গাজায় এক দিনে ৯০টি অ্যাটাক চালিয়েছে ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্সেস

মাত্র ২৪ ঘণ্টায় গাজার বিভিন্ন এলাকায় ৯০টি বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। হামলার লক্ষ্য ছিল বলে দাবি করা হলেও ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত চিত্র ভয়াবহ। নিহত ও আহতের সংখ্যা বাড়ছে, আতঙ্কে মানুষ।
মাত্র এক দিনেই ৯০টি বিমান হামলা
ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্সেস (IDF) শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় একটানা ২৪ ঘণ্টায় মোট ৯০টি বিমান হামলা চালিয়েছে। গাজা শহরের বিভিন্ন স্থানে চালানো এই বিমান হামলাগুলোতে বহু ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে এবং নিহত হয়েছেন বহু বেসামরিক ফিলিস্তিনি।
ইসরায়েলি বাহিনীর দাবি, তারা হামাসের সামরিক স্থাপনা ও ভূগর্ভস্থ অস্ত্রাগার লক্ষ্য করে আক্রমণ চালিয়েছে। তবে কোথায় এবং কী ধরনের হামলা হয়েছে, সেই সংক্রান্ত কোনো নির্দিষ্ট তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, অধিকাংশ হামলাই হয়েছে আবাসিক এলাকায়, যেখানে সাধারণ মানুষ বাস করতেন।
যুদ্ধের তীব্রতা বাড়ছে প্রতিদিন
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত এখন রূপ নিয়েছে এক দীর্ঘমেয়াদি ধ্বংসযুদ্ধে। গত কয়েক মাসে গাজার জনবহুল এলাকায় বারবার আক্রমণ চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে গাজায় নিহতের সংখ্যা ইতোমধ্যে ৫৮ হাজার ছাড়িয়েছে।
বিগত কয়েকদিনে আল-মাওয়াসি এলাকায় বাস্তুচ্যুতদের তাবুতে হামলা চালানো হয়েছে, যেখানে ফিলিস্তিনিদের আগে থেকেই সরে যেতে বলা হয়েছিল। এমনকি গাজার একমাত্র ক্যাথলিক গির্জাও হামলার শিকার হয়েছে। এর মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে উঠছে, কোনো এলাকাই এখন নিরাপদ নয়।
মৃত্যু, আতঙ্ক ও মানবিক বিপর্যয়
গাজায় একদিনে ৯০টি বিমান হামলার প্রভাবে সাধারণ মানুষের জীবন পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। প্রতিটি হামলা মানে নতুন করে মৃত্যু, নতুন করে লাশ, আর কান্নার সুর। আবাসিক এলাকায় হামলা হওয়ায় বহু শিশু ও নারী প্রাণ হারিয়েছেন।
খান ইউনিস ও রাফাহ এলাকার দুটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের কাছাকাছি হামলায় নিহত হয়েছেন অন্তত ২৬ জন। আহত হয়েছেন শতাধিক। গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, ইসরায়েলের এই আক্রমণগুলো শুধু সামরিক লক্ষ্য নয়, বরং সাধারণ জনগণকেই লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করছে। এর ফলে গাজার বাসিন্দাদের ওপর এক ভয়াবহ মনস্তাত্ত্বিক চাপ তৈরি হয়েছে।
পরিসংখ্যান: মৃত্যু মিছিলে প্রতিদিন যোগ হচ্ছে নতুন নাম
বর্তমানে গাজা উপত্যকার আয়তন মাত্র ৩৬৫ বর্গকিলোমিটার। এত ছোট একটি এলাকায় একদিনে ৯০টি বিমান হামলা চালানো নিঃসন্দেহে ভয়াবহ ঘটনা। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ১ লক্ষ ৪০ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন, যাদের অনেকেই পঙ্গু বা স্থায়ীভাবে অক্ষম হয়ে পড়েছেন।
ইউএন-এর তথ্যমতে, গাজার ৭০ শতাংশ ভবন সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে। প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন না খেয়ে দিন পার করছেন। ওষুধ, পানি ও বিদ্যুৎ সংকট চরমে পৌঁছেছে।
বিশ্লেষণ: আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও সমাধানের অচলাবস্থা
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর আগ্রাসন কেবল যুদ্ধ নয়, এটি একটি পরিকল্পিত মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করার কৌশল। এত ঘনঘন বিমান হামলা চালিয়ে ফিলিস্তিনিদের নিরাপত্তাহীনতা এবং আশ্রয়হীনতার মধ্যে ফেলাই এর অন্যতম উদ্দেশ্য।
তারা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিষ্ক্রিয়তা বিষয়টিকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে। অনেক দেশ উদ্বেগ প্রকাশ করলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। জাতিসংঘ ও অন্যান্য সংস্থাগুলোর সাহায্য প্রবেশেও বাধা তৈরি হচ্ছে।
একজন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিশ্লেষক বলেন, “এই যুদ্ধ শুধু রকেট ও বোমার নয়, এটি মনোবল ভেঙে দেওয়ার যুদ্ধ, যেখানে ফিলিস্তিনি জনগণের অস্তিত্বই এখন প্রশ্নবিদ্ধ।”
“এই যুদ্ধ শুধু সামরিক নয়, এটি একটি পরিকল্পিত মানবিক বিপর্যয়”—একজন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক
প্রতিদিনই নতুন আতঙ্ক, নতুন মৃত্যু
গাজায় প্রতিদিন নতুন করে রক্তপাত, প্রতিদিনই নতুন শোক। একদিনে ৯০টি বিমান হামলার ঘটনা শুধুমাত্র সামরিক কর্মকাণ্ড নয়, বরং এটি ইসরায়েলি নীতিরই ধারাবাহিকতা—যেখানে ফিলিস্তিনিদের নিরাপত্তা, জীবন ও স্বাধীনতা কোনো মূল্য বহন করে না।
বিশ্লেষকদের মতে, আন্তর্জাতিক চাপ ছাড়া এই আগ্রাসন থামানো সম্ভব নয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো—বিশ্ব কি আর কত মৃত্যু দেখলে জেগে উঠবে?
এম আর এম – ০৪০৭, Signalbd.com