বিশ্ব

চীন–রাশিয়া থেকে ভারতকে দূরে রাখতে কয়েক দশকের মার্কিন প্রচেষ্টা ভেস্তে দিচ্ছেন ট্রাম্প: জন বোল্টন

 সাবেক মার্কিন নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শুল্ক নীতির কারণে ভারত রাশিয়া ও চীনের দিকে আরও ঝুঁকে পড়েছে, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের কৌশলগত পরিকল্পনাকে বিপন্ন করেছে।

পরিস্থতি ও ঘটনাচক্রের সারাংশ

সাবেক মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে জানান, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতিমালার কারণে ভারত এখন চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলছে। বিশেষ করে ট্রাম্পের ভারত বিরোধী শুল্ক আরোপের ফলশ্রুতিতে যুক্তরাষ্ট্রের কয়েক দশকের কৌশলগত প্রচেষ্টা ব্যাহত হচ্ছে। এই শুল্কগুলি ভারতের তেল ও অন্যান্য আমদানিতে বাড়ানো হয়েছে, যা ভারতকে রাশিয়া ও চীনের দিকে ধাবিত করছে। বোল্টনের মতে, এই পদক্ষেপ মার্কিন স্বার্থের বিপক্ষে যাচ্ছে এবং ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটাচ্ছে।

ট্রাম্পের শুল্ক নীতির বিস্তারিত

ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের উপর বেশ কয়েকটি শুল্ক আরোপ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে ২৫ শতাংশ ‘সেকেন্ডারি ট্যারিফ’ যা রাশিয়ার বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ হিসেবে ধরা হয়। এর ফলে ভারতের রাশিয়া থেকে তেল আমদানিতে সমস্যা দেখা দিয়েছে। বোল্টন বলেন, এই শুল্ক ভারতকে অনায়াসেই চীন ও রাশিয়ার কাছে ঠেলে দিয়েছে। একইসাথে, ট্রাম্প চীনের সঙ্গে বাণিজ্য নিয়ে তুলনামূলকভাবে নমনীয় থাকায় ভারতের প্রতি কঠোর নীতির সমন্বয় ঘটানো হয়নি, যা কৌশলগত ভুল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

মার্কিন কৌশল ও ভারত

কয়েক দশক ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে চীন ও রাশিয়ার প্রভাব থেকে দূরে রাখার জন্য নানা কৌশল গ্রহণ করেছে। ভারতের সঙ্গে সহযোগিতা বৃদ্ধি, সামরিক ও বাণিজ্যিক অংশীদারিত্ব গড়ে তোলা ছিল এর মূল লক্ষ্য। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের সময়কালে এই পরিকল্পনায় বাধা এসেছে। শুল্ক আরোপ এবং বাণিজ্যিক চাপ ভারতকে বিরক্ত করেছে এবং রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে তার সম্পর্ক আরও গভীর করেছে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ এশিয়ায় কৌশলগত অবস্থান দুর্বল হচ্ছে।

ভারত-রাশিয়া সম্পর্কের প্রভাব

রাশিয়ার সঙ্গে ভারত দীর্ঘদিনের সুসম্পর্ক রাখে, বিশেষ করে রণনীতিক ও তেল আমদানিতে। ট্রাম্পের শুল্ক আরোপ ভারতকে বাধ্য করেছে রাশিয়ার কাছাকাছি থাকার জন্য, যা রাশিয়ার ইউক্রেন যুদ্ধের পেছনে অর্থায়নে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। রাশিয়া এ বিষয়ে ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপকে অন্যায় ও অবৈধ বাণিজ্যিক চাপ হিসেবে প্রত্যাখ্যান করেছে। বোল্টনের মতে, এই পরিস্থিতি রাশিয়া-ভারত-চীন মহাজোটের সূচনা ঘটাতে পারে, যা মার্কিন স্বার্থের জন্য বড় হুমকি।

বিশ্লেষণ: মার্কিন নীতি ও ভবিষ্যত প্রভাব

ট্রাম্পের নীতির ফলে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ছাড়া, চীনের প্রতি নমনীয়তার কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত স্বার্থ সংকটাপন্ন হচ্ছে। বোল্টন বলেন, হোয়াইট হাউস যদি চীনের তুলনায় ভারতের উপর কম শুল্ক আরোপ করত, তাহলে পরিস্থিতি ভিন্ন হতো। ভারতের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ এবং চীনের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা সাময়িক বন্ধ রেখে মার্কিন প্রশাসন একটি বড় ভুল করেছে। এই ভুলের ফলে চীন-রাশিয়া ও ভারত আরও কাছে আসছে, যা ভবিষ্যতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ এশিয়া নীতি কঠিন করতে পারে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও রাজনৈতিক বিশ্লেষণ

বিশ্লেষকরা মনে করেন, ট্রাম্পের নীতির কারণে ভারতীয় কূটনীতি আরো জটিল হয়েছে। ভারত চীনের সঙ্গে সীমান্ত বিবাদ থাকা সত্ত্বেও রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে বাধ্য হচ্ছে। এই দ্বৈত কূটনীতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কঠিন একটি বাস্তবতা সৃষ্টি করেছে। অন্যদিকে রাশিয়া ও চীন এই পরিস্থিতিকে নিজেদের সুবিধায় ব্যবহার করতে পারছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে বৈঠককে এই পটভূমিতে নেওয়া উচিত, যেখানে ট্রাম্প ভারতের শুল্ক ইস্যুকে তার বৃহত্তর কৌশলগত পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ব্যবহার করছেন।

শেষ কথা 

জন বোল্টনের মন্তব্য থেকে স্পষ্ট যে, ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক নীতির কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের কৌশলগত প্রচেষ্টা ব্যাহত হচ্ছে। ভারত রাশিয়া ও চীন থেকে দূরে না থেকে তাদের প্রতি আরও ঝুঁকছে, যা মার্কিন স্বার্থের জন্য আশংকাজনক। ভবিষ্যতে দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতিতে এই পরিবর্তন কী প্রভাব ফেলবে, তা সময়ের সাথে পরিষ্কার হবে। তবে এই পরিস্থিতিতে মার্কিন প্রশাসনকে পুনর্বিবেচনা করে ভারতে ও চীনে তার নীতিতে ভারসাম্য আনার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

এম আর এম – ০৭৬৮, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button