ভালো স্বামী বানাতে সেনেগালে ‘স্কুল ফর হাসবেন্ডস’

সেনেগালের একটি বিশেষ স্কুলে পুরুষদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে কিভাবে তারা সহানুভূতিশীল ও দায়িত্বশীল স্বামী হতে পারে। জাতিসংঘের সহযোগিতায় এই উদ্যোগটি নারীদের স্বাস্থ্য এবং পরিবারিক সম্পর্ককে শক্তিশালী করতে সহায়তা করছে।
সেনেগালে ‘স্কুল ফর হাসবেন্ডস’ কার্যক্রম
আফ্রিকার পশ্চিম অংশের সেনেগালে একটি ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ চালু হয়েছে, যার নাম ‘স্কুল ফর হাসবেন্ডস’। এখানে পুরুষদের শেখানো হয় কিভাবে তারা ভালো স্বামী ও দায়িত্বশীল পিতা হতে পারে। জাতিসংঘের সহায়তায় পরিচালিত এই স্কুলটি পুরুষদের পারিবারিক জীবন, স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং সামাজিক আচরণে ইতিবাচক ভূমিকা গ্রহণের জন্য প্রশিক্ষণ দেয়।
স্কুলে ইমাম ইব্রাহীম ডায়ানে পুরুষদের সামনে হাদিসের বাণী তুলে ধরেন, যেখানে বলা হয়েছে, “যে পুরুষ স্ত্রী ও সন্তানদের সহায়তা করে না, সে ভালো মুসলিম নয়।” তিনি নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন কিভাবে সন্তানকে গোসল করানো এবং স্ত্রীর গৃহকর্মে সহায়তা করা যেতে পারে।
পুরুষদের জন্য প্রশিক্ষণের গুরুত্ব
সেনেগালে এবং পশ্চিম আফ্রিকার অন্যান্য দেশে পুরুষরাই পরিবারের বড় সিদ্ধান্ত নেন। বিশেষ করে স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা এবং গর্ভকালীন যত্ন সংক্রান্ত বিষয়গুলোর জন্য স্বামীর অনুমতি প্রয়োজন হয়। এই বাস্তবতা বিবেচনা করে ‘স্কুল ফর হাসবেন্ডস’ উদ্যোগটি পুরুষদের শিক্ষিত ও সচেতন করতে শুরু হয়েছে।
প্রশিক্ষণ নেওয়া পুরুষরা জানাচ্ছেন, তাদের পরিবারিক জীবনে এবং সন্তান লালন-পালনে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এসেছে। হাবিব ডিয়ালো নামের এক ৬০ বছর বয়সী পুরুষ জানান, ইমামের খুতবা এবং প্রশিক্ষণ ক্লাসের পর তিনি বুঝতে পেরেছেন বাড়িতে সন্তানের জন্মদান কতটা গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, “আমার ছেলে প্রথমে কিছুটা দ্বিধা প্রকাশ করছিল, কিন্তু পরে আমি তাকে বোঝাতে পেরেছি যে এটা তার স্ত্রী ও সন্তানের জন্য কতটা জরুরি।”
প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
নারীরা এই উদ্যোগকে বিশেষভাবে সাধুবাদ জানান। তাদের মতে, প্রশিক্ষণের পর স্বামীদের আচরণে পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। অনেক স্বামী গৃহকর্মে সাহায্য করছে, সন্তানদের যত্নে আরও সক্রিয় হচ্ছে এবং পরিবারিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়িয়েছে।
খারি নডেই নামে এক ৫২ বছর বয়সী পুরুষ জানান, “আগে আমার স্বামী শুধু আদেশ করত, এখন রান্না করে, ঘরের কাজে সাহায্য করে এবং পরিবারের সিদ্ধান্তে সক্রিয় অংশ নিচ্ছে।”
প্রোগ্রামের পরিসর ও ফলাফল
২০১১ সালে চালু হওয়া এই প্রোগ্রামটি এখন সেনেগালের নারী, পরিবার, লিঙ্গ ও শিশু সুরক্ষা মন্ত্রণালয়ের নজরে এসেছে। তারা এটিকে মাতৃ ও নবজাতক মৃত্যুহার কমানোর একটি কার্যকর কৌশল হিসেবে দেখছে।
বর্তমানে এই স্কুলটি ২০টির বেশি কেন্দ্রে পরিচালিত হচ্ছে এবং ৩০০ জনের বেশি পুরুষ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা পিয়ার এডুকেটর হিসেবে বিভিন্ন ঘরে গিয়ে পরিবারিক স্বাস্থ্য এবং সহানুভূতিশীল স্বামীর ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করছেন।
জাতিসংঘের লক্ষ্য অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে মাতৃমৃত্যু হার প্রতি ১ লাখ জীবিত জন্মে ৭০-এ এবং নবজাতক মৃত্যুহার প্রতি ১ হাজারে ১২-এর নিচে নামানো হবে। ২০২৩ সালে সেনেগালে মাতৃমৃত্যুর হার ছিল ২৩৭ এবং নবজাতক মৃত্যুহার ছিল ২১। এই প্রোগ্রাম সেই লক্ষ্য অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিবারের ভিতরে পুরুষদের সচেতনতা বৃদ্ধি না হলে নারী ও শিশুর স্বাস্থ্যকে উন্নত করা কঠিন। এই স্কুল পুরুষদের দায়িত্বশীল স্বামী ও বাবা হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়ক। তারা পরিবারিক সম্পর্কের মান উন্নয়নের পাশাপাশি সমাজে লিঙ্গ সমতা ও স্বাস্থ্য সচেতনতার প্রসার ঘটাচ্ছে।
ভবিষ্যতের লক্ষ্য
প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পুরুষদের সংখ্যা বাড়ানোর মাধ্যমে সেনেগালের আরও বেশি পরিবারকে স্বাস্থ্য সচেতন ও সুখী করা সম্ভব। বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন, এই ধরনের উদ্যোগ অন্যান্য আফ্রিকান দেশেও প্রয়োগ করা যেতে পারে।
সংক্ষিপ্তসার
‘স্কুল ফর হাসবেন্ডস’ উদ্যোগটি শুধুমাত্র পরিবারিক জীবনে নয়, পুরো সমাজের স্বাস্থ্য ও সচেতনতার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ভবিষ্যতে এই ধরনের প্রোগ্রাম আরো বিস্তৃত হলে, পুরুষদের দায়িত্বশীল আচরণের মাধ্যমে নারী ও শিশুর জীবনমান উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হতে পারে।
এম আর এম – ০৯১০, Signalbd.com