বিশ্ব

ইউক্রেনকে অস্ত্র সহায়তা দেবে নরওয়ে

রাশিয়ার আগ্রাসন মোকাবিলায় ইউক্রেনকে শক্তিশালী করতে নরওয়ে বড় ধরনের সামরিক সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে। দেশটি জানিয়েছে, তারা প্রায় ৭০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের অর্থ ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় ব্যয় করবে। এই অর্থ সহায়তা মূলত দুটি প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা ক্রয়ের জন্য ব্যবহৃত হবে।

নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী জোনাস গার স্টোরে বলেন, “ইউক্রেনের জনগণ রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। তাদের পাশে দাঁড়ানো শুধু রাজনৈতিক দায়িত্ব নয়, এটি মানবিক দায়িত্বও।”

জার্মানির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগ

ঘোষণা অনুযায়ী, নরওয়ে একা নয়, বরং জার্মানির সঙ্গে যৌথভাবে ইউক্রেনের জন্য এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সরবরাহ করবে। প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা আধুনিক প্রযুক্তি সমৃদ্ধ, যা মূলত আকাশপথে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা ঠেকাতে ব্যবহৃত হবে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এ সহায়তার জন্য নরওয়ে ও জার্মানির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, ইউক্রেনের জন্য প্রতিটি প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম মানুষের জীবন বাঁচাচ্ছে।

প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার গুরুত্ব

প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা বিশ্বজুড়ে বহুল পরিচিত এক ধরনের প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি। এটি শত্রুপক্ষের বিমান, ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন লক্ষ্যভেদে সক্ষম। বিশেষজ্ঞদের মতে, ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে এই ব্যবস্থা যুক্ত হওয়া রাশিয়ার আক্রমণ ঠেকাতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, গত কয়েক মাসে রাশিয়া ইউক্রেনের বিদ্যুৎকেন্দ্র, বন্দর ও বসতবাড়িতে ড্রোন হামলা বাড়িয়েছে। ফলে ইউক্রেনের জন্য আকাশ প্রতিরক্ষা আরও শক্তিশালী করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

অন্যান্য মিত্রদেশের সহায়তা

শুধু নরওয়ে নয়, ইউক্রেনকে অস্ত্র ও সামরিক সহায়তা দিচ্ছে আরও কয়েকটি দেশ। সম্প্রতি ডেনমার্ক ও বেলজিয়াম ঘোষণা দিয়েছে যে তারা ইউক্রেনকে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান সরবরাহ করবে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সও নিয়মিতভাবে সামরিক ও আর্থিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে।

এই সহায়তাগুলো ইউক্রেনের যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ক্ষমতাকে আরও দীর্ঘস্থায়ী করবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

যুদ্ধের প্রেক্ষাপট ও বর্তমান অবস্থা

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার আগ্রাসন শুরু করে। এরপর থেকে দেশটিতে হাজারো মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে এবং লক্ষ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ইউক্রেনের অবকাঠামো, বিশেষত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত ভয়াবহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ইউক্রেনকে টিকিয়ে রাখতে পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক ও অর্থনৈতিক সহায়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর সেই ধারাবাহিকতায় নরওয়ের সাম্প্রতিক এই ঘোষণা এসেছে।

বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউক্রেনকে সহায়তা দেওয়া শুধু মানবিক নয়, এটি কৌশলগত বিষয়ও। পশ্চিমা দেশগুলো চাইছে রাশিয়ার আগ্রাসন রুখে দিয়ে ইউরোপের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে।

অর্থনীতিবিদদের মতে, এত বিপুল অর্থ ব্যয়ে ইউক্রেনের যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হলেও দীর্ঘমেয়াদে এর আর্থিক প্রভাব ইউরোপীয় দেশগুলোর ওপরও পড়তে পারে। তবে তা সত্ত্বেও বেশিরভাগ দেশই মনে করছে, এখনই ইউক্রেনকে রক্ষা করা জরুরি।

ভবিষ্যতের সম্ভাবনা

নরওয়ের সামরিক সহায়তা ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে এই সহায়তা যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারবে কি না, সেটিই এখন বড় প্রশ্ন।

যুদ্ধ অব্যাহত থাকলে আরও দেশকে ইউক্রেনের পাশে দাঁড়াতে হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যদি আকাশ প্রতিরক্ষা শক্তিশালী হয়, তবে ইউক্রেন তার জনগণকে রক্ষা করতে পারবে এবং শান্তি আলোচনার জন্য আরও সুবিধাজনক অবস্থানে পৌঁছাতে পারবে।

এম আর এম – ১০১৫, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button