
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে সাম্প্রতিক বিমান দুর্ঘটনায় নিহত দুই শিক্ষকের স্মরণে সরকার রাষ্ট্রীয় সম্মাননা প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নিহতদের আত্মত্যাগের স্বীকৃতি হিসেবে এই সম্মাননা দিচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় শহিদ দুই শিক্ষক পাচ্ছেন রাষ্ট্রীয় সম্মাননা
রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনায় নিহত দুই শিক্ষককে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। সভার শুরুতেই বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে শোক প্রস্তাব গৃহীত হয় এবং তাঁদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
দুর্ঘটনার বিস্তারিত: কীভাবে ঘটলো এই মর্মান্তিক ঘটনা
গত ২১ জুলাই সোমবার, দুপুর ১টা ১৮ মিনিটের দিকে বিমান বাহিনীর একটি এফ-৭ বিজিজিআই (৭০১) মডেলের প্রশিক্ষণ বিমান উত্তরার দিয়াবাড়ীর পাশে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে আচমকাই বিধ্বস্ত হয়। উড়োজাহাজটি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবনে ধাক্কা খেয়ে আগুন ধরে যায়।
এই ঘটনায় স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও আশপাশের অনেক সাধারণ মানুষ হতাহত হন। এখন পর্যন্ত দুর্ঘটনায় ৩২ জন নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে কর্তৃপক্ষ, যার মধ্যে দুইজন শিক্ষক ছিলেন শিক্ষাকালীন কার্যক্রমে নিয়োজিত।
সম্মাননার পেছনের সিদ্ধান্ত ও লক্ষ্য
সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, নিহত দুই শিক্ষক দেশের ভবিষ্যৎ নির্মাণে যে নিষ্ঠা ও দায়িত্ববোধ নিয়ে কাজ করছিলেন, তাঁদের সেই আত্মত্যাগ ও মানবসেবার প্রতি সম্মান জানাতেই এই রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার সহকারী প্রেস সচিব সুচিস্মিতা তিথি বলেন, “সরকার মনে করে, এই শিক্ষকরা শুধুই দুর্ঘটনার শিকার নন, বরং তাঁরা শিক্ষাক্ষেত্রে অমূল্য অবদান রেখে গেছেন। তাঁদের স্মরণে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা প্রদান নৈতিক দায়িত্ব।”
আহতদের চিকিৎসা ও পরিবারকে সহায়তা
সরকার এ ঘটনায় শুধু নিহতদের নয়, আহতদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতেও তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে আহতদের জন্য একটি বিশেষ চিকিৎসা সেল গঠন করা হয়েছে।
এছাড়া নিহত শিক্ষকদের পরিবারের জন্য আর্থিক সহায়তা, সন্তানদের শিক্ষাব্যয় ও প্রয়োজনীয় পুনর্বাসন সেবা প্রদানেও সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে, যাতে নিহতদের পরিবার যথাযথ মর্যাদা ও সহায়তা পায়।
শিক্ষা মহলে শোক ও শ্রদ্ধা
এই দুর্ঘটনা দেশের শিক্ষা মহলে গভীর শোকের ছায়া ফেলেছে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষক সমিতি ও ছাত্র সংগঠন নিহত দুই শিক্ষককে “শিক্ষার শহিদ” হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান বলেন, “একজন শিক্ষক শুধু পাঠদান করেন না, তিনি সমাজ গঠনের স্তম্ভ। যারা জীবন দিয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন, তাঁরা সম্মানের দাবিদার।”
আগেও কী ঘটেছে এমন দুর্ঘটনা?
এফ-৭ মডেলের প্রশিক্ষণ বিমানের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন আগে থেকেই ছিল। গত ৫ বছরে অন্তত ৪টি দুর্ঘটনা ঘটেছে এই একই মডেলের বিমানে। প্রতিবারই কারণ হিসেবে যান্ত্রিক ত্রুটি ও প্রশিক্ষণজনিত সীমাবদ্ধতা উঠে এসেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিমান প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শহরের আবাসিক এলাকাগুলোর কাছাকাছি হওয়ায় ঝুঁকি অনেকগুণ বেড়ে গেছে। এ কারণে ভবিষ্যতে প্রশিক্ষণ এলাকা ও নিরাপত্তাব্যবস্থা নতুন করে পর্যালোচনার দাবি উঠেছে।
পরবর্তী করণীয় কী?
সরকার ঘোষণা দিয়েছে, নিহত শিক্ষকদের সম্মানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্মারক ফলক স্থাপন করা হবে এবং ভবিষ্যতে তাঁদের নামে শিক্ষাবৃত্তি চালু করা হতে পারে। এই সম্মাননা প্রদানের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হবে আগামী সপ্তাহে একটি রাষ্ট্রীয় আয়োজনে।
একইসঙ্গে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে নিরাপত্তা জোরদার ও ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা প্রতিরোধে নীতিমালা তৈরির কাজও শুরু করেছে সরকার।
সারসংক্ষেপ
এই দুর্ঘটনা যেমন আমাদের শোকাহত করেছে, তেমনি দুটি শিক্ষকের আত্মত্যাগ আমাদের জাতি হিসেবে গভীর ভাবনায় ফেলেছে। শিক্ষা পেশার সম্মান রক্ষায় এমন রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপ যেমন প্রশংসনীয়, তেমনি ভবিষ্যতে যাতে আর এমন ঘটনা না ঘটে — তার জন্য সরকারের সদিচ্ছা ও পদক্ষেপ এখন সময়ের দাবি।
কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, আমাদের নিরাপত্তা নীতিমালাগুলো কি যথেষ্ট শক্তিশালী? এবং সেই অনুযায়ী কি যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে?
এম আর এম – ০৫০৭, Signalbd.com