বিশ্ব

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েলি হামলার ধ্বংসাবশেষ দ্রুত সরাচ্ছে তেহরান

ইরানের তেহরান শহরের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত মোজদেহ (যা লাভিসান-২ নামেও পরিচিত) পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েলি হামলার পর ইরান দ্রুত ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে ফেলার কার্যক্রম শুরু করেছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর সায়েন্স অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটির (ISIS) স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণে এই তথ্য উঠে এসেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই দ্রুত ধ্বংসাবশেষ অপসারণের মাধ্যমে পারমাণবিক অস্ত্র সম্পর্কিত গবেষণার প্রমাণ মুছে ফেলার চেষ্টা চলছে।

ইরানের মোজদেহ স্থাপনায় ইসরায়েলি হামলা

২০২৫ সালের ১৮ জুন ইসরায়েলি বাহিনী মোজদেহ পারমাণবিক স্থাপনায় দুটি দফা বোমাবর্ষণ করে। এই হামলায় ইনস্টিটিউট অব অ্যাপ্লাইড ফিজিক্সের ভবন, শহীদ করিমি গ্রুপের সংশ্লিষ্ট ভবন, একটি নিরাপত্তা ভবন এবং একটি কর্মশালা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ২২ জুনের হামলায় মার্কিন বাহিনীও অংশ নেয়, যার ফলে ফোর্ডো, ইসফাহান এবং নাটাঞ্জের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে ব্যাপক ক্ষতি হয়।

ধ্বংসাবশেষ অপসারণের তৎপরতা

ইনস্টিটিউট ফর সায়েন্স অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটির স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ৩ জুলাই থেকে ধ্বংসাবশেষ অপসারণের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ১৯ আগস্টের চিত্রে দেখা যায়, ইনস্টিটিউট অব অ্যাপ্লাইড ফিজিক্সের ভবন এবং কর্মশালা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। এছাড়া শহীদ করিমি গ্রুপের সংশ্লিষ্ট ভবনও অপসারণ করা হয়েছে। তবে নিরাপত্তা ভবন এবং কর্মশালার ধ্বংসাবশেষ অপসারণের কার্যক্রম এখনও চলমান।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

আইএইএ’র ভূমিকা

জাতিসংঘের পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে পরিদর্শনের জন্য তেহরানের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। আইএইএ প্রধান রাফায়েল গ্রোসি জানিয়েছেন, আইনগতভাবে ইরানকে পরিদর্শনের সুযোগ দিতে বাধ্য। তবে ইরান এখনও মোজদেহ স্থাপনায় পরিদর্শনের অনুমতি দেয়নি।

ইউরোপীয় দেশগুলোর পদক্ষেপ

যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি ইরানের ওপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের প্রক্রিয়া শুরু করতে পারে। তাদের অভিযোগ, ইরান ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। এই চুক্তি ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কার্যক্রম থেকে বিরত রাখার উদ্দেশ্যে করা হয়েছিল।

ইরানের অবস্থান

ইরান বরাবরই দাবি করে আসছে যে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে। তারা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পরিকল্পনা অস্বীকার করেছে। তবে মোজদেহ স্থাপনায় ইসরায়েলি হামলার পর ধ্বংসাবশেষ দ্রুত সরিয়ে ফেলার কার্যক্রম ইরানের প্রকৃত উদ্দেশ্য সম্পর্কে আন্তর্জাতিক মহলে সন্দেহের সৃষ্টি করেছে।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

ইরান যদি আইএইএ’র পরিদর্শন কার্যক্রম পুনরায় শুরু না করে এবং আন্তর্জাতিক চাপের মুখে না আসে, তাহলে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল হতে পারে। এতে ইরানের অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। অন্যদিকে, ইরান যদি পরমাণু অস্ত্র তৈরির পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে, তাহলে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হতে পারে।

মোজদেহ পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েলি হামলার পর ইরানের ধ্বংসাবশেষ অপসারণের কার্যক্রম আন্তর্জাতিক মহলে সন্দেহের সৃষ্টি করেছে। আইএইএ’র পরিদর্শন কার্যক্রম পুনরায় শুরু না হলে এবং আন্তর্জাতিক চাপের মুখে না আসলে, ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল হতে পারে। এতে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হতে পারে।

MAH – 12530 ,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button