বিশ্ব

নেতানিয়াহুর যুদ্ধনীতির ওপর আস্থা হারিয়েছেন ইসরায়েলি অর্থমন্ত্রী

Advertisement

ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোটরিচ গাজা যুদ্ধ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর যুদ্ধনীতির ওপর তার আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন। তিনি গাজা উপত্যকায় নেতানিয়াহুর বর্তমান কৌশলকে অসমর্থন জানিয়ে, দ্রুত এবং চূড়ান্ত বিজয়ের লক্ষ্যে ব্যাপক সামরিক অভিযান চালানোর পক্ষে মত প্রকাশ করেছেন।

নেতানিয়াহুর যুদ্ধনীতির ওপর অর্থমন্ত্রীর আপত্তি

বেজালেল স্মোটরিচ, যিনি ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থী রাজনৈতিক নেতা হিসেবে পরিচিত, শনিবার এক ভিডিও বার্তায় জানান, তিনি আর বিশ্বাস করেন না যে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু সেনাবাহিনীকে সফলভাবে যুদ্ধ পরিচালনা করতে সক্ষম বা ইচ্ছুক। স্মোটরিচের মতে, গাজা দখলের ক্ষেত্রে নেতানিয়াহুর “ধাপে ধাপে” পরিকল্পনা কার্যকর নয় এবং তা সফলতার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, বর্তমান মন্ত্রিসভার পরিকল্পনাটি আংশিক বিজয়ের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে, যা হামাসের বিরুদ্ধে চাপ সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যেই সীমাবদ্ধ। তবে স্মোটরিচ দাবি করেন, এ ধরনের অসম্পূর্ণ কৌশল কোনো ফল দেবে না, বরং যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করবে। তিনি নেতানিয়াহুকে আহ্বান জানান যে, যেন যুদ্ধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো আংশিক চুক্তি বা মাঝপথের সমাধানে সন্তুষ্ট না হন।

গাজা যুদ্ধের বর্তমান পরিস্থিতি ও নেতানিয়াহুর কৌশল

প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজা যুদ্ধকে শেষ করার জন্য পাঁচটি মূল নীতি প্রকাশ করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে হামাসের নিরস্ত্রীকরণ, বন্দিদের মুক্তি, গাজা উপত্যকার সামরিকীকরণ, নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ এবং বিকল্প বেসামরিক প্রশাসনের প্রতিষ্ঠা। তিনি বারবার বলেছেন যে গাজার মানুষকে মুক্ত করতে ইসরায়েল যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে, এটি দখল করতে নয়।

গাজার ৭০-৭৫ শতাংশ এলাকা ইতোমধ্যে ইসরায়েলের সামরিক নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে এখনও গাজা সিটি ও কেন্দ্রীয় আশ্রয় শিবিরে হামাসের শক্ত ঘাঁটি অবশিষ্ট আছে, যেগুলো ভাঙার নির্দেশনা আইডিএফকে (ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী) দেওয়া হয়েছে। নেতানিয়াহুর পরিকল্পনা অনুযায়ী, বেসামরিক জনগণকে নিরাপদ অঞ্চলে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে, যেখানে তাদের খাদ্য, পানি এবং চিকিৎসাসহ মানবিক সেবা নিশ্চিত করা হবে।

নিরাপত্তা মন্ত্রিসভার অবস্থান ও মতবিরোধ

ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা নেতানিয়াহুর “ধাপে ধাপে” গাজা দখল পরিকল্পনা অনুমোদন দিয়েছে, যার লক্ষ্য ফিলিস্তিনি জনগণকে উত্তর থেকে দক্ষিণে স্থানান্তরিত করা। তবে এ পরিকল্পনাকে দেশের উচ্চস্তরের নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও সেনাবাহিনী নেতারা ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন। তাদের মতে, এটি হামাসের হাতে আটক থাকা ইসরায়েলি বন্দিদের জীবন এবং সেনাদের নিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকি সৃষ্টি করতে পারে।

এই মতবিরোধ গাজা যুদ্ধের কৌশল নিয়ে ইসরায়েলি সরকারের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের এক পরিষ্কার চিত্র তুলে ধরে। অর্থমন্ত্রী স্মোটরিচের বক্তব্য এবং নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের উদ্বেগ থেকে বোঝা যায় যে, যুদ্ধের কৌশল নিয়ে সরকারের মধ্যে বিস্তর মতভেদ বিরাজ করছে।

গাজায় মানবিক সংকট ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া গাজা যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৬১ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। গাজা উপত্যকা সম্পূর্ণ ধ্বংসের মুখে এবং সেখানে এক ভয়াবহ মানবিক সংকট তৈরি হয়েছে। ত্রাণ ও চিকিৎসা সরবরাহের ক্ষেত্রে সংকট ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা বিশ্ব সম্প্রদায়ের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এই যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) নেতানিয়াহু ও তাঁর প্রতিরক্ষামন্ত্রীয়ের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। এছাড়াও গাজায় মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং গণহত্যার অভিযোগে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আইসিজে মামলা চলছে। এসব আন্তর্জাতিক চাপ সত্ত্বেও, ইসরায়েল যুদ্ধ অব্যাহত রেখেছে।

ইসরায়েলের ভবিষ্যত যুদ্ধনীতির সম্ভাবনা

অর্থমন্ত্রী স্মোটরিচের মত প্রকাশ যুদ্ধনীতির ওপর নেতানিয়াহুর আধিপত্যের বিরুদ্ধে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে ধরা হচ্ছে। এ অবস্থায় ইসরায়েলের ভবিষ্যত কৌশল কেমন হবে তা নির্ভর করবে মন্ত্রিসভার অভ্যন্তরীণ একজোটতা এবং সেনাবাহিনীর কার্যকরী ভূমিকার ওপর।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সামরিক বিজয় ছাড়া নেতানিয়াহুর নীতিগুলো সফল হতে পারবে না। যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে গাজার মানবিক সংকট আরো তীব্র হবে এবং আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধি পাবে। আর তা ইসরায়েলের রাজনৈতিক অবস্থানকে দুর্বল করতে পারে।

এম আর এম – ০৭৯৩, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button