বাংলাদেশ

ঢাকার খালে রাজনীতিবিদ-মেয়রদের বছরে দু’বার গোসলের বিধান করলে পরিবেশ ঠিক হয়ে যাবে

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের নদ-নদী ও খাল-বিলের দূষণ রোধে ব্যতিক্রমী এক প্রস্তাব দিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের। তাঁর মতে, পরিবেশ রক্ষার অন্যতম উপায় হলো জনসচেতনতা, আর সেই সচেতনতা বাড়াতে রাজনৈতিক নেতাদের বছরে অন্তত দু’বার ঢাকার খাল ও নদীতে গোসল করা উচিত।

রাজনীতিকদের গোসলের প্রস্তাব কেন?

শনিবার (২৬ জুলাই) সকালে রাজধানীতে পরিবেশ ও নদী রক্ষায় আয়োজিত এক আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে জুবায়ের বলেন, “সরকার আসে, সরকার যায়। কিন্তু নদীর দূষণ কমে না, বরং দিন দিন বেড়েই চলছে। যদি আমরা সত্যিই ঢাকার চারটি নদী, বিশেষ করে বুড়িগঙ্গা পরিষ্কার রাখতে চাই, তাহলে মেয়র, এমপি, ডিসি, এসপি, মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে বছরে অন্তত দুইবার নদীতে নেমে গোসল করতে হবে। তখন সাধারণ মানুষও তা দেখে উৎসাহিত হবে এবং নদীগুলো প্রাকৃতিকভাবেই পরিষ্কার হয়ে যাবে।”

তার মতে, নেতৃবৃন্দ যখন নিজেরা নদীর পানি ব্যবহার করবেন, তখন স্বাভাবিকভাবেই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব বাড়বে। এই অংশগ্রহণই হবে জনগণকে অনুপ্রাণিত করার সঠিক উপায়।

ইউরোপ-চীনের উদাহরণ টানলেন জুবায়ের

বক্তৃতায় এহসানুল মাহবুব জুবায়ের ইউরোপ ও চীনের উদাহরণ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “সেসব দেশে নদীর পানি এত পরিষ্কার কেন? কারণ সেখানে রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে প্রশাসনিক কর্মকর্তারা পর্যন্ত নদীতে নেমে সাঁতার কাটেন। তারা জানেন, যদি পানি পরিষ্কার না থাকে তবে শহরের নাগরিক জীবনের মান নষ্ট হবে। অথচ আমরা আমাদের নদীগুলো নিজেরাই দূষিত করছি।”

নদী দূষণ ও এর প্রভাব

নদী ও খালের দূষণ শুধু পরিবেশ নয়, জনস্বাস্থ্য, অর্থনীতি এবং সামাজিক জীবনের জন্যও হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঢাকা শহরের চারপাশের নদীগুলোর পানি এখন শিল্পবর্জ্য, প্লাস্টিক ও নানান ধরনের বর্জ্যে ভর্তি। এই দূষিত পানি পানীয় জলে মিশে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকার বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা ও বালু নদীর দূষণের কারণে প্রতিবছর অসংখ্য মানুষ জলবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

দায়িত্বশীলতার ঘাটতির অভিযোগ

জামায়াতের এই নেতার মতে, নদী ও পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে শুধু সরকারি সংস্থা নয়, রাজনৈতিক নেতাদেরও দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখা উচিত। তিনি বলেন, “ক্ষমতা নেওয়ার আগে প্রতিটি রাজনীতিবিদের প্রমাণ করতে হবে, তিনি কি দেশের জন্য সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনে যোগ্য। শুধুমাত্র ক্ষমতা দখল নয়, দেশের মানুষের প্রতি দায়িত্বই হবে নেতৃত্বের প্রধান মানদণ্ড।”

পরিবেশ রক্ষায় বৃক্ষরোপণের আহ্বান

নদী দূষণ রোধের পাশাপাশি এহসানুল মাহবুব জুবায়ের পরিবেশ রক্ষায় বৃক্ষরোপণের উপরও জোর দেন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশে যদি ১৬-১৭ কোটি মানুষ নিজ নিজ বাড়ির আশপাশে গাছ লাগাই, তাহলে দেশে গাছের অভাব থাকবে না। আমাদের প্রয়োজনীয় বনভূমি হওয়া উচিত ২৫ শতাংশ, অথচ বর্তমানে রয়েছে মাত্র ৯ শতাংশ। এটি আমাদের নিজেদের হাতেই পরিবেশ ধ্বংসের স্পষ্ট প্রমাণ।”

জনগণের অংশগ্রহণ কেন জরুরি

শুধু সরকারের উদ্যোগ নয়, জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া নদী-পরিবেশ রক্ষা সম্ভব নয়। এহসানুল মাহবুব জুবায়ের মনে করেন, সাধারণ মানুষ যখন দেখবে নেতৃবৃন্দ নিজেরা নদীতে নামছেন, তখন তারা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে আরও বেশি সচেতন হবেন। সেইসঙ্গে স্থানীয় পর্যায়ে পরিবেশ রক্ষায় গড়ে উঠবে সামাজিক আন্দোলন।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জুবায়েরের এই বক্তব্য প্রথাগত কোনো সমাধান নয়, তবে এটি জনগণকে সচেতন করার জন্য একটি প্রতীকী আহ্বান। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাস্তবে নদী পরিষ্কার রাখতে হলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, শিল্পকারখানার বর্জ্য নিয়ন্ত্রণ, নিয়মিত ড্রেজিং এবং নদীর সীমানা রক্ষার জন্য কঠোর আইন প্রয়োগ জরুরি।

সারসংক্ষেপ  

নদী ও পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব সরকার ও জনগণ উভয়ের। জুবায়েরের ব্যতিক্রমী প্রস্তাব জনসচেতনতার আলোচনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এই ধরনের প্রতীকী পদক্ষেপ কি বাস্তবে কার্যকর হবে? নাকি এটি শুধু বিতর্কের জন্ম দেবে—সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞরা একমত যে, এই ধরনের আলোচনা হলেও পরিবেশের জন্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

এম আর এম – ০৫৩৬, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button