কয়েকটি দেশে রয়েছে ইরানের অস্ত্র কারখানা, চাঞ্চল্যকর তথ্য দিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী

ইরান বেশ কয়েকটি দেশে অস্ত্র উৎপাদন কারখানা স্থাপন করেছে বলে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী আজিজ নাসিরজাদেহ। শুক্রবার রাতে এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে তিনি এই বক্তব্য দেন। তবে ঠিক কোন কোন দেশে এসব কারখানা স্থাপন করা হয়েছে তা তিনি প্রকাশ করেননি।
ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বিস্ফোরক দাবি
আজিজ নাসিরজাদেহ জানান, ইরান এখন আর কেবল নিজ দেশে নয়, বরং বাইরের কয়েকটি দেশেও প্রতিরক্ষা সামগ্রী তৈরি করছে। তিনি বলেন, “ইরান গত বছর নতুন ধরনের ওয়ারহেড পরীক্ষা করেছে, যা কৌশলগত ও প্রযুক্তিগত দিক থেকে অত্যন্ত উন্নত।” তবে কূটনৈতিক কারণে কারখানার অবস্থান প্রকাশ করা হয়নি।
নতুন ওয়ারহেড ও ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা
ইরানি প্রতিরক্ষামন্ত্রী আরও জানান, গত বছর তাদের বিজ্ঞানীরা একটি নতুন ওয়ারহেড তৈরি করেছে, যা কৌশলগত সক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করেছে। একই সঙ্গে বৃহৎ পরিসরে সামরিক মহড়া চালিয়েছে ইরানের নৌবাহিনী। ওমান উপসাগর এবং উত্তর ভারত মহাসাগরে পরীক্ষামূলকভাবে ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে।
রাশিয়ার সঙ্গে যৌথ মহড়া ও সাম্প্রতিক কার্যক্রম
ইরানের সামরিক কার্যক্রম সম্প্রতি আরও জোরদার হয়েছে। মাত্র এক মাস আগে ক্যাস্পিয়ান সাগরে রাশিয়ার সঙ্গে যৌথ মহড়া “ক্যাসারেক্স ২০২৫” অনুষ্ঠিত হয়। এরপরই আবার বড় আকারে মহড়া চালায় ইরান। বিশেষজ্ঞদের মতে, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে দীর্ঘদিন ধরে প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতায় ভুগলেও দেশটি এখন নিজস্ব সামরিক শক্তি তৈরি করছে।
মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ও ইরানের বিকল্প ব্যবস্থা
১৯৭৯ সালের ইরানি বিপ্লবের পর থেকেই দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মুখে রয়েছে। এর ফলে আধুনিক অস্ত্র ও প্রযুক্তি সংগ্রহে সমস্যায় পড়েছে তেহরান। তাই দেশটি স্থানীয়ভাবে নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও পুরনো অস্ত্রের আধুনিক সংস্করণ তৈরি করছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরান এখন ধীরে ধীরে এক নতুন সামরিক শক্তিতে পরিণত হচ্ছে।
ইসরায়েলকে উদ্দেশ্য করে কঠোর মন্তব্য
সাক্ষাৎকারে নাসিরজাদেহ বলেন, “যদি জুন মাসের সংঘাত ১৫ দিন পর্যন্ত গড়াতো, তাহলে ইসরায়েলি বাহিনী ইরানের কোনো ক্ষেপণাস্ত্র আটকাতে সক্ষম হতো না। এ কারণেই তারা মার্কিন মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে।” তিনি আরও দাবি করেন, ইরান এখনো তাদের সবচেয়ে নির্ভুল অস্ত্র “কাসেম বাসির” ব্যবহারই করেনি।
কাসেম বাসির ক্ষেপণাস্ত্রের বৈশিষ্ট্য
গত মে মাসে উন্মোচিত কাসেম বাসির ক্ষেপণাস্ত্রটিকে ইরান এখন পর্যন্ত তাদের অন্যতম শক্তিশালী অস্ত্র হিসেবে বিবেচনা করছে। এটি একটি মাঝারি পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, যার পাল্লা প্রায় ১,২০০ কিলোমিটার। এতে রয়েছে উন্নত নির্দেশনা ব্যবস্থা এবং প্রতিরোধ মোকাবিলা করার ক্ষমতা। ইরান মনে করছে, এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করলে প্রতিপক্ষের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়বে।
আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ
ইরানের এই ঘোষণা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল এরই মধ্যে ইরানের সামরিক সক্ষমতা নিয়ে সতর্কতা প্রকাশ করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি সত্যিই ইরানের বাইরে অস্ত্র কারখানা থাকে, তাহলে এটি মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে।
বিশ্লেষকদের মতামত
মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক এক বিশ্লেষক বলেন, “ইরান কৌশলগতভাবে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করছে। তারা শুধু নিজ দেশে নয়, বরং বিদেশে ঘাঁটি তৈরি করে প্রতিপক্ষের জন্য বড় হুমকি তৈরি করছে।” অন্যদিকে কেউ কেউ মনে করছেন, ইরানের এ ধরনের বক্তব্য কেবল প্রতিপক্ষকে ভীতি প্রদর্শনের কৌশলও হতে পারে।
সংক্ষিপ্তসার
ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর এই ঘোষণার ফলে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক ও সামরিক পরিস্থিতি নতুন মাত্রা পেয়েছে। তবে কোন কোন দেশে ইরানের এই কারখানা রয়েছে—তা প্রকাশ না করায় রহস্য আরও গভীর হয়েছে। আগামী দিনে ইরানের এই সামরিক অগ্রগতি আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য কতটা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে, সেটিই এখন আন্তর্জাতিক মহলের বড় প্রশ্ন।
এম আর এম – ০৯৯৪, Signalbd.com