ইলন মাস্কের প্রশংসা মেলোনির, মুখ গোমড়া করলেন ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে উপস্থিত থেকে টেসলা ও স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্কের প্রশংসা করলেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি। মেলোনির সেই প্রশংসায় ট্রাম্পের চেহারায় অস্বস্তি ও বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। বৈঠকটি ইউক্রেন যুদ্ধ ও পশ্চিমা বিশ্বে প্রযুক্তিগত সহযোগিতা নিয়ে হলেও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে মাস্ককে ঘিরে এই অপ্রত্যাশিত মুহূর্ত।
বৈঠকের প্রেক্ষাপট
সোমবার (১৮ আগস্ট) যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে হোয়াইট হাউসে বৈঠকে বসেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বৈঠকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি, ইউরোপীয় ইউনিয়নের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা এবং ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি উপস্থিত ছিলেন। আলোচনার মূল বিষয় ছিল ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে সম্ভাব্য সমাধান ও প্রযুক্তিগত সহায়তার ভবিষ্যৎ রূপরেখা।
এই বৈঠকেই মেলোনি ইলন মাস্কের প্রশংসা করেন এবং বলেন যে, যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেনকে সহায়তা করতে মাস্কের মালিকানাধীন স্টারলিংক উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। তার এই বক্তব্য শোনার পর থেকেই ট্রাম্পের মুখমণ্ডলে বিরক্তির ছাপ ধরা পড়ে।
মেলোনির মন্তব্য এবং ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া
বৈঠকের একপর্যায়ে মেলোনি বলেন, “স্টারলিংকের মাধ্যমে ইউক্রেন গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ ও ইন্টারনেট সুবিধা বজায় রাখতে পারছে। এটি একটি যুগান্তকারী সহযোগিতা, এবং এজন্য আমি ইলন মাস্ককে ধন্যবাদ জানাতে চাই।”
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এই মন্তব্য করার পর ট্রাম্প দীর্ঘ সময় নিরব ছিলেন এবং তার মুখে অস্বস্তির ছাপ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। বৈঠকে উপস্থিত অন্যান্য নেতারাও ট্রাম্পের এই প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করেন।
মাস্ক ও ট্রাম্প সম্পর্ক
একসময় ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন ইলন মাস্ক। ২০২০ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পের পক্ষে পরোক্ষ সমর্থনও দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু পরে মার্কিন প্রশাসনের করনীতি ও বাজেট নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। বিশেষ করে প্রযুক্তি খাতে ভর্তুকি কমানো ও পরিবেশ নীতিতে মতভেদ ট্রাম্প ও মাস্কের মধ্যে সম্পর্ককে দূরত্বে ঠেলে দেয়।
এ ছাড়া ইউক্রেন যুদ্ধের সময় মাস্কের অবস্থান নিয়েও ট্রাম্প অসন্তুষ্ট। মাস্কের প্রতিষ্ঠান স্টারলিংক ইউক্রেনকে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সরবরাহ করছে, যা যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেনীয় সেনাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ট্রাম্প বরাবরই ইউক্রেনে অতিরিক্ত সহায়তা দেওয়া নিয়ে সতর্ক ছিলেন।
ইউক্রেন যুদ্ধ ও স্টারলিংকের ভূমিকা
২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ করার পর থেকে ইউক্রেনীয় বাহিনী একাধিকবার যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার সমস্যায় পড়েছিল। তখন স্টারলিংক স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইউক্রেনকে ইন্টারনেট সুবিধা দেওয়া হয়। এতে যুদ্ধক্ষেত্রে সেনারা তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে পারে।
বিশ্লেষকদের মতে, স্টারলিংক শুধু প্রযুক্তিগত সহযোগিতাই দেয়নি, বরং পশ্চিমা বিশ্বে প্রযুক্তি খাতের নতুন সম্ভাবনাও তুলে ধরেছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি একাধিকবার প্রকাশ্যে মাস্কের প্রশংসা করেছেন।
ট্রাম্পের নীরব অসন্তোষ
মেলোনির বক্তব্যের সময় ট্রাম্প শুরুতে নীরব থাকলেও বৈঠক শেষে ঘনিষ্ঠদের কাছে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন বলে জানা গেছে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেন যুদ্ধের প্রসঙ্গে মাস্ককে অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়া তার প্রশাসনের কূটনৈতিক অবস্থানকে জটিল করে তুলছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, মেলোনির মন্তব্যকে ট্রাম্প ব্যক্তিগতভাবে নিয়েছেন। কারণ মাস্কের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপড়েন তার রাজনৈতিক ভাবমূর্তিকে প্রভাবিত করছে।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষণ
ইউরোপীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, মেলোনির এই প্রশংসা কেবল প্রযুক্তি সহযোগিতার স্বীকৃতি নয়, বরং পশ্চিমা রাজনীতিতে মাস্কের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের প্রতিফলন। মাস্ক বর্তমানে শুধু একজন উদ্যোক্তা নন, বরং বৈশ্বিক রাজনীতিতেও তার প্রভাব দৃশ্যমান।
যুক্তরাষ্ট্রে আগামী নির্বাচনের আগে মাস্ক ও ট্রাম্পের সম্পর্ক আরও আলোচনায় আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মেলোনির মন্তব্য সেই বিতর্ককে আরও উসকে দিল।
ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি
বিশ্লেষকদের মতে, ইউক্রেন যুদ্ধ ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে মতভেদ বাড়ছে। মাস্ককে নিয়ে মেলোনির প্রশংসা হয়তো সাময়িক একটি ঘটনা, তবে এর প্রভাব আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ট্রাম্প ও মাস্কের দূরত্ব ভবিষ্যতে আরও বাড়বে নাকি রাজনৈতিক স্বার্থে তারা আবারও কাছাকাছি আসবেন।
এম আর এম – ০৯৩৮, Signalbd.com