বিশ্ব

‘বাবার জন্য ভয় হয়’, বলেছিল গাজায় নিহত সাংবাদিক আনাসের ছোট্ট শিশুটি

গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় আল-জাজিরার পাঁচ সাংবাদিক নিহত হওয়ার ঘটনায় সারা বিশ্বের নজর কাড়ছে বিশেষ করে নিহত সাংবাদিক আনাস আল-শরিফের চার বছর বয়সী মেয়ে শামের আবেগঘন ভিডিও বার্তা। যুদ্ধের ক্রূরতায় আক্রান্ত গাজায় বসবাসরত শিশুটি বাবার জন্য ভয়ের কথা প্রকাশ করে মানবতার কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছে।

গাজায় নিহত আল-জাজিরার সাংবাদিক আনাস আল-শরিফ

গত ১০ আগস্ট রাতে গাজা শহরের আল-শিফা হাসপাতালের বাইরে ইসরায়েলি বিমান হামলায় আল-জাজিরার বিশিষ্ট সংবাদদাতা আনাস আল-শরিফসহ পাঁচ জন সাংবাদিক নিহত হন। আনাস আল-শরিফ গাজার উত্তর অংশ থেকে নিয়মিত প্রতিবেদন দিতেন এবং ফিলিস্তিনের যুদ্ধক্ষেত্রের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত ছিলেন।

শামের হৃদয়ভেদী ভিডিও বার্তা

আনাসের ছোট মেয়ে শাম সম্প্রতি একটি ভিডিওতে দেখা যায় যেখানে সে গাজার ক্রমবর্ধমান বোমা হামলার ভয়াবহতা বর্ণনা করে। চার বছর বয়সী এই শিশু বলেছে, “বাবার জন্য ভয় হয়, কারণ আমার বাড়িতে বোমা পড়ে গেছে, আমার দাদাকে হারিয়েছি। আমি শান্তিতে বাঁচতে চাই।”

শাম আরও বলে, “আমরা খাবার চাই, পানি চাই, বোমা বন্ধ হোক। আমি চাই সবাই যেন শান্তিতে থাকে। আমি আমার বাবার কাছে ফিরে যেতে চাই।”

এই ভিডিওটি গাজায় দীর্ঘদিনের সংঘাত ও মানবিক দুর্ভোগের এক হৃদয়গ্রাহী সাক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।

গাজায় চলমান সংঘাত ও সাংবাদিকদের দুর্দশা

ফিলিস্তিনের গাজা অঞ্চলে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সঙ্গে হামাসের সংঘাত এখন প্রায় দুই বছরের ওপর চলছে। এই সময়কালে প্রায় ২০০ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। সাংবাদিকদের ওপর হামলা বিশ্ব সংবাদমাধ্যম ও মানবাধিকার সংগঠনের তীব্র নিন্দার সম্মুখীন হয়েছে।

আল-জাজিরার মতো আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিকরা যুদ্ধের ময়দানে সত্যবোধ তুলে ধরতে গিয়ে নিয়মিত বিপদে থাকেন। এই হামলার ফলে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ও বেসামরিক মানুষের তথ্য পাওয়ার অধিকার প্রভাবিত হচ্ছে।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর বক্তব্য ও পাল্টা প্রতিক্রিয়া

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, আনাস আল-শরিফ হামাসের একজন সদস্য এবং তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সাথে যুক্ত ছিলেন। তারা এই হামলা ‘সন্ত্রাসী মোকাবেলা’ হিসেবে উপস্থাপন করেছে। তবে আন্তর্জাতিক সাংবাদিক সংগঠনগুলো এই দাবিকে ভিত্তিহীন ও প্রতিবাদের দাবিদার হিসেবে অভিহিত করেছে।

সিপিজে (কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস) তাদের বিবৃতিতে বলেছে, “সাংবাদিকদের সন্ত্রাসী আখ্যায়িত করে তাদের হত্যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটা সংবাদ স্বাধীনতার বিরুদ্ধে এক ভয়াবহ আঘাত।”

মানবিক সংকট ও আন্তর্জাতিক প্রতিবাদ

গাজায় যুদ্ধ চলাকালীন লাখো মানুষ খাদ্য, পানি ও চিকিৎসার মতো মৌলিক প্রয়োজন থেকে বঞ্চিত হয়ে পড়েছেন। শামসহ অসংখ্য শিশু ও সাধারণ মানুষ এ কষ্টে রয়েছে। এই ঘটনার পর আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এবং বিশ্ব নেতারা পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য কঠোর আহ্বান জানিয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, গাজায় সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জরুরি দায়িত্ব। যুদ্ধক্ষেত্রে সত্য ও তথ্য পৌঁছে দিতে সাংবাদিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করাই মানবাধিকারের ভিত্তি।

শেষ কথা

গাজার এই নিষ্ঠুর সংঘাতে প্রাণ হারানো সাংবাদিক আনাস আল-শরিফের মতো সাহসী সাংবাদিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আমরা আশা করি এই ধরনের হত্যাকাণ্ড যেন আর কখনো না ঘটে। শামের মতো শিশুরা যেন শান্তির স্বপ্ন দেখতে পারে, তাদের ভয়ে নয়। গাজা অঞ্চলের দীর্ঘ যুদ্ধবিরতি ও মানবিক সংকট দ্রুত সমাধান হওয়া আবশ্যক।

এম আর এম – ০৮০৭, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button