী একটি দেশের ওপর সরাসরি হামলা চালানো মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে বড় ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে। তারা বলছেন, “কাতার শুধু একটি দেশ নয়, বরং পুরো আরব বিশ্বের কূটনৈতিক সংলাপের কেন্দ্র। সেখানে হামলা মানে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকে চ্যালেঞ্জ করা।”
মানবাধিকার সংস্থাগুলোও এ ধরনের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছে, বেসামরিক মানুষদের ঝুঁকির মুখে ফেলে কোনো রাষ্ট্রই রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জন করতে পারে না।
সংক্ষিপ্তসার
দোহায় ইসরায়েলি হামলার ঘটনায় কাতারের কঠোর প্রতিক্রিয়া মধ্যপ্রাচ্যে নতুন উত্তেজনা তৈরি করেছে। আন্তর্জাতিক মহল এখন নজর রাখছে কাতার ও ইসরায়েলের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্কের ভবিষ্যতের দিকে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এ ধরনের ঘটনা যদি অব্যাহত থাকে তবে আঞ্চলিক সংঘাত আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে।
এম আর এম – ১২৫১,Signalbd.com