জঙ্গলে অনেক প্রাণীই থাকে কিন্তু একটাই সিংহ থাকে: থালাপাতি বিজয়

ভারতের দক্ষিণী সিনেমার সুপারস্টার ও নবগঠিত রাজনৈতিক দল তামিলগা ভেট্রি কাজাগম (টিভিকে)-এর প্রতিষ্ঠাতা থালাপাতি বিজয় সাম্প্রতিক সমাবেশে এক অনন্য বার্তা দিয়েছেন। লাখো মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, “জঙ্গলে অনেক প্রাণী থাকে, কিন্তু সিংহ থাকে একটাই। সিংহ একা হলেও সিংহই থাকে।” তার এই বক্তব্য এখন দেশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন মুখ হলেও তিনি ইতোমধ্যেই বিরোধী দল ও শাসক দলের জন্য সমানভাবে চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছেন।
বিজয়ের মাদুরাই সমাবেশে জনস্রোত
গত শুক্রবার তামিলনাড়ুর মাদুরাইতে থালাপাতি বিজয়ের ডাকে আয়োজিত সমাবেশে প্রায় চার লাখ মানুষ উপস্থিত হন। বিশাল জনসমাগম প্রমাণ করেছে যে, চলচ্চিত্রের জনপ্রিয়তা ছাড়াও রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও তার প্রতি মানুষের আস্থা তৈরি হচ্ছে। সমাবেশে তিনি সরাসরি বিজেপি ও ডিএমকে-কে উদ্দেশ্য করে তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি ঘোষণা দেন, “টিভিকে কাউকে ভয় পায় না। পুরো তামিলনাড়ু আমাদের সঙ্গে আছে।”
বক্তব্যের তাৎপর্য
বিজয়ের সিংহ উপমা কেবল নাটকীয় কোনো সংলাপ নয়, বরং তা তার রাজনৈতিক দর্শনকেও তুলে ধরে। তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, একক নেতৃত্ব থাকলেও যদি সেই নেতৃত্ব দৃঢ় হয়, তবে সেটিই যথেষ্ট শক্তিশালী হয়ে ওঠে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই বক্তব্যের মাধ্যমে বিজয় তার অনুসারীদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে এবং বিরোধীদের উদ্দেশে বার্তা দিতে চেয়েছেন যে, তিনি একাই যথেষ্ট শক্তিশালী চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারেন।
রাজনৈতিক অঙ্গনে বিজয়ের উত্থান
দক্ষিণী সিনেমার একের পর এক হিট ছবির নায়ক বিজয় প্রথমবার রাজনৈতিকভাবে আলোচনায় আসেন ২০২১ সালের স্থানীয় নির্বাচনে। তখন তার ফ্যান ক্লাব ‘বিজয় মাক্কাল ইয়াক্কালাম’ নির্বাচনে অংশ নেয় এবং ১৬৯ আসনের মধ্যে ১১৫টিতে জয় পায়। এর মধ্য দিয়েই স্পষ্ট হয়ে যায় যে, বিজয়ের জনপ্রিয়তা কেবল পর্দাতেই সীমাবদ্ধ নয়, মাঠেও তা কার্যকর।
২০২৪ সালে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে তামিলগা ভেট্রি কাজাগম (টিভিকে) দল গঠন করেন। শুরু থেকেই তিনি বিজেপি ও ডিএমকের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নেন। এর ফলে তিনি দক্ষিণ ভারতের অন্যতম আলোচিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছেন।
কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান
বিজয় অতীতে একাধিকবার কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন নীতির বিরোধিতা করেছেন। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (CAA), চিকিৎসকদের ভর্তি পরীক্ষা NEET, এমনকি জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধেও তিনি সরব ছিলেন। ভোটের দিন প্রতিবাদ জানানোর অংশ হিসেবে সাইকেলে চড়ে ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে তিনি আলোড়ন তুলেছিলেন।
এছাড়া রমজান মাসে মুসলিম সম্প্রদায়ের সঙ্গে ইফতার করে সংখ্যালঘুদের পাশে থাকার বার্তাও দিয়েছেন তিনি। এসব কর্মকাণ্ড প্রমাণ করে যে, বিজয় কেবল একজন চলচ্চিত্র নায়ক নন, বরং জনগণের বাস্তব সমস্যাগুলোর সঙ্গে যুক্ত এক নেতা হয়ে উঠছেন।
প্রতিক্রিয়া ও বিশ্লেষণ
বিজয়ের সর্বশেষ বক্তব্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক ভাইরাল হয়েছে। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছেন। তার দলের সমর্থকেরা মনে করেন, তিনি সত্যিই ‘একজন সিংহ’, যিনি তামিল রাজনীতিকে বদলে দিতে সক্ষম।
অন্যদিকে শাসক দল ও বিরোধীরা মনে করছে, একজন চলচ্চিত্র তারকার জনপ্রিয়তা দীর্ঘমেয়াদে রাজনীতিতে টিকে থাকবে কিনা, সেটাই দেখার বিষয়। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজয় যে ডিএমকের জন্য বড় পরীক্ষা হয়ে দাঁড়াবেন, তা এখন প্রায় নিশ্চিত।
সিনেমা থেকে রাজনীতি: বিজয়ের যাত্রাপথ
থালাপাতি বিজয় দক্ষিণী সিনেমার ইতিহাসে অন্যতম বড় তারকা। তার অভিনীত লিও, মেরসাল, সরকার, থেরি প্রভৃতি সিনেমা বক্স অফিসে বিপুল সাফল্য অর্জন করেছে। ভক্তদের কাছে তিনি শুধু নায়ক নন, বরং একজন রোল মডেল। আর সেই জনপ্রিয়তাকেই রাজনৈতিক শক্তিতে রূপান্তর করছেন তিনি।
তার নেতৃত্বের ধরন সিনেমার চরিত্রগুলোর মতোই — দৃঢ়, স্পষ্ট এবং জনমুখী। তাই সমর্থকরা তাকে কেবল তারকা নয়, বরং ‘জনতার নেতা’ হিসেবেও দেখতে শুরু করেছে।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
রাজনৈতিক ময়দানে থালাপাতি বিজয়ের আগমন অনেকের কাছে দক্ষিণ ভারতের ক্ষমতার ভারসাম্য পাল্টে দেওয়ার ইঙ্গিত। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আগামী নির্বাচনে টিভিকে-র শক্ত উপস্থিতি দেখা যাবে। তবে তার প্রকৃত ক্ষমতা যাচাই হবে ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে।
তখন দেখা যাবে, সিংহের মতো গর্জন করা থালাপাতি বিজয় সত্যিই শাসনক্ষমতায় পৌঁছাতে পারেন কিনা, নাকি এ কেবল সাময়িক জনপ্রিয়তার প্রতিফলন।
শেষ কথা
থালাপাতি বিজয়ের সর্বশেষ বক্তব্য প্রমাণ করেছে, তিনি শুধু নায়ক নন, বরং রাজনীতিতেও লড়াই করার মতো মানসিক শক্তি অর্জন করেছেন। কোটি মানুষের সমর্থন এবং জনআন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত অবস্থান তাকে তামিল রাজনীতির নতুন আলোচনায় পরিণত করেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, “সিংহের গর্জন” কি ভোটের মাঠে বাস্তব শক্তিতে রূপ নেবে?
এম আর এম – ১০১৮, Signalbd.com