বিশ্ব

চারবার ফোন করেছেন ট্রাম্প, রাগ করে ধরেননি মোদি!

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে অন্তত চারবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ফোন করেছিলেন বলে জানা গেছে। তবে আশ্চর্যের বিষয়, মোদি কোনো কলেরই জবাব দেননি। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য বলছে, এর পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক কূটনৈতিক উত্তেজনা এবং যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কনীতি।

ঘটনার বিস্তারিত

জার্মানির প্রভাবশালী দৈনিক ফ্রাঙ্কফুর্টার অ্যালজেমেইন একটি প্রতিবেদনে দাবি করেছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে অন্তত চারবার ফোন করেছেন। তবে প্রতিবারই মোদি সেই কল ধরতে অস্বীকৃতি জানান। সংবাদপত্রটির মতে, এই পদক্ষেপ মোদির “সতর্ক কৌশল” এবং “অসন্তোষের বহিঃপ্রকাশ”।

ট্রাম্প এমন সময় মোদিকে ফোন করেন, যখন তাঁর প্রশাসন ভারতীয় পণ্যের ওপর প্রায় ৫০ শতাংশ পর্যন্ত অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করে। ফলে দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক নতুন করে টানাপোড়েনে পড়ে।

পটভূমি: যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্কের টানাপোড়েন

ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরেই ওঠানামার মধ্যে রয়েছে। ট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদে “আমেরিকা ফার্স্ট” নীতি অনুসরণ করে একাধিক দেশের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছিলেন। তিনি প্রায়শই বিদেশি নেতাদের ব্যক্তিগতভাবে ফোন করে বাণিজ্য বা রাজনৈতিক সমঝোতা এগিয়ে নিতেন।

এর আগে ভিয়েতনামের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে মাত্র একটি ফোনালাপের পরই সামাজিক মাধ্যমে ঘোষণা দিয়েছিলেন যে একটি চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে, যদিও বাস্তবে কোনো আনুষ্ঠানিক চুক্তি হয়নি। বিশ্লেষকদের মতে, মোদি এমন অভিজ্ঞতা এড়াতেই ট্রাম্পের ফোন রিসিভ না করার কৌশল নেন।

শুল্কনীতি ও তার প্রভাব

সম্প্রতি ট্রাম্প প্রশাসন ঘোষণা করেছে যে, ২৭ আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি হওয়া ভারতীয় পণ্যের ওপর নতুন শুল্ক কার্যকর হবে। নির্দেশনা অনুযায়ী, ২৫ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা হবে।

এই সিদ্ধান্ত ভারতের অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা দিতে পারে। বিশেষ করে টেক্সটাইল, ফার্মাসিউটিক্যালস ও তথ্যপ্রযুক্তি খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র ভারতের অন্যতম বড় বাণিজ্যিক অংশীদার হওয়ায় এই বাড়তি শুল্ক ভারতের রপ্তানি খাতে চাপ সৃষ্টি করবে।

মোদির অবস্থান

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের ফোন না ধরা কেবল অভিমান বা ক্ষোভ নয়, বরং একটি কূটনৈতিক বার্তা। মোদি সরকার মনে করছে, একতরফা শুল্কারোপ ভারতের স্বার্থবিরোধী। তাই সরাসরি ট্রাম্পের সাথে কথা না বলে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, ভারত সহজে কোনো চাপের কাছে নতি স্বীকার করবে না।

ভারতের রাজনৈতিক মহলও মনে করছে, মোদির এই অবস্থান দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে তাঁকে দৃঢ় নেতৃত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করছে। বিশেষ করে এমন সময়ে যখন দেশীয় শিল্প উদ্যোক্তারা অতিরিক্ত শুল্ক নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ঘটনা শুধু যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্কের টানাপোড়েনই নয়, বরং বৈশ্বিক বাণিজ্যনীতিতেও প্রভাব ফেলতে পারে। একদিকে যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধে লিপ্ত, অন্যদিকে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হলে এশিয়াতে মার্কিন প্রভাব কমে যেতে পারে।

অন্যদিকে, ইউরোপীয় দেশগুলো এ ঘটনার প্রতি নজর রাখছে। তারা মনে করছে, ভারত যদি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখে তবে ইউরোপের সঙ্গে বাণিজ্যিক সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ তৈরি হতে পারে।

বিশেষজ্ঞ মতামত

গ্লোবাল পাবলিক পলিসি ইনস্টিটিউটের সহপ্রতিষ্ঠাতা থরস্টেন বেনার মনে করেন, ট্রাম্পের ব্যক্তিগত কূটনীতির ধরন অনেক সময় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তিনি বলেন, “ট্রাম্প প্রায়শই অন্য দেশগুলোর মার্কিন বাজারের ওপর নির্ভরতা কাজে লাগিয়ে চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টা করেন। কিন্তু ভারতের মতো উদীয়মান অর্থনীতির ক্ষেত্রে এই কৌশল সবসময় কার্যকর হয় না।”

ভারতের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, মোদি সচেতনভাবেই ট্রাম্পের ফোন এড়িয়ে গেছেন। কারণ সরাসরি ফোনালাপের মাধ্যমে ট্রাম্প তাঁর বক্তব্যকে একতরফা প্রচার করার সুযোগ পেতে পারতেন।

সংক্ষিপ্তসার

চারবার ফোন করার পরও ট্রাম্পের সঙ্গে কথা না বলে নরেন্দ্র মোদি আসলে একটি শক্ত বার্তা দিলেন—ভারত কেবল যুক্তরাষ্ট্রের চাপের কাছে নতি স্বীকার করবে না। সামনে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক কীভাবে মোড় নেয় তা দেখার অপেক্ষায় রয়েছে বিশ্ব।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ভারতের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক স্বার্থ এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতির ভারসাম্য বজায় রাখাই হবে মোদি সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জ। প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে—এ উত্তেজনা কি ভবিষ্যতে বড় কোনো কূটনৈতিক দ্বন্দ্বে রূপ নেবে, নাকি নতুন সমঝোতার পথ খুলে দেবে?

এম আর এম – ১০৪৮, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Advertisement
Back to top button