বিশ্ব

ইসরাইলি হামলার আশঙ্কায় পরমাণু বিজ্ঞানীদের আত্মগোপনে পাঠিয়েছে ইরান

Advertisement

ইসরাইলের সঙ্গে চলমান উত্তেজনার মধ্যে ইরানের শীর্ষস্থানীয় পরমাণু বিজ্ঞানীদের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। সাম্প্রতিক কয়েকটি প্রাণঘাতী হামলার পর, বেঁচে থাকা বিজ্ঞানীদের দ্রুত আত্মগোপনে পাঠিয়েছে তেহরান সরকার। ইরানি কর্মকর্তারা বলছেন, এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে ইসরাইলি বাহিনীর সম্ভাব্য পুনঃহামলার ঝুঁকি কমানোর জন্য।

ইসরাইলি হামলার সর্বশেষ ঘটনা

ইরানি ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের তথ্যমতে, গত কয়েক মাসে ইসরাইলি অভিযানে অন্তত এক ডজন শীর্ষস্থানীয় পরমাণু বিশেষজ্ঞ নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছেন সাইয়্যেদ মোস্তাফা সাদাতি-আরমাকি, যিনি তাঁর স্ত্রী, সন্তান ও শ্বশুর-শাশুড়িসহ এক হামলায় প্রাণ হারান। ইরান দাবি করেছে, এই হামলাগুলো বেসামরিক আবাসিক এলাকায় চালানো হয়েছে, যার সঙ্গে সামরিক স্থাপনার কোনো সম্পর্ক ছিল না।

বিজ্ঞানীদের আত্মগোপনে পাঠানোর সিদ্ধান্ত

ইরানের একজন জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে ইসরাইলি তালিকায় থাকা জীবিত বিজ্ঞানীদের মধ্যে অন্তত ১৫ জন তাদের নিজ বাড়িতে বা কর্মস্থলে নেই। তাঁদেরকে পরিবারসহ রাজধানী তেহরান এবং দেশের উত্তর উপকূলের নিরাপদ এলাকায় স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আপাতত তাঁদের স্থানে এমন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যাঁদের পারমাণবিক কর্মসূচির সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা নেই, যাতে হামলার লক্ষ্যবস্তু কমানো যায়।

দীর্ঘদিনের লক্ষ্যবস্তু

ইসরাইল দীর্ঘদিন ধরেই ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে তাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখে আসছে। যদিও আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা ও মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বলেছে, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে — এমন প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি। তবুও, ইসরাইল অভিযোগ করে আসছে যে, তেহরান গোপনে অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে এবং সেই অভিযোগের ভিত্তিতে তারা একের পর এক নিশানা ভেদ করছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

ইরান-ইসরাইল সংঘাতে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রও সরাসরি জড়িয়ে পড়েছে। জুন মাসে মার্কিন বিমান বাহিনী ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় বোমা বর্ষণ করে। এর পাল্টা হিসেবে ইরান কাতারে অবস্থিত একটি মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালায়।
এ ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ঘোষণা দেন, উভয় পক্ষ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। তবে ইরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ সতর্ক করেছে, চুক্তি ভঙ্গের যেকোনো প্রচেষ্টার জবাব তারা দিতে প্রস্তুত।

গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার

ইরান সম্প্রতি ইসরাইলের পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে একজনকে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে। অভিযোগ ছিল, ওই ব্যক্তি নিহত একজন পরমাণু বিজ্ঞানীর তথ্য ইসরাইলে সরবরাহ করেছিল।
সরকারি সূত্র বলছে, এই ধরনের ঘটনাই প্রমাণ করে যে, বিজ্ঞানীদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া জরুরি ছিল। পাশাপাশি দেশের গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক কেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো হয়েছে এবং প্রতিটি বিজ্ঞানীর ওপর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নজরদারি চলছে।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইসরাইলের এ ধরনের লক্ষ্যভিত্তিক হামলা মূলত ইরানের প্রযুক্তিগত অগ্রগতি থামানোর কৌশল। একই সঙ্গে এটি মধ্যপ্রাচ্যে শক্তির ভারসাম্য ইসরাইলের পক্ষে ধরে রাখার প্রচেষ্টা।
তবে অনেকেই বলছেন, এই হামলাগুলো দীর্ঘমেয়াদে উল্টো ফল দিতে পারে, কারণ ইরান এতে আরও আক্রমণাত্মক প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে।

পরিস্থিতির ভবিষ্যৎ

বর্তমানে যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকলেও ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে অবিশ্বাসের দেয়াল অটুট। বিশ্লেষকদের মতে, নতুন করে উত্তেজনা ছড়ানোর জন্য একটি ছোট ঘটনা যথেষ্ট হতে পারে। বিজ্ঞানীদের আত্মগোপনে পাঠানোর ঘটনা দেখায়, তেহরান পরিস্থিতিকে এখনো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছে।

শেষ কথা
ইরান ও ইসরাইলের সম্পর্ক বহু বছর ধরেই উত্তেজনাপূর্ণ। বিজ্ঞানীদের আত্মগোপন প্রমাণ করে, এই সংঘাত কেবল সামরিক বা রাজনৈতিক নয় — জ্ঞান ও প্রযুক্তির লড়াইও বটে। এখন দেখার বিষয়, এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা কতদিন কার্যকর থাকে, এবং পরবর্তী ঘটনাগুলো পরিস্থিতিকে কোন দিকে নিয়ে যায়।

এম আর এম – ০৭৭৪, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button