বিশ্ব

নাইজেরিয়ায় ফজরের নামাজের সময় বন্দুকধারীদের হামলা, নিহত ২৭

নাইজেরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় কাটসিনা রাজ্যের উঙ্গুয়ান মানতাউ গ্রামে গত মঙ্গলবার ভোরে ফজরের নামাজের সময় বন্দুকধারীদের হামলায় অন্তত ২৭ জন মুসল্লি নিহত হয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও কয়েকজন। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, হামলাকারীরা মোটরসাইকেলে করে এসে মসজিদের দরজা বন্ধ করে গুলি চালায়। এতে মুহূর্তেই প্রাণ হারান বেশ কয়েকজন মুসল্লি।

হামলার পেছনের কারণ

স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, এই হামলা সম্ভবত সম্প্রতি উঙ্গুয়ান মানতাউ গ্রামের বাসিন্দাদের প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপের প্রতিশোধস্বরূপ। গ্রামের মানুষরা কয়েকদিন আগে বন্দুকধারীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল এবং বেশ কয়েকজন বন্দুকধারীকে হত্যা করেছিল। তারা রুয়ান সানই গ্রাম থেকে অপহৃত কয়েকজনকে উদ্ধার করেছিল এবং তিনটি মোটরসাইকেল ও দুটি একে-৪৭ রাইফেল জব্দ করেছিল। এই প্রতিশোধমূলক হামলায় গ্রামের মুসল্লিরা লক্ষ্যবস্তু হন।

স্থানীয় প্রশাসনের পদক্ষেপ

কাটসিনা রাজ্যের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও অভ্যন্তরীণ বিষয়ক কমিশনার ড. নাসির মুয়াজু বলেছেন, “এই হামলা আমাদের সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে একটি ন্যক্কারজনক আক্রমণ। আমরা হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করব।” তিনি আরও জানান, সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে মোতায়েন করা হয়েছে এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। তিনি বলেন, “বন্দুকধারীরা প্রায়ই বৃষ্টির মৌসুমে কৃষিজমিতে লুকিয়ে থেকে হামলা চালায়।”

হামলার প্রেক্ষাপটে আরও সহিংসতা

উল্লেখযোগ্য যে, নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিম ও উত্তর-মধ্য অঞ্চলে কৃষক ও পশুপালকদের মধ্যে জমি ও পানির সীমিত প্রবেশাধিকার নিয়ে সংঘর্ষ প্রায়ই ঘটে। এই সংঘর্ষগুলো প্রায়শই সহিংস রূপ ধারণ করে এবং বহু মানুষের প্রাণহানির কারণ হয়। গত জুনে উত্তর-মধ্য নাইজেরিয়ায় এক হামলায় ১০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছিল। এই ধরনের সহিংসতা সম্প্রতি আরও বেড়েছে, বিশেষ করে যখন পশুপালকরা অস্ত্র গ্রহণ করছে।

নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি

নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিম ও উত্তর-মধ্য অঞ্চলে এই ধরনের হামলার ঘটনা নতুন নয়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত কয়েক বছরে এই অঞ্চলে সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বন্দুকধারীরা প্রায়ই মোটরসাইকেলে করে গ্রামে এসে হামলা চালায় এবং দ্রুত পালিয়ে যায়। এই অঞ্চলের নিরাপত্তা পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাচ্ছে, যা স্থানীয় জনগণের জন্য বড় ধরনের উদ্বেগের বিষয়।

সরকারের প্রতিক্রিয়া

কাটসিনা রাজ্যের ভারপ্রাপ্ত গভর্নর মালাম ফারুক লাওয়াল জোবি প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবুর কাছে জরুরি ভিত্তিতে হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমাদের কৃষক, ব্যবসায়ী ও পরিবারগুলোকে আর ভয়ের মধ্যে বসবাস করতে হবে না। আমাদের রাষ্ট্রপতির সরাসরি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন যাতে আমরা এই অপ্রত্যাশিত হামলার অবসান ঘটাতে পারি।”

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা হামলায় নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের আহ্বান জানিয়েছে। তারা বলেছে, “এই ধরনের সহিংসতা মানবাধিকারের লঙ্ঘন এবং এটি অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।”

নাইজেরিয়ার কাটসিনা রাজ্যে ফজরের নামাজের সময় বন্দুকধারীদের হামলা একটি মর্মান্তিক ঘটনা। এই হামলা শুধুমাত্র স্থানীয় জনগণের জন্য নয়, বরং পুরো জাতির জন্য একটি বড় ধরনের উদ্বেগের বিষয়। সরকার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যৌথ উদ্যোগে এই ধরনের সহিংসতা বন্ধ করা সম্ভব। আশা করা যায়, এই হামলার পর সরকার দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে যাবে।

MAH – 12426 ,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button