বিশ্ব

গাজায় নিহত আরও ৮০ ফিলিস্তিনি, অনাহারে ১৪ জনের মৃত্যু

Advertisement

গাজা উপত্যকায় হঠাৎ ঘটে যাওয়া প্রাণহানি এবং খাদ্য সংকটের মর্মান্তিক চিত্র

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা, যা দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং সামরিক সংঘর্ষের কক্ষপাত্র হয়ে আসছে, সাম্প্রতিক ইসরায়েলি হামলায় একদিনে নিহত হয়েছে অন্তত ৮০ জন ফিলিস্তিনি। পাশাপাশি, খাদ্য সংকট এবং অনাহারের কারণে মারা গেছে ১৪ জন। এই ভয়াবহ পরিস্থিতি মানবাধিকার এবং আন্তর্জাতিক শান্তির জন্য গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

আন্তর্জাতিক খবরে আল জাজিরার প্রতিবেদনে জানা যায়, গত কয়েক মাস ধরে অবরুদ্ধ গাজায় ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছানো প্রায় বন্ধ রয়েছে। মার্চ থেকে শুরু হওয়া এই অবরোধের কারণে চলমান খাদ্য সংকট গুরুতর রূপ ধারণ করেছে। একদিকে সরাসরি হামলায় নিহতের সংখ্যা বাড়ছে, অন্যদিকে অপুষ্টি ও অনাহারের কারণে মারা যাওয়ার হারও উদ্বেগজনক মাত্রায়।

গাজায় ইসরায়েলি হামলার ধ্বংসলীলার পরিসংখ্যান

ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের প্রভাবে গাজা উপত্যকায় একদিনে প্রাণ হারিয়েছে ৮০ জন ফিলিস্তিনি। এই সংখ্যা প্রায় নিশ্চিত করে দেয় যে, সামরিক আক্রমণের মাত্রা ব্যাপক এবং ভয়াবহ। হামলায় নিহতদের মধ্যে রয়েছে নারী, শিশু এবং বয়স্ক লোকজন। নিহতের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে, এবং স্থানীয় স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা এই মর্মান্তিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে।

অপুষ্টি ও অনাহারের শিকার ফিলিস্তিনিরা: এক মানবিক সংকট

ইসরায়েলের অবরোধের কারণে গাজায় ত্রাণ সামগ্রীর প্রবেশ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। মার্চ থেকে মে পর্যন্ত খুব সীমিত পরিমাণে ত্রাণ ঢুকলেও তা নাজুক মানুষের প্রয়োজন মেটাতে অক্ষম। জাতিসংঘ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বারবার সতর্ক করেও পরিস্থিতি পরিবর্তন হয়নি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালে গাজায় অপুষ্টি জনিত কারণে মৃত্যুর সংখ্যা উদ্বেগজনক। চলতি মাসেই ৬৩ জন অপুষ্টিজনিত কারণে মারা গেছেন, যার মধ্যে ২৪ জন পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু। অপুষ্টি ও অনাহারের কারণে এ মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ভবিষ্যতে এটি আরও ভয়াবহ হতে পারে।

জাতিসংঘের উদ্বেগ এবং আন্তর্জাতিক মানবিক সাহায্যের তীব্র আহ্বান

জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের সহায়তাকারী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ’র প্রধান ফিলিপ ল্যাজারিনি বলেন, “গাজায় মানুষগুলো যেন ‘না বেঁচে আছে, না মরেছে — যেন হাঁটতে থাকা লাশ’।” এই কথাটি এক মানবিক বিপর্যয়ের প্রতীক। তারা খাদ্য, পানি, ও চিকিৎসার জন্য কঠোর সংগ্রাম করছে।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ও ত্রাণ সংগঠনগুলো অবরোধ তুলে নেওয়ার জন্য তীব্র আবেদন জানাচ্ছে যাতে করে জরুরি সাহায্য দ্রুত পৌঁছানো যায়। খাদ্য সংকট মেটানো না গেলে, হাজার হাজার শিশু ও দুর্বল মানুষের জীবন ঝুঁকির মুখে থাকবে।

গাজায় অবরোধ এবং ত্রাণ প্রবাহ বন্ধের প্রেক্ষাপট

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের অবরোধ দীর্ঘমেয়াদি। ২০২৫ সালের মার্চ থেকে ত্রাণের প্রবাহ বন্ধ করার পর থেকে খাদ্য, ওষুধ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়েছে। এই অবরোধের ফলে সাধারণ মানুষ প্রাথমিক জীবনযাত্রার উপকরণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

ত্রাণ সংস্থাগুলোর হিসেব অনুযায়ী, গাজার প্রায় ২.৪ মিলিয়ন মানুষের মধ্যে বেশির ভাগই এখন খাদ্য সংকটে ভুগছে। ত্রাণ সামগ্রী সীমিত হওয়ায় হাসপাতালে অপুষ্টিজনিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে এবং মৃত্যুর হার বেড়ে যাচ্ছে।

শিশুদের মৃত্যু সংখ্যা বাড়ছে — এক করুণ বাস্তবতা

বিশেষ করে শিশুদের উপর এই সংকটের প্রভাব খুবই ভয়াবহ। শিশুদের পুষ্টিহীনতায় মৃত্যুর হার চরম মাত্রায় পৌঁছেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুসারে, গাজায় পাঁচ বছরের কম বয়সী ২৪ জন শিশু চলতি মাসেই অপুষ্টিজনিত কারণে মারা গেছেন। অপুষ্টি শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশে ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে, যা সামগ্রিক ভবিষ্যতের জন্য ভয়াবহ সংকেত।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের করণীয়: সহায়তা এবং শান্তির আহ্বান

গাজা উপত্যকার মানবিক সংকট সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অবরোধ শিথিল করে ত্রাণ ও চিকিৎসা সামগ্রী দ্রুত গাজায় পৌঁছানো প্রয়োজন। পাশাপাশি রাজনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগ নিতে হবে।

বিশ্বের প্রধান রাষ্ট্র ও সংস্থা গাজায় অবরোধ তুলে নেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করছে, যাতে করে সাধারণ মানুষ বেঁচে থাকতে পারে এবং তাদের মৌলিক অধিকার রক্ষা পায়। মানবাধিকার লঙ্ঘন রোধের পাশাপাশি, গাজার মানুষদের জীবনমান উন্নয়নে ত্বরিত ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি।

গাজার মানুষদের বেঁচে থাকার সংগ্রাম: এক মানবিক ট্রাজেডি

গাজার সাধারণ মানুষের জীবনে এই সংকট এক ভয়াবহ মানবিক ট্রাজেডি। তারা যুদ্ধের স্রোতধারা এবং খাদ্য সংকটের চাপে ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে। অবরুদ্ধ গাজায় জীবন সংগ্রাম, অপুষ্টি, অসুস্থতা এবং মৃত্যু একঘেয়ে বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আমরা সকলেই এই মানবিক বিপর্যয়ের দিকে দৃষ্টি দেওয়া এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গাজার মানুষের জন্য সাহায্যের হাত বাড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছি।

MAH – 12001, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button