বিশ্ব

গাজ্জার ভয়াবহ পরিস্থিতি নিয়ে আয়ারল্যান্ডের প্রেসিডেন্টের ক্ষোভ

ফিলিস্তিনের গাজ্জা উপত্যকায় চলমান ইসরাইলি আগ্রাসন বিশ্বের বিবেককে নাড়া দিয়েছে। শিশু, নারী ও বেসামরিক মানুষের ওপর নির্বিচারে হামলা চালিয়ে গাজ্জাকে এক মৃত্যুপুরীতে পরিণত করেছে ইসরাইলি সেনারা। এই ভয়াবহ পরিস্থিতি নিয়ে এবার সরব হয়েছেন আয়ারল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট মাইকেল ডি. হিগিন্স। তিনি গাজ্জার পরিস্থিতিকে “বিশ্বের ইতিহাসের এক বেদনাদায়ক সময়” বলে উল্লেখ করেছেন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীরবতাকে তীব্রভাবে সমালোচনা করেছেন।

জবাবদিহিতাহীনতার বিরুদ্ধে ক্ষোভ

সম্প্রতি আইরিশ জাতীয় টেলিভিশন RTÉ নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট হিগিন্স বলেন,
“আমরা এখন এমন এক অবস্থায় পৌঁছেছি যেখানে কোনো জবাবদিহিতা নেই। গাজ্জায় যা ঘটছে তা সম্পূর্ণভাবে আন্তর্জাতিক আইনকে উপেক্ষা করে।”
তিনি আরও বলেন, ইসরাইলি মন্ত্রিসভার সদস্যরা প্রকাশ্যে বেআইনি কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করছেন এবং আন্তর্জাতিক নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা করছেন না।

পশ্চিম তীর বিচ্ছিন্ন করার প্রস্তাব নিয়ে উদ্বেগ

প্রেসিডেন্ট হিগিন্স বিশেষভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পশ্চিম তীর ও গাজ্জার মধ্যে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার প্রস্তাব নিয়ে। তাঁর মতে, এই প্রস্তাব আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ও জাতিসংঘের প্রস্তাবনার সম্পূর্ণ পরিপন্থী।
তিনি বলেন,
“গণতন্ত্রের জন্য এটি সবচেয়ে বড় হুমকি। যদি জবাবদিহিতা না থাকে, তবে আন্তর্জাতিক শাসনব্যবস্থা অর্থহীন হয়ে পড়বে।”

প্রযুক্তির অপব্যবহার ও অস্ত্র প্রতিযোগিতা

আয়ারল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট প্রযুক্তির অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার নিয়েও সতর্ক করেন। তিনি বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ও সামরিক প্রযুক্তি আজ এমন জায়গায় চলে গেছে যেখানে জবাবদিহিতা না থাকলে যুদ্ধ আরও ভয়াবহ হতে পারে।
“এই পরিস্থিতি এক ধরনের অস্ত্র প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করছে যেখানে মানবিক মূল্যবোধ একেবারেই অগ্রাহ্য।”

গাজ্জার মানবিক বিপর্যয়: মৃত্যু ও ধ্বংস

জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনের তথ্য অনুযায়ী—

  • গাজ্জায় গত এক বছরে নিহতের সংখ্যা ৪৫ হাজারের বেশি, যার মধ্যে ২০ হাজারের বেশি শিশু
  • ৯০ শতাংশের বেশি ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে; হাসপাতাল, স্কুল ও আশ্রয়কেন্দ্রগুলোকেও নিশানা করা হয়েছে।
  • গাজ্জার ২৩ লাখ মানুষ এখন খাদ্য, পানি ও চিকিৎসার চরম সংকটে রয়েছে।

আয়ারল্যান্ডের অবস্থান: মানবিক সহায়তা ও কূটনৈতিক চাপ

আয়ারল্যান্ড দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিনের পক্ষে কণ্ঠস্বর উঁচু করে আসছে। প্রেসিডেন্ট হিগিন্স বলেন,
“গাজ্জায় যে গণহত্যা চলছে, তাকে উপেক্ষা করে আমরা অন্য কোনো রাজনৈতিক এজেন্ডা সামনে আনতে পারি না।”
তিনি জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসকে চ্যাপ্টার সেভেন এর ক্ষমতা প্রয়োগের আহ্বান জানান, যার মাধ্যমে নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদন ছাড়াই সামরিক পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া: নীরবতা ও প্রতিবাদ

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ফিলিস্তিন সমর্থনে বিক্ষোভ হলেও বড় শক্তিগুলোর নীরবতা নিয়ে সমালোচনা বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের কয়েকটি দেশ ইসরাইলকে সমর্থন অব্যাহত রেখেছে। অন্যদিকে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো, তুরস্ক, দক্ষিণ আফ্রিকা ও মালয়েশিয়া ইসরাইলি আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে একাধিকবার যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব উঠলেও তা কার্যকর হয়নি।

গাজ্জার জন্য কী করা যেতে পারে?

মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন—

  • অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করতে হবে।
  • মানবিক করিডর খুলে দিতে হবে যাতে খাদ্য, পানি ও ওষুধ পৌঁছানো যায়।
  • আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে ইসরাইলি নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে হবে।
  • প্রযুক্তি ও অস্ত্র রপ্তানিতে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে।

MAH – 12476 ,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Advertisement
Back to top button