বিশ্ব

রাশিয়ায় কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ, নিহত অন্তত ১১

রাশিয়ার রাজধানী মস্কো থেকে প্রায় ৩২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে রিয়াজান অঞ্চলে একটি কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটেছে। শুক্রবার স্থানীয় সময় দুপুরে সংঘটিত এ ঘটনায় অন্তত ১১ জন প্রাণ হারিয়েছেন এবং আরও ১৩০ জন আহত হয়েছেন বলে রুশ কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে। বিস্ফোরণের পর ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও মানুষ আটকে আছে কিনা তা খুঁজে দেখছেন উদ্ধারকর্মীরা।

বিস্ফোরণের ঘটনার বিস্তারিত: 

রাশিয়ার জরুরি ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিস্ফোরণের পরপরই অগ্নিকাণ্ড ছড়িয়ে পড়ে এবং ভবনের একটি বড় অংশ ধসে পড়ে। ধ্বংসস্তূপের ভেতরে আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধারে শতাধিক কর্মী কাজ করছেন। বিস্ফোরণের পর ঘটনাস্থলের ভিডিও ও ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে দেখা গেছে ধোঁয়ার কুণ্ডলী আকাশে ছড়িয়ে পড়ছে।

রিয়াজান অঞ্চলের গভর্নর পাভেল মালকভ জানিয়েছেন, কারখানার ভেতরে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় দাহ্য পদার্থে আগুন ধরে যাওয়ায় বিস্ফোরণ ঘটে থাকতে পারে। তবে এখনো নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না।

কারখানার গুরুত্বস্থানীয় : 

গণমাধ্যমগুলো বলছে, যে কারখানায় বিস্ফোরণ ঘটেছে সেটি গানপাউডার ও গোলাবারুদ তৈরির জন্য পরিচিত। এর আগে ২০২১ সালে একই কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণে অন্তত ১৭ জন নিহত হয়েছিলেন। সেই ঘটনার পর কারখানার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও পুনরায় এমন দুর্ঘটনা ঘটায় প্রশ্ন উঠছে কর্তৃপক্ষের দায়বদ্ধতা নিয়ে।

রিয়াজান অঞ্চল রাশিয়ার সামরিক ও অর্থনৈতিক অবকাঠামোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হিসেবে বিবেচিত হয়। এ কারণে সেখানে সংঘটিত যেকোনো দুর্ঘটনা আন্তর্জাতিকভাবে আলোচনার জন্ম দেয়।

উদ্ধারকাজ ও সরকারি প্রতিক্রিয়াদুর্যোগ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিস্ফোরণে আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থা গুরুতর। আহতদের স্থানীয় হাসপাতাল ও মস্কোর বিশেষায়িত হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। উদ্ধারকর্মীরা ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়া মানুষদের খুঁজে বের করতে ড্রোন, বিশেষ যন্ত্রপাতি এবং প্রশিক্ষিত কুকুর ব্যবহার করছেন।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এ ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং নিহতদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন। একইসঙ্গে একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

সম্ভাব্য কারণ ও তদন্তবিস্ফোরণের সঠিক কারণ এখনও স্পষ্ট নয়। স্থানীয় গণমাধ্যমের কিছু প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বারুদে আগুন ধরে যাওয়ার কারণেই দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। অন্যদিকে, সাম্প্রতিক সময়ে ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলার কারণে কারখানাটি টার্গেট হতে পারে বলেও সন্দেহ করা হচ্ছে।

তদন্তকারীরা সব সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছেন। প্রাথমিকভাবে প্রযুক্তিগত ত্রুটি বা নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে যদি কোনো বাহ্যিক হামলার প্রমাণ মেলে, তাহলে ঘটনাটি ভিন্ন মাত্রা পাবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়াঘটনার খবর প্রকাশিত হওয়ার পর বিশ্বের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম তা গুরুত্বের সঙ্গে প্রচার করছে। আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে যে, এটি শুধুমাত্র একটি দুর্ঘটনা নাকি চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতির সঙ্গে যুক্ত কোনো ঘটনা। বিশেষ করে ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার সংঘাত বাড়তে থাকায়, প্রতিটি দুর্ঘটনার পেছনে যুদ্ধ-সম্পর্কিত কারণ খোঁজা হচ্ছে।

স্থানীয় জনগণের প্রতিক্রিয়া : 

রিয়াজান অঞ্চলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। গভর্নর একদিনের শোক ঘোষণা করেছেন এবং সব সরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। নিহতদের পরিবার ও আহতদের জন্য সহায়তা তহবিল গঠনের কথাও জানানো হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, প্রতিবারই এ ধরনের দুর্ঘটনার পর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় কিন্তু নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয় না। তাদের অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও শিথিল নিরাপত্তা নীতিই এসব প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার মূল কারণ।

আশঙ্কাবিস্ফোরণটি যদি প্রযুক্তিগত কারণে ঘটে থাকে, তবে রাশিয়ার সামরিক কারখানাগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠবে। আর যদি এটি ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলার অংশ হয়ে থাকে, তবে দুই দেশের চলমান সংঘাত আরও তীব্র আকার ধারণ করতে পারে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যেভাবেই হোক এই ঘটনার প্রভাব রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে পড়বেই।


রাশিয়ার রিয়াজান অঞ্চলের এই বিস্ফোরণ কেবল একটি দুর্ঘটনা নয়, বরং এটি দেশটির নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর নতুন করে আলো ফেলেছে। তদন্ত শেষে সত্য উদঘাটিত হলে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এর প্রভাব আরও স্পষ্ট হয়ে উঠবে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button