নেপালে বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালিয়েছে পুলিশ, নিহত অন্তত ১৪ জন

নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে দুর্নীতি বিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেওয়া তরুণদের ওপর পুলিশ গুলি চালিয়েছে। এতে অন্তত ১৪ জন নিহত এবং ৭০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে। আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ এবং সরকারের দুর্নীতির প্রতিবাদে এই বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন হাজারো তরুণ।
কিভাবে ঘটল সংঘর্ষ
সোমবার দুপুরে বিক্ষোভকারীরা পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে কাঠমান্ডুর পার্লামেন্ট প্রাঙ্গণে প্রবেশ করেন। পুলিশ প্রথমে কাঁদানে গ্যাস, জলকামান ও রাবার বুলেট ব্যবহার করে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। কিন্তু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় একপর্যায়ে গুলি চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, পুলিশের গুলিতে সরাসরি কয়েকজন বিক্ষোভকারী মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।
হাসপাতালের তথ্য ও নিহতের সংখ্যা
ন্যাশনাল ট্রমা সেন্টারের চিকিৎসক দ্বীপেন্দ্র পান্ডে জানিয়েছেন, অন্তত সাতজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন এবং আরও ১০ জন গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন। এভারেস্ট হাসপাতালের কর্মকর্তা অনীল অধিকারী জানান, তাঁদের হাসপাতালে তিনজন মারা গেছেন। সিভিল হাসপাতালের পরিচালক মোহন চন্দ্র রেজমিও দুইজন নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এছাড়া আরও কয়েকটি হাসপাতালে গুরুতর আহতদের ভর্তি করা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে বেশিরভাগই তরুণ।
কেন এই বিক্ষোভ
বিক্ষোভের মূল দাবি ছিল দুর্নীতির অবসান এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পুনরায় চালু করা। সরকার সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে, যার ফলে নেপালের তরুণ প্রজন্ম ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তারা মনে করেন, এ পদক্ষেপ মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ। পাশাপাশি সরকারের নানা আর্থিক কেলেঙ্কারি নিয়েও দীর্ঘদিন ধরে অসন্তোষ জমে উঠেছে।
সরকারের অবস্থান
সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আত্মরক্ষার্থে গুলি চালাতে বাধ্য হয়। তাদের দাবি, বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছোড়ে এবং সরকারি ভবনে হামলা চালানোর চেষ্টা করে। তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে গুলি চালানো অমানবিক এবং অযৌক্তিক।
সামরিক বাহিনী ও কারফিউ
সংঘর্ষের পরপরই সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয় এবং কাঠমান্ডুর বড় অংশে কারফিউ জারি করা হয়। বিশেষ করে বানেশ্বর এলাকা এবং পার্লামেন্ট ভবনের আশপাশে সাধারণ মানুষের চলাফেরা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। শহরের প্রধান সড়কগুলোতে টহল দিচ্ছে সেনা ও পুলিশ যৌথ বাহিনী।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
নেপালের এই ঘটনার প্রতি উদ্বেগ জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো। তারা বলছে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা গণতন্ত্রের অন্যতম মৌলিক অধিকার, সেটি দমন করতে গুলি চালানো অনভিপ্রেত। দক্ষিণ এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশও পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নেপালের রাজনৈতিক অস্থিরতার নতুন অধ্যায় শুরু হতে পারে এই ঘটনার মধ্য দিয়ে। তরুণদের নেতৃত্বে যেভাবে আন্দোলন গড়ে উঠছে, তা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাঁদের মতে, সরকার যদি দ্রুত সংলাপ ও সমাধানের পথে না হাঁটে, তাহলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।
নেপালের তরুণ প্রজন্মের আন্দোলন এখন সহিংস রূপ নিয়েছে। পুলিশের গুলি এবং বহু প্রাণহানি দেশজুড়ে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। এখন প্রশ্ন হলো, সরকার কি সংলাপের পথে এগোবে নাকি কঠোর অবস্থানেই অটল থাকবে। অনেকের মতে, এ ঘটনার ফলাফল নেপালের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে।
এম আর এম – ১২৪৪,Signalbd.com