ট্রাম্পের শুল্ক নীতিতে বড় ধাক্কা: মার্কিন আপিল আদালতের রায়ে অস্থির অর্থনীতি

মার্কিন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে আরোপিত অধিকাংশ শুল্ককে অবৈধ ঘোষণা করেছে ওয়াশিংটন ডিসির ফেডারেল সার্কিট কোর্ট অব আপিলস। ৭-৪ ভোটে দেওয়া এ রায়ে আদালত স্পষ্ট জানিয়েছে, ট্রাম্প শুল্ক আরোপের ক্ষেত্রে তার সাংবিধানিক ক্ষমতার সীমা অতিক্রম করেছেন।
এই রায় মার্কিন অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। তবে আদালত ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত শুল্ক বহাল রাখার নির্দেশ দিয়েছে, যাতে ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে সুপ্রিম কোর্টে আপিলের সুযোগ থাকে।
ট্রাম্পের শুল্ক নীতি: কেন ছিল বিতর্কিত?
ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় ফিরে আসার পর আবারও শুল্ককে মার্কিন পররাষ্ট্র ও বাণিজ্যনীতির অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেন। “আমেরিকা ফার্স্ট” নীতির অংশ হিসেবে তিনি কানাডা, মেক্সিকো, চীনসহ একাধিক দেশের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেন। এর উদ্দেশ্য ছিল—
✔ আমেরিকান উৎপাদন খাতকে রক্ষা করা
✔ বাণিজ্য ঘাটতি কমানো
✔ বিদেশি কোম্পানিগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি করে নতুন চুক্তি স্বাক্ষর করানো
এই শুল্কের কারণে কিছু ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি পুনর্নবীকরণে সফল হলেও এর ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়, শেয়ার বাজারে অস্থিরতা দেখা দেয়।
আদালতের রায়ের পেছনের কারণ
রায়ে বলা হয়েছে, ১৯৭৭ সালের ইন্টারন্যাশনাল ইমার্জেন্সি ইকোনমিক পাওয়ার্স অ্যাক্ট (IEEPA) আইনের অধীনে ট্রাম্প শুল্ক আরোপ করেছিলেন। কিন্তু আদালতের মতে, এই আইন মূলত শত্রু দেশ বা জরুরি পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার জন্য প্রযোজ্য, সাধারণ বাণিজ্যিক শুল্ক আরোপের জন্য নয়।
আদালত মন্তব্য করে,
“কংগ্রেস কখনো প্রেসিডেন্টকে সীমাহীন শুল্ক আরোপের ক্ষমতা দেয়নি। এই ক্ষমতার অপব্যবহার সাংবিধানিক সীমার বাইরে।”
রায়ে বিভক্তি ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
ফেডারেল সার্কিট কোর্টের ১১ জন বিচারকের মধ্যে ৭ জন রায় দিয়েছেন শুল্ক অবৈধ, আর ৪ জন বিচারক ট্রাম্পের পক্ষে রায় দিয়েছেন। রায়ে ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্টদের নিয়োগপ্রাপ্ত বিচারকরা সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিলেন।
ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া:
রায় নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যাল-এ লিখেছেন—
“এই রায় যদি বহাল থাকে, তাহলে আমেরিকার অর্থনীতি ধ্বংসের মুখে পড়বে। আমি নিশ্চিত, সুপ্রিম কোর্ট আমাদের জয়ী করবে।”
তিনি আদালতকে “দলীয় পক্ষপাতদুষ্ট” বলেও অভিযুক্ত করেন।
অর্থনীতিতে প্রভাব ও অনিশ্চয়তা
এই রায়ের পরও স্টক মার্কেটে তেমন বড় প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বিনিয়োগকারীরা এখনো সুপ্রিম কোর্টের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছে। তবে অনিশ্চয়তা বাড়ছে, যা ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
আর্ট হোগান, একজন বাজার বিশ্লেষক বলেন:
“করপোরেট আমেরিকার জন্য এখন সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হলো অনিশ্চয়তা। আর এই রায় সেই ঝুঁকি বাড়িয়েছে।”
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে প্রভাব
এই রায়ের পর কানাডা, মেক্সিকো ও চীন ইতিমধ্যে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। তারা বলছে, ট্রাম্পের শুল্কনীতির কারণে যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল, তা এখন কমতে পারে। তবে সুপ্রিম কোর্টে রায় উল্টে গেলে পরিস্থিতি আবারও বদলে যেতে পারে।
ট্রাম্পের অর্থনৈতিক এজেন্ডা ও ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ
বর্তমানে ট্রাম্পের অর্থনৈতিক এজেন্ডা একাধিক আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে। শুধু শুল্ক নয়, ফেডারেল রিজার্ভের স্বাধীনতা নিয়ে ট্রাম্পের পদক্ষেপ নিয়েও মামলা সুপ্রিম কোর্টে উঠতে পারে। যদি এই রায় বহাল থাকে, তবে ট্রাম্পের অনেক নীতি কার্যত ভেস্তে যাবে।
আইনগত লড়াই: সামনে কী হতে পারে?
ট্রাম্প প্রশাসন নিশ্চিতভাবে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করবে। মার্কিন আইনি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন,
✔ যদি সুপ্রিম কোর্ট রায় বহাল রাখে, তবে ট্রাম্পের অর্থনৈতিক নীতি বড় ধাক্কা খাবে।
✔ বিপরীতে, রায় উল্টে গেলে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা আরও বিস্তৃত হবে, যা মার্কিন ইতিহাসে নজিরবিহীন।
এই রায় শুধু শুল্কনীতির নয়, বরং মার্কিন প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার সীমা নিয়ে এক বড় আইনি লড়াই। এর চূড়ান্ত ফলাফল নির্ভর করছে সুপ্রিম কোর্টের ওপর, যা আমেরিকার অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে।
MAH – 12539 , Signalbd.com