ফের তুচ্ছ কারণে বিধ্বস্ত এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান, ২ ট্রিলিয়ন ডলারের প্রকল্প এখন গলার কাঁটা
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কার ফেয়ারব্যাঙ্কসের ইয়েলসন এয়ার ফোর্স ঘাঁটিতে ফের একটি এফ-৩৫এ লাইটনিং ২ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। প্রায় ২০ কোটি ডলারের এই অত্যাধুনিক যুদ্ধে বিমানটি একটি তুচ্ছ ত্রুটির কারণে বিধ্বস্ত হয়। এই ঘটনা আন্তর্জাতিকভাবে এফ-৩৫ প্রোগ্রামের ব্যয় ও নিরাপত্তা নিয়ে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।
দুর্ঘটনার বিবরণ
২০২৫ সালের ২৮ জানুয়ারি, আলাস্কার তীব্র ঠান্ডায় পাইলটের নিয়ন্ত্রণে থাকা অবস্থায় বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। পাইলট প্রায় ৫০ মিনিট ধরে লকহিড মার্টিনের প্রকৌশলীদের সঙ্গে লাইভ কনফারেন্সে সমস্যার সমাধান চেষ্টা করেন। বিমানটির ল্যান্ডিং গিয়ার বরফে জমে যাওয়ায় সেন্সর ভুল সংকেত পাঠায়। এর ফলে বিমানটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রাউন্ড মোডে চলে যায় এবং মাঝ আকাশে নিয়ন্ত্রণ হারায়।
পাইলট শেষ মুহূর্তে ইজেক্ট করতে বাধ্য হন এবং হালকা আঘাত পান। বিমানটি মুহূর্তের মধ্যে আগুনে ঘেরা হয়ে ধ্বংস হয়।
দুর্ঘটনার কারণ
মার্কিন বিমান বাহিনীর তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাইড্রোলিক সিস্টেমে পানি মিশে গিয়েছিল। মাইনাস ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সেই পানি বরফে পরিণত হয়। প্রথমে নোজ ল্যান্ডিং গিয়ার আটকে যায়, পরে মূল গিয়ারও অচল হয়ে পড়ে।
দুইবার ‘টাচ অ্যান্ড গো’ করার চেষ্টা করা হলেও বরফ ছড়িয়ে যাওয়ায় সমস্যা আরও বেড়ে যায়। কর্নেল মাইকেল লুইস বলেন, “ঘটনাটি ধাপে ধাপে বিস্তৃত হয়েছিল, নোজ গিয়ারের ভেতরের পানি জমে বরফ হওয়া থেকেই।”
প্রস্তুতকারক লকহিড মার্টিন আগেই সতর্ক করেছিল, ঠান্ডায় সেন্সর ভুল সংকেত দিতে পারে। কিন্তু আলাস্কার ঘটনায় সেই সতর্কতা কার্যকর করা হয়নি। দুর্ঘটনার মাত্র ৯ দিন পর একই ঘাঁটিতে আরেকটি এফ-৩৫ হাইড্রোলিক আইসিং সমস্যায় পড়লেও তা নিরাপদে অবতরণে সক্ষম হয়।
এফ-৩৫ প্রোগ্রামের পটভূমি
এফ-৩৫ প্রোগ্রাম শুরু থেকেই ব্যয়বহুল ও জটিলতার কারণে সমালোচিত। ২০২১ সালে প্রতি ইউনিটের দাম ছিল প্রায় ১৩ কোটি ৫৮ লাখ ডলার, যা ২০২৪ সালে প্রায় ৮ কোটি ১০ লাখ ডলারে কমে। তবে পুরো প্রোগ্রামের লাইফটাইম খরচ ২ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি হতে পারে।
এই প্রোগ্রামে ১,৯০০-এর বেশি প্রতিষ্ঠান যুক্ত, অস্ট্রেলিয়ার ৭৫টিরও বেশি প্রতিষ্ঠান যন্ত্রাংশ সরবরাহ করে। ভিক্টোরিয়ার এক প্রদেশেই ৭০০-এর বেশি কম্পোনেন্ট তৈরি হয়।
দুর্ঘটনার প্রভাব
এফ-৩৫ দুর্ঘটনা শুধু প্রযুক্তিগত ব্যর্থতা নয়, আধুনিক যুদ্ধবিমানের জটিলতা ও উচ্চ ব্যয়ের উপরও প্রশ্ন তোলে। মিডিয়ার বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিমানগুলো চরম প্রযুক্তির হলেও সাধারণ ত্রুটিতেই বিধ্বস্ত হতে পারে। মাঝ আকাশে প্রস্তুতকারক কোম্পানির প্রকৌশলীদের লাইভ সহায়তা সত্ত্বেও সমস্যার সমাধান সম্ভব হয়নি।
ইলন মাস্ক টুইটে লিখেছিলেন, “এফ-৩৫ নকশা থেকেই ভুল ছিল। এত বৈচিত্র্যময় চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে এটি অত্যধিক ব্যয়বহুল ও জটিল হয়েছে। ড্রোন যুগে এই ধরনের ম্যানড ফাইটার জেটগুলো পাইলটদের বিপদে ফেলবে।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই দুর্ঘটনা প্রমাণ করে যে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি থাকলেও তা সর্বদা নির্ভরযোগ্য নয়। এটি সামরিক পরিকল্পনা ও বাজেট পরিকল্পনায় নতুন প্রশ্ন তোলে।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
এফ-৩৫ প্রোগ্রামের নিরাপত্তা, খরচ এবং কার্যকারিতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ও সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুনর্বিবেচনা করতে হতে পারে। প্রযুক্তিগত ত্রুটি রোধে আরও কঠোর নিয়ম ও পাইলট প্রশিক্ষণ জরুরি।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এ ধরনের দুর্ঘটনা আন্তর্জাতিকভাবে মার্কিন সামরিক শক্তির ভাবমূর্তি এবং এফ-৩৫ প্রোগ্রামের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে।
পরিশেষে
আলাস্কার এফ-৩৫ দুর্ঘটনা প্রমাণ করে, অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমানও ছোট প্রযুক্তিগত ত্রুটিতে বিধ্বস্ত হতে পারে। প্রায় দুই দশক ধরে ব্যবহারের পরও প্রোগ্রামের ব্যয়, নিরাপত্তা এবং জটিলতা নিয়ে প্রশ্ন থামেনি। এ ধরনের দুর্ঘটনা ভবিষ্যতে প্রোগ্রামের পুনর্মূল্যায়ন এবং উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে।
এম আর এম – ১০৮৮, Signalbd.com



