ভারতের বিরুদ্ধে কড়া বাণিজ্যিক পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। রাশিয়ার কাছ থেকে অপরিশোধিত তেল কেনা অব্যাহত রাখায় আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ভারত থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ‘উল্লেখযোগ্য পরিমাণে’ শুল্কহার বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। এমন অবস্থান বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
ট্রাম্পের নতুন ঘোষণা: শুল্ক বাড়ানো অনিবার্য
সিএনবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, “ভারত আমাদের ভালো বাণিজ্যিক অংশীদার নয়। তারা আমাদের পণ্যে কম আগ্রহী, অথচ আমাদের বাজার ব্যবহার করছে নিজের সুবিধার্থে। রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনা বন্ধ না করায় আমরা তাদের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করবো। আমি মনে করি, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই এটি কার্যকর হতে পারে।”
ট্রাম্পের এই বক্তব্য এসেছে এমন সময়, যখন বাইডেন প্রশাসনও ভারতীয় বাণিজ্যের নানা দিক পুনর্মূল্যায়নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ফলে ট্রাম্পের এই হুঁশিয়ারি কেবল রাজনৈতিক প্রচারণা নয়, বাস্তব সিদ্ধান্তে পরিণত হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য নিয়ে আগেও ক্ষুব্ধ ছিলেন ট্রাম্প
২০১৭-২০২১ মেয়াদে প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় ট্রাম্প একাধিকবার ভারতকে ‘ট্যারিফ কিং’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন। তিনি বারবার অভিযোগ করেছেন, ভারত তার দেশে আমদানি করা মার্কিন পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপ করে, কিন্তু নিজে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য পাঠায় খুব কম খরচে।
২০২৫ সালের নির্বাচনী প্রচারণায় ফিরে এসে ট্রাম্প ফের ভারতকে কেন্দ্র করে কড়া বার্তা দিচ্ছেন। ট্রুথ সোশ্যালে দেয়া সাম্প্রতিক এক পোস্টে তিনি বলেন, “রাশিয়া থেকে তেল কিনে ভারত শুধু মার্কিন স্বার্থকে ক্ষুণ্ন করছে না, বরং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্যও হুমকি তৈরি করছে।”
ভারতের জবাব: যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান একচোখা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত
ট্রাম্পের বক্তব্যের পরই ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, “যুদ্ধের সময় ভারতের প্রচলিত তেল সরবরাহকারীরা ইউরোপমুখী হয়ে পড়ে, তাই আমাদের রাশিয়ার সস্তা তেলের দিকে ঝুঁকতে হয়। এমন পরিস্থিতিতে কেবল ভারতকে নিশানা করাটা অযৌক্তিক ও পক্ষপাতদুষ্ট।”
ভারতের অভিযোগ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র নিজেরাও রাশিয়ার সঙ্গে একাধিক বাণিজ্যিক লেনদেন অব্যাহত রেখেছে। তাহলে কেবল ভারতকে শাস্তি দেয়ার ঘোষণা ‘দ্বিমুখী নীতির’ বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করছে নয়াদিল্লি।
শুল্ক বাড়ানোর বাস্তব প্রভাব: কোন কোন খাতে পড়বে প্রভাব
বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র যদি ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করে, তাহলে এর সরাসরি প্রভাব পড়বে—
- ভারতীয় টেক্সটাইল, ইলেকট্রনিকস এবং ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্যে
- যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানিনির্ভর ভারতীয় কোম্পানিগুলোর আয় হ্রাস পাবে
- দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও অবনতি ঘটবে
- এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ভূ-রাজনৈতিক ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে
বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দামে অস্থিরতা বাড়বে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ট্রাম্প কি কৌশলগত চাল দিচ্ছেন?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ট্রাম্প এই ঘোষণা মূলত নির্বাচনী প্রচারের অংশ হিসেবেই দিচ্ছেন। তিনি তার সমর্থকদের কাছে আবারও প্রমাণ করতে চাইছেন যে, তিনি আমেরিকান বাণিজ্যিক স্বার্থ রক্ষায় আগের মতোই কঠোর অবস্থানে আছেন।
তবে এটি কেবল বক্তব্যে সীমাবদ্ধ না থেকে বাস্তব নীতিতে রূপ নিলে তা গোটা বৈশ্বিক অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের টানাপোড়েন দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।
উল্লেখযোগ্য সিদ্ধান্ত: ৭ আগস্ট থেকে নতুন শুল্ক কার্যকর?
জানা গেছে, ট্রাম্প ইতোমধ্যে একটি নির্বাহী আদেশের খসড়া তৈরি করেছেন যেখানে ভারতসহ আরও কিছু দেশের পণ্যের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের প্রস্তাব রয়েছে। এই আদেশ ৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হতে পারে।
কী হারে শুল্ক বাড়বে তা এখনও স্পষ্ট নয়, তবে এটি উল্লেখযোগ্য হারে হবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনায় ভারতকে আর্থিক জরিমানার মুখেও পড়তে হতে পারে।
সামনের দিনগুলোতে কী ঘটতে পারে?
ট্রাম্পের হুমকি বাস্তবে রূপ নিলে তা কেবল বাণিজ্য নয়, কূটনৈতিক সম্পর্কেও নতুন উত্তেজনার সূচনা ঘটাবে। একদিকে ভারত তার নিজস্ব জ্বালানি নিরাপত্তা বজায় রাখতে চাইছে, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র চাইছে রাশিয়ার ওপর চাপ বাড়াতে। এই অবস্থায় আগামী কয়েক দিনের ঘটনাপ্রবাহ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
বিশ্লেষকদের মতে, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক আগামী দিনে কোন দিকে মোড় নেয়, তা নির্ভর করবে উভয় দেশের পরবর্তী প্রতিক্রিয়ার ওপর।
এম আর এম – ০৭০৬, Signalbd.com



