যেকোনো মুহূর্তে ইসরায়েলের সঙ্গে ‘যুদ্ধ’ শুরু হতে পারে: ইরান

ইরানের প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ রেজা আরেফ সম্প্রতি সতর্ক করে বলেছেন যে, ইসরায়েলের সঙ্গে যেকোনো মুহূর্তে যুদ্ধ শুরু হতে পারে। তিনি জানিয়েছেন, ইরান সবসময় প্রস্তুত থাকতে হবে এবং বর্তমানে যে পরিস্থিতি চলছে তা কেবল সাময়িক যুদ্ধবিরতি।
বিস্তারিত
মোহাম্মদ রেজা আরেফ সোমবার বলেছেন, ইসরায়েলের কোনো আক্রমণ মোকাবিলায় ইরান সব সময় প্রস্তুত। তিনি আরও বলেন, ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে কোনো চূড়ান্ত যুদ্ধবিরতি চুক্তি নেই। ২০২৫ সালের জুনে দুই দেশের মধ্যে টানা ১২ দিন ধরে পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটেছিল। ইসরায়েলের হামলায় ইরানের পরমাণু ও সামরিক স্থাপনাসহ বেসামরিক এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে বহু মানুষ নিহত হন, যার মধ্যে ছিলেন পরমাণু বিজ্ঞানী ও সামরিক কর্মকর্তা।
তারপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় দুই দেশের মধ্যে সংঘাত সাময়িকভাবে থামানো সম্ভব হয়।
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সংঘাত নতুন নয়। ইতিহাসে বহুবার দুই দেশের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা লক্ষ্য করা গেছে। বিশেষ করে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরেই সতর্কবার্তা দিয়ে আসছে। ইরান যদি পুনরায় পরমাণু সমৃদ্ধ কার্যক্রম শুরু করে, তাহলে ইসরায়েল তার স্থাপনাগুলিতে হামলা চালাতে পারে।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির সামরিক উপদেষ্টা ইয়াহিয়া রহিম সাফাভিও একইসঙ্গে জানিয়েছেন, তারা সব ধরনের খারাপ পরিস্থিতির জন্য পরিকল্পনা প্রস্তুত করছে।
সাম্প্রতিক সংঘাত ও তার প্রভাব
গত জুনের সংঘাতের সময় ইরান ও ইসরায়েল একে অপরের ওপর টানা হামলা চালায়। ইসরায়েলের হামলায় ইরানের গুরুত্বপূর্ণ পরমাণু স্থাপনা, সামরিক ঘাঁটি ও সাধারণ মানুষের বসতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নিহতের সংখ্যা হাজারের বেশি। সংঘাতের প্রভাব কেবল দু’দেশে সীমাবদ্ধ ছিল না; আন্তর্জাতিক পরিসরে তীব্র উদ্বেগ সৃষ্টি করে।
সংঘাতের পর ইরানের অর্থনীতি ও জনগণের জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। স্থাপনাগুলোর ক্ষতি, নিরাপত্তার উদ্বেগ ও বৈদেশিক নীতি চ্যালেঞ্জের কারণে দেশটি এখন সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
পরিসংখ্যান ও আন্তর্জাতিক নজরদারি
জাতিসংঘের পরমাণু নজরদারি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, পরমাণু অস্ত্রহীন দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র ইরান ৬০ শতাংশ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে সক্ষম। আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুযায়ী, দেশটি ৩.৬৭ শতাংশ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারবে। তবে পরমাণু অস্ত্র তৈরির জন্য ৯০ শতাংশ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম প্রয়োজন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরানের এই সক্ষমতা ও পরমাণু কর্মসূচি মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। যে কোনো সামরিক সংঘাতের সম্ভাবনা আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।
বিশ্লেষণ ও ভবিষ্যত পরিস্থিতি
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বর্তমান পরিস্থিতি অত্যন্ত সংবেদনশীল। ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যেকোনো সামরিক উত্তেজনা দ্রুত বড় ধরনের সংঘাতে রূপ নিতে পারে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ও অন্যান্য প্রতিবেশী দেশের প্রতিক্রিয়ার কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ইরান-ইসরায়েল সংঘাত নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রয়োজনীয় কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্যথায়, মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা বিপন্ন হতে পারে।
সমাপ্তি
ইরানের শীর্ষ নেতাদের সতর্কবার্তা ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, যুদ্ধের যে কোনো মুহূর্তে পুনরায় শুরু হতে পারে। সংঘাতের সম্ভাবনা কেবল দুই দেশ নয়, আন্তর্জাতিক নিরাপত্তাকেও প্রভাবিত করতে পারে। বিশ্লেষকদের মতে, পরিস্থিতি কীভাবে মোড় নেবে তা নির্ভর করছে পরবর্তী কূটনৈতিক ও সামরিক পদক্ষেপের ওপর।
এম আর এম – ০৯৩৫, Signalbd.com