বিশ্ব

নৌকায় প্রশান্ত মহাসাগর পাড়ি দিয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়েছেন তিন সহোদর ভাই

স্কটল্যান্ডের তিন সহোদর ভাই ইওয়ান, জেমি এবং ল্যাচলান ম্যাকলিন পেরু থেকে অস্ট্রেলিয়ার কেয়ার্নস পর্যন্ত প্রশান্ত মহাসাগর পাড়ি দিয়ে নতুন বিশ্ব রেকর্ড স্থাপন করেছেন। মাত্র ১৩৯ দিনে তারা প্রায় ৯ হাজার মাইল সাগরপথ সম্পন্ন করেছেন।

অস্ট্রেলিয়ার কেয়ার্নসে পৌঁছানোর পর ভাই তিনজন উদযাপন করেছেন এবং পরিবার ও সমর্থকদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করেছেন। এই যাত্রা তাদের জীবনের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং কাজ ছিল, যা তারা একে অপরের সঙ্গ ছাড়া কখনও কল্পনাও করতে পারতেন না।

রোজ এমিলি নৌকা ও যাত্রাপথ

তিন ভাই তাদের নিজস্ব তৈরি নৌকা ‘রোজ এমিলি’ নিয়ে সাগরজয় শুরু করেন। যাত্রাপথে তারা প্রচণ্ড ঝড়, অসুস্থতা এবং বিপজ্জনক ঢেউয়ের মুখোমুখি হন। এক পর্যায়ে ল্যাচলান সাগরে পড়ে যান, তবে সমুদ্রপথে সমস্ত চ্যালেঞ্জ সাফল্যের সঙ্গে মোকাবিলা করেন।

তিন ভাইকে সমর্থন জানাতে পরিবার এবং ভক্তরা কেয়ার্নস তটে উপস্থিত ছিলেন। তিন ভাই স্বাগতমের সময় ব্যাগপাইপ বাজিয়েছেন এবং স্কটল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাজ্যের পতাকা উড়িয়েছেন।

রেকর্ড এবং পূর্ববর্তী অভিযাত্রা

এই যাত্রায় তারা রাশিয়ার অভিযাত্রী ফেদর কোন্যুখভের ২০১৪ সালের রেকর্ড ভেঙেছেন, যিনি এককভাবে চিলি থেকে অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত পাড়ি দিয়েছিলেন। এর আগে, ২০২০ সালে তারা ৩৫ দিনে আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়ে তিনটি রেকর্ড স্থাপন করেছিলেন।

তাদের নতুন রেকর্ড শুধু গৌরবজনক নয়, বরং বিশ্ব মহাসাগরে মানুষের সাহসিকতা ও ধৈর্যের পরিচয়ও বহন করে।

দাতব্য কার্যক্রম এবং সমাজসেবা

তিন ভাই শুধু রেকর্ড গড়াই লক্ষ্য করেননি। ‘ম্যাকলিন ফাউন্ডেশন’ নামের দাতব্য সংস্থার মাধ্যমে তারা মাদাগাস্কারে নিরাপদ পানির জন্য অর্থ সংগ্রহ করছেন। এই অভিযানের মাধ্যমে তারা ১০ লাখের বেশি পাউন্ড সংগ্রহের লক্ষ্য নিয়েছেন, যা ৪০ হাজারের বেশি মানুষের জন্য বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ সম্ভব করবে। ইতিমধ্যেই তারা প্রায় ৮৫১ হাজার পাউন্ড সংগ্রহ করেছেন।

প্রতিক্রিয়া এবং মানবিক দিক

তিন ভাইয়ের এই অভিযান আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এবং সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। তাদের সাহসিকতা এবং কঠোর পরিশ্রম মানুষকে অনুপ্রাণিত করছে। ভক্তরা তাদের স্বাগত জানিয়েছেন এবং তাদের উদ্যোগকে মানবিক কার্যক্রম হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন।

ইওয়ান এই অভিযানের মুহূর্তে রসিকতার ছলে একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন, যেখানে তিনি বলেন, ‘তোমাদের কাছে পিৎজা আর বিয়ার আছে তো?’ এর মাধ্যমে তিনি মানুষের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করেছেন এবং যাত্রার কষ্ট ও আনন্দ উভয়ই ভাগাভাগি করেছেন।

বিশ্লেষণ

বিশ্ব মহাসাগরে ১৩৯ দিনে এত বড় অভিযান সম্পন্ন করা বিরল। এটি কেবল রেকর্ড গড়ার দিক দিয়ে নয়, বরং মানুষের সাহস, দলগত সহযোগিতা এবং দৃঢ় সংকল্পের চূড়ান্ত উদাহরণ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের অভিযানে প্রস্তুতি, ধৈর্য এবং সঠিক মানসিকতা অপরিহার্য।

এই অভিযানের মাধ্যমে নৌকা চালনা এবং সমুদ্র অভিযানের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। এটি ভবিষ্যতে সমুদ্রপথের অন্যান্য চ্যালেঞ্জে অংশগ্রহণকারীদের জন্য প্রেরণা হিসেবে কাজ করবে।

উপসংহার

তিন সহোদর ভাইয়ের সাহসিকতা এবং ধৈর্য প্রশান্ত মহাসাগর পাড়ি দিয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়ার মাধ্যমে প্রমাণ করেছে যে, কঠোর পরিশ্রম এবং দলগত সহযোগিতায় অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়। তারা শুধু রেকর্ড গড়েননি, বরং মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দাতব্য কার্যক্রমেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই যাত্রা ভবিষ্যতের সমুদ্র অভিযাত্রীদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।

এম আর এম – ১১১৯, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button