বাংলাভাষী হলেই বাংলাদেশি? সুপ্রিম কোর্টের প্রশ্ন কেন্দ্রীয় সরকারকে

ভারতের সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে প্রশ্ন তুলেছে, শুধুমাত্র বাংলা ভাষা বলার কারণে কি কাউকে বাংলাদেশি হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের আটক বা জোরপূর্বক বাংলাদেশে পাঠানো হচ্ছে? বিচারপতি সূর্যকান্ত, জয়মাল্য বাগচী ও বিপুল এম পাঞ্চোলির বেঞ্চ এই প্রশ্ন করেছেন।
গতকাল শুক্রবার এক জনস্বার্থ মামলার শুনানিতে বিচারপতি বাগচী বলেন, “শুধুমাত্র ভাষার ভিত্তিতে কাউকে বিদেশি সন্দেহ করা বা জোর করে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো সংবিধানসম্মত নয়।” এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মামলাটি দায়ের করেছেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদের চেয়ারম্যান ও তৃণমূল কংগ্রেসের সংসদ সদস্য সমিরুল ইসলাম।
মামলার পটভূমি:
আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ আদালতে জানান, বাংলাভাষী শ্রমিকদের বিভিন্ন রাজ্যে বাংলাদেশি সন্দেহে আটক করা হচ্ছে এবং নাগরিকত্বের পরিচয় না জেনেই তাদের জবরদস্তি বাংলাদেশে পাঠানো হচ্ছে। তিনি অভিযোগ করেন, সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনী (বিএসএফ) কোনো প্রমাণ ছাড়াই এসব শ্রমিকদের বিদেশি হিসেবে চিহ্নিত করছে।
উল্লেখযোগ্য ঘটনা হিসেবে, পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার বাসিন্দা সোনালী বিবিকে আটক ও তার পরিবারের সদস্যদের বাংলাদেশে পুশব্যাক করা হয়েছে। আইনজীবী ভূষণ জানান, সন্তানসম্ভবা ওই নারীকে কোনো প্রমাণ ছাড়াই বিদেশি দাগিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।
কেন্দ্রীয় সরকারের অবস্থান:
শুনানিতে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা জানান, ভারত “সিস্টেম্যাটিক ইনফিলট্রেশন” বা পরিকল্পিত অনুপ্রবেশের মুখোমুখি হচ্ছে এবং সীমান্তে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নিরাপত্তা বাহিনীর ভূমিকা অপরিহার্য। তিনি বলেন, “ভারত বিশ্বের অবৈধ অভিবাসীদের আশ্রয়স্থল হতে পারে না।”
তবে, বিচারপতি বাগচী বলেন, “ভারত বহু ভাষাভাষীর দেশ।” তিনি কেন্দ্রীয় সরকারকে প্রশ্ন করেন, “শুধুমাত্র ভাষার ভিত্তিতে কাউকে বিদেশি হিসেবে চিহ্নিত করা কি সংবিধানসম্মত?”
আদালতের নির্দেশনা:
সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রীয় সরকারকে সাত দিনের মধ্যে হলফনামা জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছে। এছাড়া, কলকাতা হাইকোর্টকে সোনালী বিবির মামলার শুনানি দ্রুত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী সেপ্টেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত হবে।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া:
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সুপ্রিম কোর্টের মন্তব্যকে আশাব্যঞ্জক হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, “বঙ্গোপসাগরের তীরে অবস্থিত বাংলা একটি আশ্রয়স্থল ও শক্তির ভূমি।” তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের সংসদ সদস্য সমিরুল ইসলামের নেতৃত্বে এই মামলাটি দায়ের করার জন্য ধন্যবাদ জানান।
তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, বিজেপি সরকারের “বাংলা বিরোধী” নীতির বিরুদ্ধে তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলোর প্রতিক্রিয়া:
মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই ধরনের আটক ও জোরপূর্বক পুশব্যাককে মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তারা দাবি করছে, ভাষার ভিত্তিতে কাউকে বিদেশি হিসেবে চিহ্নিত করা বৈষম্যমূলক এবং সংবিধানবিরোধী।
আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট:
ভারতের এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক মহলে সমালোচিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই ধরনের আচরণকে “রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন” হিসেবে অভিহিত করেছে।
ভারতের সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশনা ভাষার ভিত্তিতে কাউকে বিদেশি হিসেবে চিহ্নিত করা সংবিধানসম্মত কিনা, তা নিয়ে নতুন আলোচনার সূচনা করেছে। এটি নাগরিকত্ব, মানবাধিকার ও সংবিধানিক অধিকার রক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
MAH – 12549, Signalbd.com