বিশ্ব

সহকর্মীর সঙ্গে প্রেম, নেসলের সিইও বরখাস্ত

Advertisement

বহুজাতিক খাদ্য ও পানীয় প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান নেসলে হঠাৎ করেই তাদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) লরেন্ট ফ্রেইক্সকে পদচ্যুত করেছে। অভিযোগ, তিনি নিজেরই অধস্তন এক সহকর্মীর সঙ্গে গোপন প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন। কোম্পানির আচরণবিধি ভঙ্গ করার দায়ে সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) তাৎক্ষণিকভাবে এই সিদ্ধান্ত নেয় নেসলে কর্তৃপক্ষ।

কীভাবে প্রকাশ পেল সম্পর্কের ঘটনা

কোম্পানির ভেতরে গঠিত একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি বিষয়টি খতিয়ে দেখে। কমিটির অনুসন্ধানে লরেন্ট ফ্রেইক্সের সঙ্গে তার এক অধীনস্থ নারী সহকর্মীর দীর্ঘদিনের সম্পর্কের প্রমাণ পাওয়া যায়। নেসলের ব্যবসায়িক নীতিমালা অনুযায়ী এ ধরনের সম্পর্ক স্পষ্টতই স্বার্থের সংঘাত তৈরি করে এবং প্রতিষ্ঠানটির সুনামকে ঝুঁকিতে ফেলে। এ কারণেই বোর্ড অব ডিরেক্টরস দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে তাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়।

নেসলের আচরণবিধি ও নীতিমালা

নেসলে বিশ্বজুড়ে কার্যক্রম চালায় প্রায় ১৮০টিরও বেশি দেশে। প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব আচরণবিধি আছে, যেখানে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে— কর্মক্ষেত্রে উচ্চপর্যায়ের কোনো কর্মকর্তা তার অধীনস্থ কর্মীর সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারবেন না। এর মাধ্যমে পক্ষপাতিত্ব, অস্বচ্ছতা এবং পেশাদারিত্বের ঘাটতি তৈরি হয়। লরেন্ট ফ্রেইক্সের ক্ষেত্রে সেই নীতিমালা ভঙ্গ হয়েছে বলে বোর্ড নিশ্চিত হয়।

নতুন সিইও হিসেবে নিয়োগ পেলেন ফিলিপ নাভ্রাতিল

ফ্রেইক্সের বরখাস্তের পর নেসলে তাৎক্ষণিকভাবে নতুন নেতৃত্ব ঘোষণাও দিয়েছে। নেসপ্রেসো কফি বিভাগের প্রধান ফিলিপ নাভ্রাতিলকে নতুন সিইও হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি বহুদিন ধরে নেসলের বিভিন্ন বিভাগে কাজ করছেন এবং ব্যবসায়িক কৌশলে তার অভিজ্ঞতা রয়েছে। বোর্ড আশা করছে, তার নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠানটি নতুন করে স্থিতিশীলতা ফিরে পাবে।

লরেন্ট ফ্রেইক্স: সংক্ষিপ্ত পটভূমি

লরেন্ট ফ্রেইক্স নেসলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন প্রায় তিন দশক। গত বছর তিনি সিইও হিসেবে দায়িত্ব নেন। এর আগে তিনি ইউরোপ, লাতিন আমেরিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে কোম্পানির শাখা পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তার নেতৃত্বে বেশ কিছু সফলতা এলেও ব্যক্তিগত আচরণবিধি ভঙ্গের দায়ে তার পুরো ক্যারিয়ার এখন প্রশ্নের মুখে পড়েছে।

প্রতিষ্ঠানের আর্থিক চ্যালেঞ্জ

উল্লেখ্য, সম্প্রতি নেসলে আর্থিক চাপের মুখে রয়েছে। চলতি বছরের জুলাই মাসে প্রকাশিত রিপোর্টে দেখা যায়, ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে কোম্পানির মুনাফা কমেছে ১০ দশমিক ৩ শতাংশ। বিশেষজ্ঞরা এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন— চীনে ক্রেতাদের ব্যয় ধীরগতির হওয়া, কফি ও কোকোর দাম বৃদ্ধি এবং বৈশ্বিক বাজারে অনিশ্চয়তা। এর মধ্যেই শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃত্ব পরিবর্তন প্রতিষ্ঠানটির জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে বলে বিশ্লেষকদের মত।

কর্মীদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া

সিইও বরখাস্তের ঘটনাটি নেসলের ভেতরে কর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। একদল মনে করছে, কোম্পানি স্বচ্ছতা ও নৈতিকতার প্রশ্নে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অন্যদিকে কিছু কর্মী মনে করছেন, এত দীর্ঘদিনের সাফল্যের পর হঠাৎ এভাবে পদচ্যুতি একটি বড় ধাক্কা। তবে প্রতিষ্ঠানটির ভাবমূর্তি রক্ষায় শীর্ষ নেতৃত্বের এই সিদ্ধান্তকে অধিকাংশই সমর্থন জানাচ্ছে।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচনায় নেসলে

বিশ্বজুড়ে নেসলের কর্মকাণ্ড থাকায় এ সিদ্ধান্ত দ্রুত আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে। বিশেষ করে বড় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোতে পেশাদার আচরণ ও ব্যক্তিগত সম্পর্কের সীমারেখা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটি অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্যও সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করবে।

বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ

অর্থনীতি ও কর্পোরেট গভর্নেন্স বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বড় কোম্পানিগুলোতে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে নৈতিক মানদণ্ড অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একজন সিইও যদি নিজেই নীতিমালা ভঙ্গ করেন, তবে পুরো প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ঝুঁকিতে পড়ে। এছাড়া বিনিয়োগকারীরাও এতে আস্থা হারাতে পারেন। নেসলে যে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে, সেটি তাদের বাজারে টিকে থাকার জন্য জরুরি ছিল।

পরিশেষে

সহকর্মীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ায় নেসলের সিইও লরেন্ট ফ্রেইক্সকে বরখাস্তের ঘটনা শুধু একটি কর্পোরেট কেলেঙ্কারিই নয়, বরং বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ নৈতিক মানদণ্ডের গুরুত্বও তুলে ধরেছে। নতুন সিইও ফিলিপ নাভ্রাতিলের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠানটি কতটা স্থিতিশীলতা ফিরে পাবে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে এ ঘটনাটি নিঃসন্দেহে বিশ্বব্যাপী কর্পোরেট জগতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে থাকবে।

এম আর এম – ১১৪৫, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button