বিশ্ব

ট্রাম্প এবার কেন শিকাগোতে সেনা মোতায়েনের পরিকল্পনা করছেন

সম্পূর্ণ সংবাদ প্রতিবেদন

যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি আবারও তুমুল আলোচনায়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবার শিকাগোতে সেনা মোতায়েনের পরিকল্পনা করছেন। ওয়াশিংটন পোস্টের খবরে বলা হয়েছে, পেন্টাগন ইতোমধ্যেই এই পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে। মূলত অপরাধ, গৃহহীনতা এবং অনথিভুক্ত অভিবাসীদের দমন করতেই এই পদক্ষেপের কথা ভাবা হচ্ছে।

তবে এই সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। কারণ, সেনা মোতায়েন সাধারণত যুদ্ধ বা চরম জরুরি পরিস্থিতিতে নেওয়া হয়। একটি শহরের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করা মার্কিন রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে বিরল ঘটনা।

কেন শিকাগো?

শিকাগো যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় বৃহত্তম শহর। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই শহরে অপরাধের হার বেড়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ওয়াশিংটন পোস্টের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের তুলনায় ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে শিকাগোতে হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা ১২% বেড়েছে। বিশেষ করে গ্যাং–সংক্রান্ত সহিংসতা উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে।

তাছাড়া, গৃহহীন মানুষের সংখ্যা এবং অনথিভুক্ত অভিবাসীদের আগমন স্থানীয় প্রশাসনের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। ট্রাম্পের মতে, স্থানীয় প্রশাসন পরিস্থিতি সামলাতে ব্যর্থ হয়েছে।

ট্রাম্পের পূর্ববর্তী পদক্ষেপ

এটি ট্রাম্প প্রশাসনের প্রথম সেনা মোতায়েনের উদ্যোগ নয়। ২০২৫ সালের জুন মাসে ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলসে ন্যাশনাল গার্ডের চার হাজার সদস্য এবং ৭০০ সক্রিয় মেরিন সেনা পাঠানো হয়েছিল। স্থানীয় নেতাদের বিরোধিতা সত্ত্বেও সেই পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা হয়।

শিকাগোর ক্ষেত্রে একই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে রাজনৈতিক সংঘাত আরও তীব্র হতে পারে। কারণ, শহরটি ডেমোক্র্যাটদের নিয়ন্ত্রণে এবং ট্রাম্পের সঙ্গে ডেমোক্র্যাটদের সম্পর্ক অত্যন্ত তিক্ত।

পেন্টাগনের পরিকল্পনা কী?

ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিকাগোতে ন্যাশনাল গার্ডের কয়েক হাজার সদস্য মোতায়েনের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে। যদি অনুমোদন মেলে, সেপ্টেম্বরের মধ্যেই মোতায়েন শুরু হতে পারে।

তবে সেনা মোতায়েনের মতো চূড়ান্ত পদক্ষেপ নেওয়ার আগে প্রশাসন বিকল্প পরিকল্পনাও খুঁজছে। কিছু কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মেরিন সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত এখনই কার্যকর নাও হতে পারে।

স্থানীয় নেতাদের প্রতিক্রিয়া

ইলিনয়ের গভর্নর জেবি প্রিৎজকার জানিয়েছেন, অঙ্গরাজ্যের পরিস্থিতি সেনা মোতায়েনের মতো জরুরি নয়। তিনি বলেন, “ফেডারেল সরকারের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক অনুরোধ আসেনি। শিকাগোতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য স্থানীয় পুলিশ যথেষ্ট সক্ষম।”

অন্যদিকে শিকাগোর মেয়র ব্র্যান্ডন জনসন জানিয়েছেন, ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়ে তিনি গভীর উদ্বেগে আছেন। তিনি বলেন, “এটি স্থানীয় প্রশাসনের ক্ষমতার ওপর হস্তক্ষেপ এবং বেআইনি পদক্ষেপ হতে পারে।”

ডেমোক্র্যাট বনাম রিপাবলিকান দ্বন্দ্ব

ট্রাম্প প্রশাসন দীর্ঘদিন ধরে ডেমোক্র্যাট নিয়ন্ত্রিত শহরগুলোর সমালোচনা করে আসছে। ট্রাম্প একাধিকবার বলেছেন, শিকাগোর পরিস্থিতি “অরাজকতা” এবং তিনি শহরটিকে “গুছিয়ে নেবেন।” এই মন্তব্য ডেমোক্র্যাট নেতাদের ক্ষুব্ধ করেছে।

আইনগত বিতর্ক

মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী, সেনা মোতায়েনের জন্য স্থানীয় গভর্নরের সম্মতি প্রয়োজন। তবে ফেডারেল সরকারের জরুরি ক্ষমতার মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট চাইলেও ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করতে পারেন। এর আগে ১৯৯২ সালে লস অ্যাঞ্জেলস দাঙ্গার সময় সেনা মোতায়েন করা হয়েছিল। কিন্তু সেই সময় পরিস্থিতি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন।

জনমত বিভক্ত

শিকাগোবাসী এবং যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা এই সিদ্ধান্ত নিয়ে বিভক্ত। কেউ মনে করছেন, সহিংসতা ও অপরাধ দমনে সেনা মোতায়েন প্রয়োজন। অন্যদিকে অনেকের মতে, এটি স্থানীয় প্রশাসনের ওপর কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপ এবং গণতান্ত্রিক চেতনার পরিপন্থী।

একটি জরিপে দেখা গেছে, রিপাবলিকান সমর্থকদের মধ্যে ৬৫% এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করছেন, কিন্তু ডেমোক্র্যাট সমর্থকদের মধ্যে মাত্র ২০% সমর্থন জানিয়েছেন।

হোয়াইট হাউসের অবস্থান

রয়টার্স হোয়াইট হাউসের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও কোনো তাৎক্ষণিক মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে প্রশাসনের একটি সূত্র জানিয়েছে, ট্রাম্প যেকোনো মূল্যে শিকাগোতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে চান।

ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি কী হতে পারে?

যদি সেনা মোতায়েনের অনুমোদন মেলে, তবে এটি মার্কিন রাজনীতিতে বড় ধরনের বিতর্ক সৃষ্টি করবে। ডেমোক্র্যাটরা বিষয়টিকে “রাজনৈতিক স্টান্ট” হিসেবে দেখছেন, আর রিপাবলিকানরা মনে করছেন এটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য অপরিহার্য।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সেনা মোতায়েন অপরাধ দমনে খুব কার্যকর সমাধান নয়। বরং সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করার জন্য দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

শিকাগোতে সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত শুধু একটি প্রশাসনিক পদক্ষেপ নয়, বরং এটি আমেরিকার রাজনীতির ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনাও নির্ধারণ করতে পারে। আগামী কয়েক সপ্তাহে এই ইস্যু নিয়ে দেশজুড়ে তীব্র বিতর্ক চলবে।

MAH – 12459 ,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button