বিশ্ব

‘শান্তিপূর্ণ পরমাণু শক্তি অর্জনে ইরানের পূর্ণ অধিকার রয়েছে’: পাকিস্তান

ইরানের শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে দৃঢ় অবস্থান জানিয়েছে পাকিস্তান। ইসলামাবাদ স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে, শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরমাণু শক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে ইরানের পূর্ণ অধিকার রয়েছে এবং এই বিষয়ে পাকিস্তান তেহরানের পাশে থাকবে।

রোববার ইসলামাবাদে সফররত ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ানের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এই ঘোষণা দেন।

ইরানের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিলেন শাহবাজ শরিফ

দুই দিনের সরকারি সফরে পাকিস্তানে অবস্থান করছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান। তার সঙ্গে বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে শাহবাজ শরিফ বলেন, “শান্তিপূর্ণ পরমাণু শক্তি অর্জনে ইরানের পূর্ণ অধিকার রয়েছে এবং পাকিস্তান সবসময় তেহরানের পাশে থাকবে।”
তিনি আরও বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে চলমান অস্থিরতার সময় এই সহযোগিতা দুই দেশের সম্পর্ককে আরও গভীর করবে।

বাণিজ্য বাড়াতে চুক্তি ও সমঝোতা

এই সফরকালে দুই দেশের মধ্যে একাধিক সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়েছে। বৈঠকের পর জানানো হয়, বার্ষিক দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে দুই দেশ।
এছাড়া সীমান্তবর্তী অঞ্চলে নিরাপত্তা জোরদার, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সহযোগিতা এবং সাংস্কৃতিক বিনিময় বাড়ানো নিয়েও আলোচনা হয়েছে।

ফিলিস্তিন ও কাশ্মীর প্রসঙ্গও উঠে আসে

যৌথ সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইসরায়েলের আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা জানান। তিনি গাজায় বেসামরিক মানুষের ওপর হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, “গাজার শান্তি প্রতিষ্ঠায় বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।”
একইসঙ্গে তিনি জম্মু-কাশ্মীরের পরিস্থিতির সঙ্গে ফিলিস্তিনের পরিস্থিতির তুলনা করেন।

ইরানি প্রেসিডেন্টের আবেগঘন মন্তব্য

ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান পাকিস্তানকে তার “দ্বিতীয় বাড়ি” হিসেবে আখ্যা দিয়ে ইসলামাবাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “ইরান ও পাকিস্তানের সম্পর্ক শুধুমাত্র রাজনৈতিক নয়; এটি ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বন্ধনের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। আমরা এই সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করতে চাই।”
পেজেশকিয়ান বলেন, “আমরা সীমান্ত নিরাপত্তা, বাণিজ্য, জ্বালানি এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে পাকিস্তানের সঙ্গে একযোগে কাজ করতে চাই।”

আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যেও ইরানের দৃঢ়তা

ইরানের শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বহুবার সমালোচিত হয়েছে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক ইরান-ইসরাইল সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের একাধিক পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালিয়েছে।
এর মধ্যেই পাকিস্তানের এই প্রকাশ্য সমর্থন তেহরানের জন্য এক ধরনের কূটনৈতিক আশ্বাস হিসেবে দেখা হচ্ছে।

২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত পারমাণবিক চুক্তির পর যুক্তরাষ্ট্র ২০১৮ সালে সেখান থেকে সরে দাঁড়ায়। এরপর থেকে নতুন করে আলোচনা শুরু হলেও এখনো কোনো চূড়ান্ত সমাধান হয়নি। আগস্ট মাসের শেষ নাগাদ নতুন এক সময়সীমা সামনে আসছে, যেখানে জাতিসংঘের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবের মেয়াদ শেষ হবে। এই পরিস্থিতিতে ইরান শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ইরানের এই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি নিয়ে পাকিস্তানের স্পষ্ট সমর্থন মধ্যপ্রাচ্যের কূটনৈতিক সমীকরণে নতুন মাত্রা যোগ করবে।
তারা বলছেন, “ইসলামাবাদ যদি ইরানের পক্ষে কূটনৈতিকভাবে সক্রিয় থাকে, তাহলে এটি দক্ষিণ এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যে নতুন জোট গঠনের ইঙ্গিতও দিতে পারে।”

ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নিয়ে আশাবাদ

যৌথ বৈঠকের পর দুই পক্ষই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তাদের মতে, রাজনৈতিক সহযোগিতা ছাড়াও বাণিজ্য, জ্বালানি ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও দুই দেশের সম্পর্ক আরও এগিয়ে যাবে।
এই সফরের মধ্য দিয়ে পাকিস্তান ও ইরানের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক নতুন মাত্রা পেলো বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

শেষ কথা 

ইরানের শান্তিপূর্ণ পরমাণু শক্তির অধিকার নিয়ে পাকিস্তানের এই প্রকাশ্য সমর্থন শুধু আঞ্চলিক নয়, আন্তর্জাতিক রাজনীতিতেও বড় ভূমিকা রাখবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এখন দেখার বিষয়, আগামী মাসগুলোতে এই সমর্থন আন্তর্জাতিক আলোচনার টেবিলে কী ধরনের প্রভাব ফেলে।

এম আর এম – ০৬৭৬, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Advertisement
Back to top button