রয়টার্সের বিশ্লেষণ: যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ শতাংশ শুল্কের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে ভারতে, সম্পর্কেও ফাটল
ভারত থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হওয়ায় দুই দেশের বাণিজ্য সম্পর্ক ও ভারতের অর্থনীতিতে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সিদ্ধান্ত ভারতের রপ্তানিকারক, শিল্প এবং কর্মসংস্থানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নীতি ও প্রয়োগ
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণার পর ভারত থেকে আমদানি করা বিভিন্ন পণ্যের ওপর শুল্কহার দ্বিগুণ করে ৫০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে ভারতকে ২৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হতো, কিন্তু নতুন নীতি অনুযায়ী পোশাক, রত্ন ও গয়না, জুতা, ক্রীড়াসামগ্রী, আসবাবপত্র, রাসায়নিকসহ বিভিন্ন পণ্যের ওপর সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
মার্কিন কাস্টমস ও সীমান্ত সুরক্ষা সংস্থা জানিয়েছে, শুল্ক কার্যকর হওয়ার আগে জাহাজে ওঠানো ভারতীয় পণ্য আগামী তিন সপ্তাহ শুল্ক ছাড় পাবে। তবে জাতীয় নিরাপত্তা বাণিজ্য আইনের ২৩২ ধারায় আগে থেকে শুল্কাধীন কিছু পণ্যের ওপর নতুন শুল্ক আরোপ হবে না।
প্রভাবিত খাত ও অর্থনীতি
নতুন শুল্কের কারণে ভারতের রপ্তানিকারক এবং ছোট ব্যবসায়ীরা উদ্বিগ্ন। বিশেষ করে গুজরাট রাজ্যসহ দেশের বহু শিল্পাঞ্চলে কর্মসংস্থান হুমকির মুখে পড়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, রপ্তানির ওপর এই বাধা ভারতের প্রবৃদ্ধি ধীর করে দিতে পারে এবং প্রতিযোগিতার সুবিধা চীনের, ভিয়েতনাম এবং বাংলাদেশের মতো দেশের হাতে চলে যেতে পারে।
ডলারের বিপরীতে ভারতীয় রুপির মূল্য অবমূল্যায়ন ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। ত্রৈমাসিকভাবে রুপির দাম সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছে, যা রপ্তানিকারকদের জন্য কিছুটা সুবিধা দিতে পারে। তবে এই সুবিধা সীমিত এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব মোকাবিলা করতে সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
ব্যর্থ আলোচনার প্রেক্ষাপট
উভয় দেশের কর্মকর্তারা জানিয়েছে, ওয়াশিংটন ও নয়াদিল্লির মধ্যে নতুন আলোচনার কোনো ইঙ্গিত নেই। ভারত পাঁচ দফা আলোচনার পরও শুল্ক কমানোর কোনো চুক্তিতে পৌঁছাতে পারেনি। যুক্তরাষ্ট্র দাবি করছে, ভারত যদি রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল কেনা বন্ধ করে, তবে শুল্ক ছাড় পেতে পারবে। ভারতে এ ধরনের দাবি দ্বিচারিতা হিসেবে দেখা হচ্ছে, কারণ ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য করছে।
ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কীর্তি বর্ধন সিং জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক ভারতের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত না করার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ভারত বিদেশি উৎস থেকে ক্রয় অব্যাহত রাখবে।
পরিসংখ্যান ও তুলনা
২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্য প্রায় ১২,৯০০ কোটি ডলার। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি ৪,৫০৮ কোটি ডলার। রপ্তানিকারীরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত শুল্ক ভারতের মোট ৮,৭০০ কোটি ডলারের রপ্তানির প্রায় ৫৫ শতাংশকে প্রভাবিত করবে।
মুম্বাইয়ের ইন্দিরা গান্ধী ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট রিসার্চের অর্থনীতিবিদ রাজেশ্বরী সেনগুপ্ত বলেন, “রুপির অবমূল্যায়ন কিছুটা সুবিধা দিতে পারে, তবে সরকারকে আরও বাণিজ্যমুখী নীতি গ্রহণ করতে হবে, যাতে চাহিদা বৃদ্ধি করা যায় এবং ক্ষতি কমানো যায়।”
বিশ্লেষণ
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের ফলে ভারতের অর্থনীতি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হবে না। তবে রপ্তানি ও কর্মসংস্থান খাতের জন্য এটি চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে। দীর্ঘমেয়াদে সমস্যা মোকাবিলার জন্য ভারতকে রপ্তানিমুখী সংস্কার এবং মার্কিন শুল্কের আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খুঁজতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ শতাংশ শুল্ক ভারতের অর্থনীতি ও দুই দেশের সম্পর্কের ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলছে। ভারত সরকার পরিস্থিতি মোকাবিলার পদক্ষেপ নিচ্ছে, তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই শুল্কের প্রভাব আরও স্পষ্ট হবে। ভবিষ্যতে দুই দেশের বাণিজ্য সম্পর্ক কীভাবে পরিবর্তিত হবে, তা নজরদারি ও কৌশলগত পদক্ষেপের উপর নির্ভর করছে।
এম আর এম – ১০৮৬, Signalbd.com



