বিশ্ব

গাজায় ২৩৩ ইমামকে হত্যা করেছে দখলদার সেনারা

Advertisement

ইসরায়েলি সেনাদের অব্যাহত আগ্রাসনে গাজার ধর্মীয় নেতৃত্বকে পদ্ধতিগতভাবে হত্যা ও উপাসনালয় ধ্বংস করা হচ্ছে। ২২ মাসে নিহত হয়েছেন ২৩৩ জন ইমাম, ধ্বংস হয়েছে শত শত মসজিদ।

গাজায় ইমামদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা

ইসরায়েলি সেনারা গাজার ভেতরে শুধু সাধারণ মানুষকেই নয়, বরং ধর্মীয় নেতৃত্বকে পরিকল্পিতভাবে টার্গেট করছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে চলমান আগ্রাসনে এ পর্যন্ত ২৩৩ জন ইমাম এবং ইসলামি প্রচারক শহীদ হয়েছেন। গাজার মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, শুধু ইমামদের হত্যা নয়, পদ্ধতিগতভাবে মসজিদগুলোও ধ্বংস করা হচ্ছে, যাতে মুসলমানদের সামাজিক ও ধর্মীয় ভিত্তি ভেঙে ফেলা যায়।

উপাসনালয় ধ্বংস ও ধর্মীয় নিপীড়ন

সরকারি হিসাব অনুযায়ী, দখলদার বাহিনী ইতোমধ্যেই ৮২৮টি মসজিদ সম্পূর্ণ ধ্বংস করেছে এবং আরও ১৬৭টি মসজিদ আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শুধু ইসলামি উপাসনালয়ই নয়, ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংস হয়েছে গাজার অন্তত তিনটি চার্চ এবং নিহত হয়েছেন ২১ জন ফিলিস্তিনি খ্রিস্টান। ফলে এটি স্পষ্ট হচ্ছে যে হামলাগুলো শুধুমাত্র সামরিক উদ্দেশ্যে নয়, বরং ধর্মীয় কণ্ঠস্বর ও উপাসনালয়গুলোকে নিশ্চিহ্ন করার এক বৃহৎ পরিকল্পনার অংশ।

গাজার মানুষের দৈনন্দিন জীবন বিপর্যস্ত

একসময় যে পাড়া-মহল্লা মসজিদের আজানে মুখরিত থাকত, আজ সেখানে নীরবতা নেমে এসেছে। শিশু, নারী থেকে শুরু করে বৃদ্ধ—কেউ রক্ষা পাচ্ছে না। মসজিদ ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় নামাজ পড়ার জায়গা নেই, খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের গির্জা হারিয়ে যাওয়ায় ধর্মীয় আচার পালনের সুযোগও নেই। এভাবে ধর্মীয় অবকাঠামো ধ্বংস করে পুরো সমাজকাঠামোকেই অচল করার চেষ্টা চলছে।

ধর্মীয় নেতৃত্বকে হত্যা করার উদ্দেশ্য

গাজার মিডিয়া অফিসের প্রধান ইসমাইল আল থাওয়াবতেহ বলেন, “মসজিদ, গির্জা, ইমাম ও ধর্মীয় নেতাদের ওপর আক্রমণ চালিয়ে ফিলিস্তিনিদের জাতীয় পরিচয়, সামাজিক সংহতি ও আধ্যাত্মিক শক্তি ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা চলছে।”

তিনি আরও বলেন, ইমাম ও আলেমরা ফিলিস্তিনের মানুষকে সংগঠিত করেন, প্রতিরোধের চেতনা জাগিয়ে রাখেন এবং আশা বাঁচিয়ে রাখেন। তাঁদের হত্যা করে জনগণের মনোবল দুর্বল করার চেষ্টা চলছে। এটি সরাসরি এক ধরনের সাংস্কৃতিক গণহত্যা।

আন্তর্জাতিক মহলের নীরবতা

ফিলিস্তিনের বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা বলছে, ইসরায়েলি হামলার পরিসংখ্যান প্রতিদিন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। তবুও আন্তর্জাতিক মহল থেকে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। জাতিসংঘ ও ওআইসি একাধিকবার উদ্বেগ প্রকাশ করলেও বাস্তবে যুদ্ধবিরতি বা মানবিক করিডোর নিশ্চিত হয়নি। এর ফলে প্রতিদিনই মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে, আর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হচ্ছে গাজা।

অতীতের ইতিহাস ও বর্তমান বাস্তবতা

ইসরায়েলের আগ্রাসন নতুন কিছু নয়। অতীতেও একাধিকবার গাজায় মসজিদ ও সামাজিক অবকাঠামো ধ্বংস করা হয়েছে। তবে এবার আক্রমণের মাত্রা অভূতপূর্ব। শতাব্দী প্রাচীন স্থাপনা ধ্বংসের মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় শেকড় মুছে ফেলার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি কেবল সামরিক সংঘাত নয়; বরং একটি জাতির সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় অস্তিত্ব নিশ্চিহ্ন করার প্রক্রিয়া।

বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইমাম ও ধর্মীয় নেতাদের হত্যার মাধ্যমে প্রতিরোধ আন্দোলনের নেতৃত্বকেই ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। কারণ সমাজে ইমামরা শুধু নামাজ পরিচালনা করেন না, বরং শিক্ষাদান, সামাজিক সমস্যার সমাধান এবং জনগণকে ঐক্যবদ্ধ রাখার ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। তাদের হারানো মানে ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ কাঠামোকে দুর্বল করা।

অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, এ ধরনের হামলা জেনেভা কনভেনশনের সরাসরি লঙ্ঘন। ধর্মীয় উপাসনালয় ও নেতাদের টার্গেট করা যুদ্ধাপরাধের শামিল।

সামনে কী হতে পারে

আগামী দিনগুলোতে এই ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধ হবে কি না তা নির্ভর করছে আন্তর্জাতিক কূটনীতির ওপর। যদি বিশ্বশক্তিগুলো কার্যকর চাপ প্রয়োগ না করে, তাহলে আরও বেশি প্রাণহানি এবং সাংস্কৃতিক ধ্বংসযজ্ঞ ঘটতে পারে। ফিলিস্তিনের ইতিহাস-সংস্কৃতি ও ধর্মীয় শেকড় রক্ষায় বিশ্ব সম্প্রদায় কতটা সোচ্চার হবে, সেটিই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।

পরিশেষে

গাজায় ২৩৩ ইমাম হত্যার ঘটনা নিছক সংখ্যা নয়; বরং এটি একটি জাতির আত্মপরিচয়, ধর্মীয় ঐতিহ্য ও সামাজিক ভিত্তি ধ্বংসের অংশ। ইসরায়েলি সেনাদের এই কর্মকাণ্ড কেবল ফিলিস্তিন নয়, পুরো মুসলিম বিশ্বকেই নাড়িয়ে দিয়েছে। এখন বিশ্ব বিবেক জাগ্রত না হলে হয়তো ইতিহাসের পাতা থেকে ফিলিস্তিনিদের সাংস্কৃতিক অস্তিত্বই মুছে যাবে।

এম আর এম – ১০৮২, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button