বিশ্ব

গাজায় ত্রাণের অপেক্ষায় ১৩ ফিলিস্তিনি নিহত, খাদ্য সংকটে আরও ৪ জনের মৃত্যু

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় আবারও ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে ইসরাইলি সেনারা। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ইসরাইলি বিমান ও স্থল হামলায় অন্তত ৩২ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে শুধু ত্রাণের অপেক্ষায় থাকা ১৩ জন বেসামরিক মানুষকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এছাড়া দীর্ঘস্থায়ী খাদ্য সংকট ও অপুষ্টিতে আরও ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।

আল জাজিরার শুক্রবারের প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজা সিটির এক আবাসিক ভবনে ইসরাইলি বিমান হামলায় কমপক্ষে আটজন নিহত হন। শহরের তুফাহ এলাকায় আলাদা একটি হামলায় প্রাণ হারান আরও দুইজন। বাকি নিহতদের মধ্যে রয়েছেন উত্তর গাজার বিভিন্ন এলাকায় ত্রাণ সংগ্রহ করতে যাওয়া নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিরা।

ধ্বংসস্তূপে পরিণত গাজা

চিকিৎসা সূত্র জানিয়েছে, উত্তর গাজা এখন কার্যত বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। অধিকাংশ এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে, হাসপাতালগুলোতে ওষুধ এবং বিদ্যুৎ সংকট চরমে, আর খাদ্য মজুত প্রায় শেষ হয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, গাজায় এখন “পূর্ণাঙ্গ মানবিক বিপর্যয়” চলছে।

ত্রাণের জন্য প্রাণের ঝুঁকি

গাজার ত্রাণ পরিস্থিতি দিন দিন ভয়াবহ হয়ে উঠছে। জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার তথ্যমতে, খাদ্য, পানি ও চিকিৎসা সরঞ্জাম প্রবেশে ইসরাইলি অবরোধের কারণে মানুষকে এখন জীবন বাজি রেখে ত্রাণ সংগ্রহে যেতে হচ্ছে। বহু ক্ষেত্রে ইসরাইলি সেনারা ত্রাণ সংগ্রহের স্থানগুলোতেও হামলা চালাচ্ছে।

স্থানীয় এক বাসিন্দা আল জাজিরাকে বলেন,

“আমরা ক্ষুধায় মরছি, আর যারা খাবারের জন্য লাইনে দাঁড়াচ্ছে, তারা গুলিতে মারা যাচ্ছে। এখানে বেঁচে থাকার আর কোনো নিশ্চয়তা নেই।”

খাদ্য সংকট ও মৃত্যুর মিছিল

শুক্রবার পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, শুধু অপুষ্টি ও খাদ্য সংকটের কারণে গত এক সপ্তাহে অন্তত ১৯ জন মারা গেছেন, যাদের বেশিরভাগই শিশু ও বৃদ্ধ। ইসরাইলি অবরোধের ফলে গাজায় খাদ্য সরবরাহ কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। মানবাধিকার সংস্থা Save the Children জানিয়েছে, গাজার শিশুরা এখন “গুরুতর অপুষ্টি ও মানসিক আঘাতের” শিকার হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও নীরবতা

যুদ্ধবিরতির জন্য আন্তর্জাতিক চাপ থাকলেও ইসরাইলি সরকার এখনো সামরিক অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার আবারও গাজার পরিস্থিতিকে “অগ্রহণযোগ্য” বলে আখ্যা দিয়েছেন এবং অবিলম্বে মানবিক করিডোর খোলার আহ্বান জানিয়েছেন।

অন্যদিকে, কয়েকটি পশ্চিমা দেশ গাজার প্রতি সহানুভূতি জানালেও সরাসরি ইসরাইলের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেয়নি। বিশ্লেষকদের মতে, এই দ্বিমুখী নীতি ফিলিস্তিনিদের দুর্ভোগ আরও দীর্ঘায়িত করছে।

যুদ্ধের পরিসংখ্যান (২০২৩–২০২৫)

  • নিহত ফিলিস্তিনি: ৪৫,০০০+
  • আহত: ৯৮,০০০+
  • বাস্তুচ্যুত: প্রায় ২০ লাখ
  • ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবন: ৬০% এর বেশি
  • অবরোধকাল: ১৮ মাসের বেশি

(তথ্যসূত্র: আল জাজিরা, জাতিসংঘ, স্থানীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়)

মানবিক বিপর্যয় থামাতে কী করা জরুরি?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গাজার সংকট সমাধানে তিনটি বিষয় জরুরি—

  1. তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি
  2. মানবিক করিডোর খুলে দেওয়া
  3. আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় যুদ্ধাপরাধের বিচার

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠকে এই বিষয়গুলো আলোচনায় আসার কথা রয়েছে। তবে ইসরাইলের মিত্রদের নীতি পরিবর্তন ছাড়া বড় ধরনের অগ্রগতি সম্ভব নয় বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

গাজা এখন শুধু একটি যুদ্ধক্ষেত্র নয়; এটি বিশ্বের চোখের সামনে ঘটে যাওয়া এক নীরব গণহত্যা। ত্রাণের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের প্রাণ কেড়ে নেওয়া এবং খাদ্য সংকটে শিশুদের মৃত্যু আন্তর্জাতিক আইনের চরম লঙ্ঘন। মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, যদি বিশ্ব এখনো নীরব থাকে, তবে ইতিহাসে এটি মানবতার এক কালো অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হবে।

MAH – 12326 ,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Advertisement
Back to top button