
দক্ষিণ এশিয়ার পাহাড়ি দেশ নেপাল ভয়াবহ রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ করা এবং সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে তরুণদের নেতৃত্বে শুরু হওয়া বিক্ষোভ আজ রূপ নিয়েছে সহিংসতায়। বিক্ষোভকারীরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে পার্লামেন্ট ভবনে প্রবেশ করেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনা মোতায়েন ও কারফিউ জারি করা হয়েছে।
কাঠমান্ডু জেলা প্রশাসন দুপুর ১২টা ৩০ মিনিট থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বনেশ্বর ও আশপাশের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় কারফিউ ঘোষণা করেছে। এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, অন্তত একজন নিহত এবং ৮০ জনেরও বেশি আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে পুলিশের সদস্যও রয়েছেন।
কীভাবে শুরু হলো বিক্ষোভ?
নেপালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, টিকটক, ইনস্টাগ্রাম এবং টুইটার (এক্স) বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। আনুষ্ঠানিকভাবে বলা হয়, ‘সাইবার সিকিউরিটি ও ভুয়া তথ্য নিয়ন্ত্রণের জন্য’ এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু বিরোধী দল ও নাগরিক সমাজের দাবি, এটি তরুণদের কণ্ঠরোধের কৌশল।
সরকারের এই সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর থেকেই রাজধানী কাঠমান্ডুতে শিক্ষার্থী ও তরুণদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। তারা রাস্তায় নেমে আসে এবং সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তোলে।
আজকের ভয়াবহ ঘটনা: পার্লামেন্টে জনতার হামলা
আজ সোমবার বিক্ষোভকারীরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে পার্লামেন্ট ভবনে ঢুকে পড়ে। তারা স্লোগান দেয়, পতাকা হাতে ভবনের ভেতরে প্রবেশ করে এবং কিছু আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার গ্যাস ও জল কামান ব্যবহার করে।
স্থানীয় গণমাধ্যম দ্য হিমালয়ান টাইমস জানিয়েছে, বিক্ষোভকারীদের মধ্যে অনেক তরুণ ছিলেন যারা আগে থেকেই সামাজিক মাধ্যমে সরকারবিরোধী প্রচার চালাচ্ছিলেন।
কারফিউয়ের আওতাধীন এলাকা
কাঠমান্ডুর জেলা প্রশাসন যে কারফিউ জারি করেছে, তাতে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা অন্তর্ভুক্ত। ঘোষণার মধ্যে বলা হয়েছে:
- পশ্চিমে: নিউ বানেশ্বর চৌক থেকে বিজুলিবাজার সেতু (এভারেস্ট হোটেল সংলগ্ন) পর্যন্ত।
- পূর্বে: টিঙ্কুনে চৌক পর্যন্ত (মিন ভবন ও শান্তিনগর হয়ে)।
- উত্তরে: আইপ্লেক্স মল সংলগ্ন রত্ন রাজ্য সেকেন্ডারি স্কুল পর্যন্ত।
- দক্ষিণে: শঙ্খমূল সেতু পর্যন্ত।
এ ছাড়া জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় সেনা বাহিনীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
সরকারের বক্তব্য
নেপালের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, “সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মাধ্যমে বিদেশি প্রভাব ও ভুয়া তথ্যের বিস্তার ঠেকাতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আমরা নাগরিকদের শান্ত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।”
তবে বিরোধী দল সরকারের এই অবস্থানকে গণতন্ত্রবিরোধী আখ্যা দিয়েছে। তারা বলছে, সরকারের দুর্নীতি ও ব্যর্থতা আড়াল করতেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
জনগণের প্রতিক্রিয়া
অনেক সাধারণ মানুষ মনে করছেন, “সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করে জনগণের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে।” শিক্ষার্থী সংগঠনগুলোও এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে।
নেপালের রাজধানীর রাস্তায় দেখা গেছে—বিক্ষোভকারীরা স্লোগান দিচ্ছে, “ডিজিটাল স্বাধীনতা চাই,” “দুর্নীতি বন্ধ করো।”
বিশেষজ্ঞ বিশ্লেষণ: কেন এত বড় সংকট?
বিশেষজ্ঞদের মতে, নেপালে দীর্ঘদিন ধরেই রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা চলছে। একদিকে অর্থনৈতিক সংকট, অন্যদিকে দুর্নীতি ও বেকারত্ব সমস্যায় তরুণরা ক্ষুব্ধ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ছিল তাদের মত প্রকাশের প্রধান মাধ্যম। তাই এটি নিষিদ্ধ করায় ক্ষোভ বিস্ফোরিত হয়েছে।
একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, “নেপাল সরকার তরুণদের অসন্তোষকে অবমূল্যায়ন করেছে। এখন যেভাবে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে, তাতে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।”
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া
টুইটার (এক্স) এবং ইনস্টাগ্রামে #SaveNepal, #DigitalFreedom, #StopCensorship হ্যাশট্যাগ ট্রেন্ড করছে। যদিও দেশজুড়ে প্ল্যাটফর্মগুলো বন্ধ, তবুও VPN ব্যবহার করে অনেকেই সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
আগামী দিনগুলোতে কী হতে পারে?
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আশঙ্কা করছে, যদি সরকার কোনো সমঝোতায় না আসে, তবে বিক্ষোভ আরও বিস্তৃত হতে পারে। এতে অর্থনীতি ও পর্যটন খাত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
MAH – 12702, Signalbd.com